অভিযোগ দায়েরের দু’সপ্তাহ পরেও প্রায় এক লক্ষ টাকা এটিএম কার্ড-প্রতারণার কিনারা হল না বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায়। ঘটনাচক্রে, জালিয়াতির শিকার করুণাময়ী হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দা ৭৯ বছরের বৃদ্ধ চিত্তরঞ্জন বেরা এবং তাঁর স্ত্রী বেলা বেরা, দু’জনেই কমিশনারেটের ‘সাঁঝবাতি’ প্রকল্পের সদস্য। সল্টলেকে একাকী, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে এই প্রকল্প চালু হয়েছিল।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ জুলাই। ওই দিন বিকেলে সল্টলেকের সিকে মার্কেট সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়েছিলেন চিত্তরঞ্জনবাবু। সে সময়ে তাঁর মোবাইলে ফোন করে নিজেকে ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি জানান, চিত্তরঞ্জনবাবুর একটি এটিএম কার্ড অচল হয়ে রয়েছে। তাঁর যে কার্ডটি চালু রয়েছে, সেটির শেষ চার অঙ্ক এবং সিভিভি নম্বর তিনি দিলে পুরনো কার্ডটি ফের সক্রিয় হবে। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘৭৯ বছর বয়সে বুঝতে পারিনি, কেউ ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে ঠকানোর মতলবে ফোন করেছে। তখন ব্যস্ততার মধ্যেও ছিলাম। তা ছাড়া আমার একটি কার্ড যে সত্যিই অচল, তা ওই ব্যক্তি জানল কী করে? এই ফোন নম্বর আমার প্রতিটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আছে। স্বাভাবিক ভাবেই তেমন সন্দেহ হয়নি। সব কিছু বলে দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে মোবাইলে এসএমএস পাই, ই-ওয়ালেট মারফত আমি নাকি ৪৯,৯৯৯ টাকার কেনাকাটা করেছি!’’
চিত্তরঞ্জনবাবু জানান, পরদিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আবার একই নম্বর থেকে ফোন পান। ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে কেনাকাটার কথা বললে জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। মোবাইলে যে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) এসেছে, সেটি বললে টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন তিনি। টাকা ফেরতের আশায় বৃদ্ধ ওটিপি বলে দিলে ফের ই-ওয়ালেট মারফত ৪৯,৯৯৯ টাকা তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যায়।
এর পরেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের পরামর্শে চিত্তরঞ্জনবাবু এটিএম কার্ড ব্লক করে দেন। একই সঙ্গে ওই দিনই বিধাননগর পূর্ব থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। চিত্তরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, ‘‘পুলিশে সব জানানোর পরেও তো ওই নম্বর থেকে ক্রমাগত ফোন আসছে। নানা প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। আমাদের কোনও সন্তান নেই। স্ত্রী ২০ বছর ধরে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। আমি নিজেও অত্যন্ত অসুস্থ। এই বয়সে পেনশনের টাকাই ভরসা। কোনও ভাবেই কি টাকাগুলো ফেরত পাব না?’’
বিধাননগর সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এ ভাবে প্রতারিত করার অভিযোগ খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। এর আগে সেই নজির রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না।’’