জাল প্রকাশক ধরতে তৎপরতা বইমেলায়

হাজারে হাজারে না হলেও বেশ কয়েক জন জাল প্রকাশকের ছড়াছড়ি! তাদের কারও নাম হয়তো ত্র্যম্বক, সঞ্জয় কিংবা কাকলী অথবা নিরাজনা!

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৯
Share:

বইমেলার জন্য আলোকসজ্জা। রবিবার, সল্টলেকে। নিজস্ব চিত্র

হাজারে হাজারে হাজরার মতোই বিষয়টা!

Advertisement

হাজারে হাজারে না হলেও বেশ কয়েক জন জাল প্রকাশকের ছড়াছড়ি! তাদের কারও নাম হয়তো ত্র্যম্বক, সঞ্জয় কিংবা কাকলী অথবা নিরাজনা! ঠিকানাও একটা আছে বটে, তবে সেখানে চিঠি পাঠালে, ফেরত আসছে ঠিকানার খোঁজ না পেয়ে! পরশুরাম, আশাপূর্ণা দেবী থেকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার— রেহাই পাচ্ছেন না কেউই। ভূতুড়ে প্রকাশকের হাতে ভুল বানান, নিম্নমানের ছাপায় নামী লেখকদের বইসমূহ বাজারে ঠিকই ছড়িয়ে পড়ছে।

এই সঙ্কটের ছায়া পড়ছে আসন্ন আন্তর্জাতিক ‘কলকাতা বইমেলা’র মাঠেও। জাল প্রকাশকের বই পাকড়াও করতে বইমেলা-প্রাঙ্গণেও সজাগ থাকবে পুলিশ। উদ্যোক্তা ‘পাবলিশার্স বুক অ্যান্ড সেলার্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘নামী লেখকদের বই কারচুপির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দু’জন প্রকাশককে এ বার স্টল দেওয়া হয়নি। এই সব জালিয়াত প্রকাশকের বই যারা রাখে, তাদের কয়েক জনকেও আমরা বাদ দিয়েছি।’’ পুলিশি তদন্তের স্বার্থে গিল্ড কর্তারা অবশ্য কোনও প্রকাশকের নাম করতে চাননি।

Advertisement

মিত্র ঘোষের কর্ণধার সবিতেন্দ্রনাথ রায়, আনন্দ পাবলিশার্সের তরফে সুবীর মিত্র, দে’জ প্রকাশনীর সুধাংশুশেখর দে, করুণা প্রকাশনীর বামাচরণ মুখোপাধ্যায়, এমসি সরকার-এর শমিত সরকার প্রমুখ প্রকাশকেরা ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইবি) দেবাশিস সরকারকে সব জানিয়েছেন। কারা এর পিছনে রয়েছে, তার আঁচ পেলেও এখনই ভাঙছেন না পুলিশকর্তারা। ডিসি শুধু বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’ কপিরাইট লঙ্ঘন আইনে ৫-৭ বছরের জেলও হতে পারে দোষীর। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এক জন বই বিক্রেতাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। তিনি এখন জামিনে। ‘‘এর পিছনে বড় মাথা রয়েছে,’’ বললেন লালবাজারের এক কর্তা।

পুলিশের দাবি, জালিয়াতির কাজটা চলছে সুকৌশলে। মানে হঠাৎ কোনও বইয়ের অর্ডার এলেই চটজলদি কিছু ছাপিয়ে মোটা কমিশনে দাঁও মারছেন ‘জালিয়াত’ প্রকাশক। কিংবা জনপ্রিয় বইয়ের কভারটুকু পাল্টে ভূতুড়ে প্রকাশকের নাম করে তা ফের ছাপানো হচ্ছে। অথবা বিনা অনুমতিতে নামী লেখকের বা একাধিক লেখকের উপন্যাস, গল্পের সংকলন প্রকাশ করা হচ্ছে।

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আগে বাংলাদেশে এ পারের অনেকের বইয়ের কপি ছাপানো হতো দেখেছি। সে দিন দেখি আমার কালো বেড়াল, সাদা বেড়াল-উপন্যাসটি বেআইনি ভাবে এ রাজ্যের উটকো প্রকাশকের নামে ছাপানো হয়েছে।’’ সমরেশ মজুমদারও বলছেন, ‘‘সস্তায় বইয়ের লোভ দেখিয়ে আমাদের লেখা কেটেছেঁটে বিকৃত করে পাঠককে বোকা বানাচ্ছে ওরা। কলকাতার দু’-তিন জন প্রকাশক এর মধ্যে আছেন বলে শুনছি।’’ বাস্তবিক, বাংলাদেশে এ পার বাংলার লেখকদের বই কারচুপি নিয়ে কিছু বলতে গেলেই এখন
উল্টে কথা শুনতে হচ্ছে কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশকেদের। যেমন জসিমুদ্দিনের কবিতার বই এ পারের বৈধ প্রকাশককে এড়িয়ে কারা বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। হুমায়ন আহমেদের ‘হিমু সমগ্র’-এর জাল সংস্করণেরও হদিস মিলেছে।

কলেজ স্ট্রিটের প্রথম সারির এক প্রকাশকের কথায়, ‘‘জাল বই ছাপায় পরিশ্রম নেই। লেখকের অনুমতির লাগে না। বানান, প্রুফ দেখা— কোনও কিছু নিয়েই যত্ন নেই। কোনও রকমে ছেপে সস্তায় বইটা বেচতে পারলেই কেল্লা ফতে। এ ভাবে প্রকাশনার মান বা ব্যবসা— সবই লাটে উঠবে।’’ পরশুরামের গল্প বা রাজশেখর বসুর রামায়ণ-মহাভারত, বনফুলের ছোটগল্প সমগ্র, আশাপূর্ণা দেবীর জনপ্রিয় ট্রিলজি, মহাশ্বেতা দেবীর বেশ কিছু জনপ্রিয় বই থেকে শুরু করে সমরেশ মজুমদারের কালবেলা— সব কিছুর নকল অবতারই পুলিশের চোখে পড়েছে।

কী উপায়ে এই কারবার বন্ধ করা সম্ভব? লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রকাশকেদেরও নিয়মিত নজরদারি চালাতে হবে। আমাদের সঙ্গে ওঁদের সমন্বয়টা জরুরি।’’ পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে এ বার বইমেলার মাঠেই জালিয়াতি ধরতে সজাগ থাকবে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন