থানার কুটকুটে কম্বলেই রাত কাটল বিক্রমের

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে বিক্রমকে গ্রেফতার করার পরেই খাকি শার্ট-প্যান্ট পরতে দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার সেই পোশাক ছাড়িয়ে ডেনিম-টি শার্ট পরিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৪:২১
Share:

বিক্রম চট্টোপাধ্যায়

দু’রাতেই মুখ থেকে জেল্লা উধাও! চোখেমুখে ভেঙে পড়ার ছাপ।

Advertisement

পরনে খাকি শার্ট-হাফ প্যান্ট। বাড়ির বিছানার বদলে কুটকুটে কম্বল। কখনও শুয়ে উসখুস করছেন, বেশির ভাগ সময় হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকছেন। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে আপাতত টালিগঞ্জ থানায় বন্দি টেলিভিশনের নায়ক বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে বিক্রমকে গ্রেফতার করার পরেই খাকি শার্ট-প্যান্ট পরতে দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার সেই পোশাক ছাড়িয়ে ডেনিম-টি শার্ট পরিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। ফেরার পরেই ফের খাকি পোশাক পরে নেন বিক্রম। রাতে থানার ক্যান্টিন থেকেই রুটি-তরকারি দেওয়া হয়। সামান্য মুখে তুলে বাকিটা ফিরিয়ে দেন বিক্রম।

Advertisement

আরও পড়ুন: সোনিকার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল কি

লালবাজার সূত্রের দাবি, রাতে লকআপের মেঝেতে কম্বল পেতে শুয়েছিলেন নায়ক। ওই লকআপেই ছিলেন প্রতারণায় অভিযুক্ত এক আসামি। নায়ককে সামনে দেখে একটু ভাব জমানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিক্রম কোনও কথা বলেননি। সারা রাত কার্যত জেগেই কাটিয়েছেন তিনি। মাঝেমধ্যে উঠে কপালে হাত দিয়ে বসে ছিলেন। শনিবার সকালে আর পাঁচটা বন্দির মতোই পাঁউরুটি, চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারতে হয়েছে। দুপুরে ভাত, ট্যালট্যালে ডাল আর ছোট এক টুকরো পোনা মাছে লাঞ্চ। থানার একটি সূত্র বলছে, খাবার কার্যত মুখেই তুলতে চাইছিলেন না বিক্রম। কোনও মতে পিত্তরক্ষা করে বাকি খাবার ফেলে দিয়েছেন।

এ দিন সকালে বিক্রমের এক আইনজীবী তাঁর সঙ্গে কথা বলতে থানায় যান। পরে আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিক্রম। আমাদের বলেছেন, বাবা-মা যেন ওঁকে নিয়ে চিন্তা না করেন। মনের জোর হারাননি বলেই দাবি করেছেন তিনি।’’ এ দিন দুপুরে প্রায় তিন ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে বিক্রমকে। দুর্ঘটনার রাতে তিনি কী কী করেছেন, সেই প্রশ্নই নাগা়ড়ে করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, এখনও দোষ কবুল করেননি বিক্রম।

হাজতবন্দি ‘হিরো’-কে নিয়ে সাবধানী লালবাজারও। দোতলায় যেখানে বিক্রমকে রাখা হয়েছে, সেখানে আমজনতার ঢোকা-বেরনোয় কড়াকড়ি হয়েছে। সেন্ট্রি মোতায়েন সব সময়ই থাকে, শুক্রবার সকাল থেকে থানার কোল্যাপসিবল গেটে তালাও ঝুলছে। যা বহাল ছিল শনিবারও। পুলিশ সূত্রের খবর, লকআপে থাকা আর পাঁচ জন অভিযুক্ত যে সুবিধা পান, বিক্রমকে তার থেকে এক চুলও যাতে বেশি সুবিধা না দেওয়া হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে লালবাজারের তরফে। প্রয়োজনের বাইরে বিক্রমের সঙ্গে কোনও কথা বলতেও থানার পুলিশকর্মীদের নিষেধ করা হয়েছে। হাজতে থাকা নায়কের ছবি যাতে কেউ না তুলতে পারেন সেই কারণে সেন্ট্রি ছাড়া কোনও পুলিশকর্মীকেও লকআপের সামনে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে।

বিক্রমের সঙ্গে তদন্তকারীদের একাংশের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছিল। তাই লালবাজারের কন্ট্রোল রুম থেকে টালিগঞ্জ থানার সিসিটিভি ক্যামেরার ছবিতে নজরদারি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন