কুয়াশা-রোদে বেসামাল শরীর

বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ এমনই ছিল পরিস্থিতি। পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ একাধিক জেলাতেও ঘন কুয়াশার আস্তরণ চোখে পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৭
Share:

আড়াল: দুপুরের চড়া রোদ থেকে বাঁচতে বাসের মধ্যেও ভরসা ছাতাই। বৃহস্পতিবার দুপুরে, দক্ষিণ কলকাতায়। ছবি: সুমন বল্লভ

ফাল্গুনের শেষেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে যেন শীতের সকাল! চার দিকে ঘন কুয়াশা। তাপমাত্রাও বেশ কম। দৃশ্যমানতা কম থাকায় কলকাতায় নামতে পারেনি তিনটি বিমান।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ এমনই ছিল পরিস্থিতি। পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ একাধিক জেলাতেও ঘন কুয়াশার আস্তরণ চোখে পড়েছে। তবে আধ ঘণ্টা পেরোতে না-পেরোতেই কুয়াশা কেটে ফিরে আসে রোদ এবং গরম। আবহাওয়ার এই ভোলবদলে মাথাচাড়া দিচ্ছে রোগও। চিকিৎসকদের বক্তব্য, এ সময়ে পরজীবীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার ফলে নানা অসুখের প্রকোপ বাড়তে পারে।

কেন এমন কুয়াশা? কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বুধবার সন্ধ্যার পরে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকেছিল। এ দিন ভোরে সেটাই ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা তৈরি করে। ‘‘শীতকালের মতো তাপমাত্রা না নামলেও অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পের ফলে গাঢ় কুয়াশা হয়েছে। তবে এ সময়ে কুয়াশার স্থায়িত্ব বেশি হয় না।’’ আবহবিদেরা জানান, বিমানবন্দর এলাকায় জলাজমি ও গাছ বেশি থাকায় কুয়াশা আরও গাঢ় হয়েছিল।

Advertisement

পরিবেশবিদদের একাংশ এই ঘন কুয়াশার জন্য শহরের দূষণকেও দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, কুয়াশার সঙ্গে ধুলো মিশে সেটাকে গাঢ় করে তুলেছিল। সঞ্জীববাবু জানান, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২২-২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকায় শীত ভাব মালুম হচ্ছে। বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূমে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কম। আলিপুর হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আপাতত ক’দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২২-২৪ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকবে।

দিনের তাপমাত্রাও এ দিন তেমন বাড়েনি। বুধবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। এ দিন আকাশ অংশত মেঘলা থাকায় দিনের তাপমাত্রাও বুধবারের তুলনায় কিছু কম ছিল। সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘এখনও গ্রীষ্ম থিতু হয়নি। তাই এ সময়ে আবহাওয়া অস্থির থাকে বলেই এমন উত্থান-পতন চলতে থাকে।’’

দাওয়াই

• অতিরিক্ত ঠান্ডা-গরম এড়িয়ে চলুন

• ঠান্ডা পানীয়, রাস্তার রঙিন শরবত খাবেন না

• খাবেন না কাটা ফল, রাস্তার জল

• চট করে এসি ঘরে ঢোকা-বেরোনো নয়

• ভোরে হাঁটতে বেরোলে একটু মোটা জামা পরুন

• গাঢ় কুয়াশা বা ধোঁয়াশা এড়িয়ে চলুন

• রোদে বেরোলে সঙ্গে থাক ছাতা, জলের বোতল

• মশলাদার খাবার, ফাস্ট ফুড নয়

• প্রচুর জল, প্রয়োজনে নুন-চিনির শরবত খান

চিকিৎসক এবং পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ভাইরাস খুব গরম বা শীতে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু এই অস্থির আবহাওয়া তাদের পক্ষে অনুকূল। ফলে পর্যাপ্ত সতর্কতা না নিলে সর্দি, জ্বর, কাশি কাবু করতে পারে। গাঢ় কুয়াশা থেকে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। বিশেষত শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা দরকার। ভাইরাসের আক্রমণে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পেট খারাপের মতো রোগও সহজে আক্রমণ করতে পারে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, এ সময়ে দুপুরে তাপমাত্রাও আচমকা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে রোদে বেরিয়ে শরীরে জলের অভাব দেখা দিলেও আচমকা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সে দিক থেকেও সতর্কতা জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন