বিজ্ঞাপনের রক্তাক্ত ছবি মেট্রোয়, বিতর্ক

যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, মেট্রোয় প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন, তাই বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে মেট্রোর কামরায় বিজ্ঞাপন দেওয়া লোভনীয় ব্যাপার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০১:১৯
Share:

মেট্রোর কামরায় সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

মেট্রোর কামরায় নানাবিধ বিজ্ঞাপনী পোস্টার দেখা যায়। একটি টিভি সিরিয়াল সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন সম্প্রতি চোখে পড়ছে অনেক মেট্রোর কামরায়। নানা অপরাধের নাট্য রূপান্তর সম্পর্কিত ওই সিরিয়ালের বিজ্ঞাপনে কাটা হাত, রক্তাক্ত দেহের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এই বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রীদের একাংশ। তাঁদের অনেকেই বলছেন, যাতায়াতের পথে দীর্ঘ ক্ষণ ওই ধরনের ছবি চোখে পড়া অস্বস্তিকর। এমনকি, ওই বিজ্ঞাপন শিশুমনের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে দাবি তাঁদের।

Advertisement

যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, মেট্রোয় প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন, তাই বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে মেট্রোর কামরায় বিজ্ঞাপন দেওয়া লোভনীয় ব্যাপার। গৃহঋণ, বিমা, কম্পিউটার, মোবাইল-সহ নানা পণ্যের বিজ্ঞাপন মেট্রোয় সব সময়েই দেখা যায়। এমনকি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও মেট্রোয় বিজ্ঞাপন দেয়। মেট্রোর ক্ষেত্রে যেহেতু একটি আবদ্ধ জায়গায় মানুষ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন, বিজ্ঞাপনগুলি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। ফলে কোনও কোনও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে জনমানসে প্রভাব পড়তে পারে।

মনোবিদ বহ্নিশিখা ভট্টাচার্যের মতে, শিশু বা মানসিক ভাবে দুর্বল মানুষদের উপরে রক্তাক্ত ছবি-সহ বিজ্ঞাপনের কুপ্রভাব পড়তে পারে। যাঁদের বদ্ধ জায়গায় দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয় (ক্লস্ট্রোফোবিয়া), তাঁরাও এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হতে পারেন। তবে কিছু ধরনের সতর্কতামূলক প্রচার, যেমন পথ নিরাপত্তার গুরুত্ব বোঝাতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হেলমেটবিহীন আরোহীর ছবি বা সিগারেটের প্যাকেটে ক্যানসার আক্রান্ত ফুসফুসের ছবি বীভৎস লাগলেও সেগুলির এক ধরনের উপযোগিতা রয়েছে। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের মতে, ‘‘আসলে কোন কথাটা কী ভাবে বলতে হবে, সেটা বোঝা উচিত। সব সময়ে একটা অবাস্তব বিশুদ্ধ পৃথিবীর ছবি মেলে ধরার চেষ্টা করাটাও কাজের কথা নয়!’’

Advertisement

বিজ্ঞাপনের বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহল আবার এটাও মানেন, জনমানসে হিংসা, খুনোখুনির মতো উত্তেজক ঘটনারও একটা আকর্ষণ রয়েছে। সেটা মাথায় রেখেও অনেক বিজ্ঞাপনদাতা হিংসাত্মক ছবি ব্যবহার করে নজর কাড়ার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞাপন নির্মাতা জয় আইচভৌমিক বলছেন, ‘‘এটা হল, কিছু একটা দেখিয়ে মানুষকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা। যাতে লোকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে।’’ তবে তাঁর অভিমত, ‘‘সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভেবে অন্য ভাবেও অনেক জিনিস উপস্থাপনা করা যায়।’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলছেন, অপরাধমূলক কাহিনির বিজ্ঞাপনে রক্তাক্ত ছবি না দেখিয়ে সংবাদপত্রের শিরোনামের ছবি দিয়েও বিষয়টি বোঝানো যায়।

এই বিতর্ক সামনে আসার পরে নড়ে বসেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর মুখপাত্র ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন