Murder Case

ভবানীপুরে দু’বছর আগের জোড়া খুনের কিনারা কবে, প্রশ্ন ব্যবসায়ী খুনে

২০২২ সালের ৬ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছেই হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটের তেতলা বাড়ির একতলার বাসিন্দা অশোক শাহ (৬০) এবং তাঁর স্ত্রী রশ্মিতা (৫৫) খুন হন। দু’টি ঘর থেকে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪ ০৬:৩৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ভবানীপুরের ব্যবসায়ী ভব্য লাখানি খুনের ঘটনায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে দু’বছর আগে এক গুজরাতি দম্পতিকে খুনের ঘটনার পরেও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা। নগরপালকে পাশে নিয়ে ঘোষণাও করেছিলেন, তদন্ত ৯৯ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। দ্রুত অভিযুক্তেরা ধরা পড়বে। মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে পুলিশ বাড়তি তৎপর হয়ে কাজ
করবে বলে ধারণা হয়েছিল পরিজনেদের। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তিন অভিযুক্ত গ্রেফতারও হয়। পরে আরও দু’জনকে পুলিশ ধরলেও মূল অভিযুক্ত আজও ফেরার! সেই ভবানীপুরেই আরও একটি খুনের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠছে, কবে ধরা পড়বে দু’বছর আগের জোড়া খুনের মূল অভিযুক্ত?

Advertisement

২০২২ সালের ৬ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছেই হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটের তেতলা বাড়ির একতলার বাসিন্দা অশোক শাহ (৬০) এবং তাঁর স্ত্রী রশ্মিতা (৫৫) খুন হন। দু’টি ঘর থেকে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল
অশোককে। ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে রশ্মিতাকে মাথায় গুলি করে খুনের প্রমাণ মেলে।

জানা যায়, অশোক এবং রশ্মিতার তিন কন্যা। মেজো জামাইয়ের মামাতো ভাই অশোকের থেকে এক লক্ষ টাকা ধার করেছিলেন। সেই ভাই করোনায় মারা যান। টাকা শোধ করার আশ্বাস দেয় তাঁর দাদা দীপেশ শাহ। অশোকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, আর্থিক অনটনে পড়া অশোক সেই টাকা ফেরত দেওয়ার চাপ দিচ্ছিলেন। হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটের বাসস্থানও বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সে কথা জানতে পেরে বিশাল বর্মণ, যতীন মেহতা, রত্নাকর নাথ, সন্তোষ কুমার ও সুবোধ সিংহ নামে পাঁচ জনকে নিয়ে বাড়ি কেনার নাম করে ঢুকে খুন এবং জিনিস হাতানোর পরিকল্পনা করে দীপেশ। পরিচিত লোক দেখে অশোক বাধা দেননি। খুনের পর বেশ কিছু জিনিস লুট করে তারা বিভিন্ন দিকে পালায়। বাকিরা ধরা পড়লেও এখনও গ্রেফতার করা যায়নি দীপেশকে।

Advertisement

লালবাজার যদিও দাবি করেছে, দীপেশের আত্মীয় এবং বন্ধুদের উপর নজর রাখা হচ্ছে। কিন্তু গত প্রায় দু’বছরে দীপেশ কারও সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করেনি। তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও লেনদেন হয়নি। কার্যত যেন উবে গিয়েছে সে! এক তদন্তকারী জানাচ্ছেন, দীপেশের প্রাক্তন স্ত্রী তাঁদের জানিয়েছেন, ২০১২ সালে স্ত্রী, মেয়েকে ছেড়ে আচমকা ‘অজ্ঞাতবাস’-এ চলে গিয়েছিল দীপেশ। অনেক খুঁজে হদিশ না মেলায় পুলিশেরও দ্বারস্থ হন তাঁরা। ২০১৪ সালে পরিবারের লোকেরা লক্ষদ্বীপ ঘুরতে গিয়ে সেখানে দীপেশের খোঁজ পান। তাকে নাম জিজ্ঞাসা করা হলে এক এক বার এক একটি নাম বলে দীপেশ। চেপে ধরলে ধরা দেয় সে। লক্ষদ্বীপে টানা দু’বছর ‘অজ্ঞাতবাস’ কাটানোর সময়েও মোবাইল ব্যবহার করত না দীপেশ। সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের বিশেষ দল লক্ষদ্বীপে গিয়েছিল। কিন্তু দীপেশকে ধরা সম্ভব হয়নি।

লালবাজারের অপরাধ দমন শাখার এক পুলিশকর্তা জানালেন, ওই অভিযুক্তকে ‘প্রোক্লেমড অফেন্ডার’ বা ‘ফেরার আসামি’ বলে ঘোষণা করেছে আদালত। ফলে আগামী দিনে তার সম্পত্তি নিলাম করা যাবে। পাশাপাশি আদালত তাকে ফেরার ঘোষণা করায়, তার কমপক্ষে তিন বছর শাস্তি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শাস্তির আগে তো তাকে ধরতে হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন