Netaji Nagar Colony

বস্তির ছাইচাপা বই খুঁজেও জেগে আছে পড়ার ইচ্ছে 

গত কয়েক বছরে তাই পাড়ার দিদিমণি মধুমিতার দশ ফুট বাই আট ফুটের ঘরই হয়ে উঠেছিল ‘গ্রন্থাগার’!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৪৭
Share:

ভস্মীভূত: পুড়ে ছাই বইয়ের স্তূপ হাতড়াচ্ছেন মধুমিতা মণ্ডল। বুধবার, নেতাজিনগর কলোনিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আগে ক্লাসে পাশ করলেই বই-খাতা বিক্রি হয়ে যেত কেজি দরে। বাবা ফুটপাতে ফল বিক্রি করেন, মা পরিচারিকার কাজ করেন। তাই সংসারের প্রয়োজনেই বিক্রি করা হত পুরনো বই-খাতা। কিন্তু নবম শ্রেণি থেকে বই বিক্রি বন্ধ! মেয়ে মধুমিতা মণ্ডল বাবা-মাকে বোঝান, বই বিক্রি করে লাভ নেই। বরং ওগুলো থাকলে পাড়ার ছেলে-মেয়েরা পড়তে পারে। অনেকেরই বই কেনার টাকা নেই। গত কয়েক বছরে তাই পাড়ার দিদিমণি মধুমিতার দশ ফুট বাই আট ফুটের ঘরই হয়ে উঠেছিল ‘গ্রন্থাগার’!

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাইপাসের নেতাজিনগর কলোনির আগুনে চল্লিশটি ঘরের সঙ্গেই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ‘মধুমিতার গ্রন্থাগার’! বাবা-মা এবং বোনকে নিয়ে পাশের বহুতলের কমিউনিটি হলে ঠাঁই পেয়েছেন মধুমিতা। বুধবারও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের কেটেছে সেখানেই। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া মধুমিতা এ দিন বলেন, ‘‘এই বস্তির ছেলেমেয়েরা আমার কাছেই পড়ে। আমার ইলেকট্রনিক্স বক্স, আয়রন স্টিক সব পুড়ে গিয়েছে, নবম শ্রেণি থেকে রেখে দেওয়া বইগুলোও শেষ!’’ এর পরে বললেন, ‘‘লকডাউনের জন্য প্রথম বর্ষের রেজ়াল্ট কলেজ থেকে আনা হয়নি। এখন ওইটুকুই সম্বল।’’

একই অবস্থা বস্তির অন্য বাসিন্দা জোহরা সর্দারের। তাঁর মেয়ে বছর চোদ্দোর রিনা খাতুনের এ বারই মাধ্যমিক দেওয়ার কথা। লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠের ছাত্রী রিনার সমস্ত নথি ছাই হয়ে গিয়েছে। এ দিন দেখা গেল, ছাই-চাপা বই খুঁজে মেয়ের জন্য গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন জোহরা। খবর পেয়ে টাকি থেকে এসে রিনা আর তার বছর দশেকের বোনকে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন তাদের পিসি। সেখান থেকেই ফোনে রিনা বলল, ‘‘সব পুড়ে গিয়েছে। পরীক্ষা দিতে পারব তো?’’ ঘটনাচক্রে এ দিনই ঘোষণা হয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের জুন। পরীক্ষা তো পিছিয়ে গেল? রিনার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘তত দিনে আমাদের ঘর হয়ে যাবে?’’

Advertisement

আরও পড়ুন: জ্যান্ত পোড়ানোয় কি মৃত্যু কঙ্কাল-কাণ্ডে

আরও পড়ুন: আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকারি কৌঁসুলির

ঘর তৈরি হবে কি না, উত্তর খুঁজছে ওই বস্তিরই আরও এক মেধাবী ছাত্র বিপ্লব মণ্ডল। বি-টেক পড়ুয়া বিপ্লবের মা সন্ধ্যাদেবী বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের লোক বাঁশের ঘর করে দেবে বলেছেন। সেই ঘরে রক্ষা হবে? আগুন লাগলে তো আবার সব শেষ। ছাদের ঘর চাই না, অন্তত ইট দিয়ে ঘর বানিয়ে টিনের চাল করে দিলেও হয়।’’

স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এঁদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এঁরা সবাই দিন আনেন, দিন খান। কিন্তু এঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ইচ্ছে দেখলে অবাক হতে হয়। সব দিক থেকেই ওঁদেরকে সাহায্য করা হবে।’’

তবে আগুন কী করে লেগেছিল, এ দিন রাত পর্যন্তও স্পষ্ট নয়। স্থানীয়দের দাবি, কোনও ঘরে রান্না চলাকালীন সিলিন্ডার ফেটে প্রথমে আগুন লাগে। বস্তির ঝুলতে থাকা বিদ্যুতের তারে আগুন লেগে বিপত্তি ছড়ায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন