দুর্ঘটনাগ্রস্ত মোটরবাইক। —নিজস্ব চিত্র।
ফের বেপরোয়া গতির বলি দুই পড়ুয়া।
সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ইএম বাইপাসে। অভিযোগ, হেলমেটহীন অবস্থায় বেপরোয়া মোটরবাইক চালাতে গিয়ে ওই দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি বাইকের আর এক আরোহী।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম অমিত ঘোষ (১৯) এবং শুভ দাস (১৬)। অমিতের বাড়ি বাঁশদ্রোণী থানা এলাকার গড়িয়া কামডহরি পূর্বপাড়ায়। শুভ পাশের আতাবাগানের বাসিন্দা। জখম আরোহী সোমনাথ বাহাদুর তাদের বন্ধু। অমিত ও শুভ বোড়ালের পৃথক দু’টি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। পুলিশের অনুমান, মোটরবাইকটি নিয়ে রেস করছিলেন তিন জন।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ ঘুরতে যাবে বলে মোটরবাইক নিয়ে বেরোয় অমিত ও শুভ। তাদের সঙ্গ নেয় সোনারপুরের বাসিন্দা সোমনাথ। বাইক চালাচ্ছিলেন অমিত। প্রথমে ওই তিন জন যান নিউ টাউনে। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত আড়াইটে নাগাদ বাইপাসের মেট্রোপলিটনের কাছে মোটরবাইকটি প্রথমে রাস্তার বাঁ দিকে ডিভাইডারে, তার পরে দুই লেনের মাঝখানের ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে খালে ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলের কাছেই ছিল টহলদারি পুলিশের একটি ভ্যান। সঙ্গে সঙ্গে তারা পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তিন জনকে খাল থেকে উদ্ধার করে। খবর যায় প্রগতি ময়দান থানায়। পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্সে করে আহতদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অমিত ও শুভকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সোমনাথ ওই হাসপাতালেই ভর্তি।
কিন্তু গড়িয়া থেকে নিউ টাউন পর্যন্ত কী ভাবে বিনা হেলমেটে একটি মোটরবাইকে তিন জন পুলিশি নজর এড়িয়ে যাতায়াত করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের দাবি, রোজ শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেপরোয়া মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে ওই তিন জন পুলিশকর্মীদের চোখ এড়াল কী ভাবে?
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় জখম সোমনাথ দাবি করেছেন, তিনি বার বার অমিতকে বেপরোয়া ভাবে চালাতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু অমিত কোনও কথা শোনেননি। কেন কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না, তার কোনও সদুত্তর সোমনাথের থেকে মেলেনি বলেই পুলিশ জানিয়েছে।
তবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার আগে অমিত, শুভ ও সোমনাথ নিউ টাউনের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছিলেন। কোথায় কোথায় ওই রাতে তাঁরা গিয়েছিলেন, তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময়ে তিন যুবক নেশাগ্রস্ত ছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগেও রাতের শহরে বেপরোয়া বাইক চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে একাধিক যুবকের। যার জেরে এক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, হেলমেট ছাড়া কেউ তেল নিতে গেলে পেট্রোল পাম্প থেকে তেল পাবেন না। কিন্তু তার পরেও লাভ হয়নি। কড়া পুলিশি নজরদারিতে হেলমেটহীন বাইকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও পুরোপুরি রাশ টানা যায়নি। যার আরও এক ছবি ধরা পড়ল সোমবার রাতে বাইপাসের দুর্ঘটনায়।