প্রতীকী চিত্র
বেয়াড়া মোটরবাইক এবং বেপরোয়া চার চাকার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই হুঁশিয়ারির তিন দিনের মাথাতেই উদ্দাম গতিতে চালানোর অভিযোগে একটি গাড়িকে আটকানোর ‘অপরাধে’ রবিবার খাস শহরের বুকেই আক্রান্ত হলেন এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট। ওই পুলিশ অফিসারের অভিযোগ, অশ্লীল গালিগালাজ করার পাশাপাশি তাঁর ইউনিফর্ম ধরে টানা হয় এবং মারধরও করা হয়। পুলিশ জানায়, অভিযু্ক্তেরা ছিল পাঁচ জন। তিন জন তরুণ ও দু’জন তরুণী।
পুলিশের দাবি, ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওই পাঁচ জনই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল। প্রত্যেকের শরীরেই চড়া মাত্রায় অ্যালকোহলের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। সেই মাত্রা কারও একশো, কারও আবার চারশোর উপরে। যেটি স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ থাকার কথা। ফলে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো, কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে অশ্লীল গালিগালাজ করা ও তাঁর গায়ে হাত তোলা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ওই সার্জেন্ট পাঁচ জনকেই গিরিশ পার্ক থানার হাতে তুলে দেন। দায়ের করা হয় অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত তিন তরুণ ও দুই তরুণীর বিরুদ্ধেই একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে, যার মধ্যে জামিন-অযোগ্য একাধিক ধারাও ছিল। তবে, এ দিন দুপুরে তাঁদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে সকলেই জামিন পেয়ে যায়। ওই পাঁচ জনের মধ্যে এক তরুণীর বাবা প্রাক্তন সরকারি আইনজীবী। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত তরুণ-তরুণীদের হয়ে এ দিন এক ঝাঁক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
কী ঘটেছিল এ দিন?
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার সকালে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে গিরিশ পার্ক এবং বিবেকানন্দ রোডের সংযোগস্থলে ডিউটি করছিলেন জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের সার্জেন্ট রাজেশ লোধ। সঙ্গে ছিলেন ট্র্যাফিক গার্ডেরই এক কনস্টেবল। সাড়ে আটটা নাগাদ আচমকা তাঁরা দেখেন, একটি স্যান্ট্রো গাড়ি বেপরোয়া গতিতে মহাত্মা গাঁধী রোডের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
গাড়িটিকে আসতে দেখে সামনে গিয়ে সেটিকে আটকান ওই কনস্টেবল। আর তখনই গাড়ির চালকের আসন থেকে নেমে আসে এক যুবক। অভিযোগ, বেরিয়েই সে জানতে চায়, গাড়ি কেন আটকানো হল? সেই সঙ্গে অশ্লীল গালিগালাজ। কনস্টেবল সঙ্গে সঙ্গে ডেকে পাঠান সার্জেন্ট রাজেশ লোধকে। যিনি ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন।
সার্জেন্টকে এগিয়ে আসতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে বাকি চার জন। তাদের অবস্থা দেখে এবং মুখের গন্ধে সন্দেহ হওয়ায় ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ দিয়ে চালককে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই যুবক নেশাগ্রস্ত।
সে ওই অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিল কেন? সার্জেন্ট এ কথা বলতেই সোজা তাঁর ইউনিফর্ম ধরে ওই যুবক হেঁচকা টান মারে বলে অভিযোগ। গায়ে হাত তোলার প্রতিরোধ করতে সঙ্গে সঙ্গে বাকি চার জনও রাজেশের উপরে চড়াও হয়। অভিযোগ, তাঁকে মারধরও করা হয়। সার্জেন্টকে নিগৃহীত হতে দেখে এগিয়ে আসেন কনস্টেবল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি খবর পাঠান গিরিশ পার্ক থানায়। পুলিশ এসে পাঁচ জনকেই গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম সুস্মিতা গুছাইত, মাম্পি ঘোষ, অর্ক রায়, অর্পণ দত্ত ওরফে তাতুন এবং অভিলাষ দত্ত ওরফে তপন।