রাতে বাড়িতে রান্নার পাট নেই। সকালে রাঁধা একটা আমিষ বা নিরামিষ পদ রেফ্রিজারেটরে রাখা। ওটা গরম করে নেওয়া হবে। আর মোড়ের মাথার দোকান থেকে রুটি। যা কয়লার উনুনে সেঁকা হচ্ছে পাড়ায় পাড়ায় বহু দোকানে। অফিসপাড়ার ফুটপাথেও বহু খাবারের দোকানে রান্না হয় কয়লার উনুনে। কয়লার উনুন শুধু রান্নার জন্য নয়, ইস্ত্রি গরম করার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে শহর জুড়ে।
কলকাতার বায়ুদূষণে কয়লার উনুনের অবদান গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রাথমিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও ‘নিরি’ (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট) মনে করছে। ওই দু’টি সংস্থার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গাড়ির ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় বলে ধরেই নেওয়া হয়, ওটাই সব চেয়ে বেশি বায়ুদূষণ করে। আর ভুলটা ওখানেই। নিরি ও পর্ষদের বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘‘কলকাতার বায়ুদূষণে মোটরগাড়ির ধোঁয়ার অবদান ৫০ শতাংশের কম।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কলকাতার বাতাসে যে বিষ রয়েছে, তার মধ্যে গাড়ির ধোঁয়া মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ।’’
তবে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে এখনই কিছু বলা যাবে না। কারণ, সেই পরিমাপ হয়নি। কলকাতায় বাণিজ্যিক কারণে কত কয়লার উনুন ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই হিসেব কারও কাছে নেই।’’ নিরি অবশ্য জানাচ্ছে, শহরে কয়লার উনুন ব্যবহার করেন, এমন ইস্ত্রিওয়ালার সংখ্যা এক লক্ষ।
কোন উৎস থেকে কতটা দূষণ হচ্ছে, সেটা মাপার কাজ পর্ষদের সহযোগিতায় সম্প্রতি শুরু করেছে নিরি। সেই জন্য তারা কলকাতায় ছ’টি মনিটরিং স্টেশন বা যন্ত্র বসাচ্ছে। ইতিমধ্যে ডানলপ ও শ্যামবাজারে তা বসানো হয়েছে। এ পরে মিন্টো পার্ক, চেতলা, বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি ও মৌলালিতে চারটি যন্ত্র বসবে। সেগুলি বসানোর জায়গা মূলত বহুতল বাড়ি। পুরসভার অনুমোদন অনুযায়ী জায়গা বেছে ওই সব যন্ত্র বসানো হচ্ছে।
নিরি-র কলকাতা জোনাল সেন্টারের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট দীপাঞ্জন মজুমদার বলেন, ‘‘এই দফায় জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যন্ত্রগুলি কাজ করবে। বৃষ্টি শুরু হলে কাজ বন্ধ হবে। তখন পরীক্ষা করে দেখা হবে, গরমে কলকাতার দূষণের অবস্থাটা কী। যন্ত্রগুলি ফের কাজ শুরু করবে শীতে, নভেম্বরের শেষে।’’
নিরি জানাচ্ছে, ওই যন্ত্রের বিশেষ ধরনের ছাঁকনিতে আটকাবে সূক্ষ্ম ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধূলিকণা। তার পরে রাসায়নিক পরীক্ষা করে সেগুলির উৎস নির্ধারণ করা হবে এবং কী জাতীয় ধূলিকণা কতটা পরিমাণে জমা হয়েছিল, তার শতাংশের হিসেব বার করবেন নিরি-র বিজ্ঞানীরা।
হাওড়া শহরে নিরি চারটি যন্ত্র বা মনিটরিং স্টেশন বসাবে। তবে হাওড়া পুরসভা এখনও জানায়নি, শহরের কোন কোন জায়গায় তারা ওই যন্ত্র বসাতে দেবে।