Vikram Chatterjee

সোনিকা মামলা: বিক্রমের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের চার্জ গঠন

কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা যে চার্জশিট পেশ করেন আদালতে, সেখানে বিক্রমকে দায়ী করা হয় দুর্ঘটনার জন্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:৫১
Share:

সনিকা সিংহ মামলায় বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পুজোর পর থেকেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। —ফাইল চিত্র।

মৃত্যুর প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মডেল সোনিকা সিংহ মামলার চার্জ গঠন করল আদালত। অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগেই মঙ্গলবার চার্জ গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই চার্জ গঠন করে পুজোর পর থেকেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে বিচারক জানিয়েছেন।

Advertisement

মামলার এই অগ্রগতিতে খুশি সোনিকার বন্ধুরা। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এইটুকু পথ পেরোতেই তিন বছর চলে গেল। সামনে আরও কঠিন আইনি লড়াই। সোনিকা যাতে বিচার পায় তার জন্য আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব।”

২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল, গভীর রাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। রাসবিহারী অ্যাভেনিউয়ের একটি গয়নার দোকানের সামনে বাতিস্তম্ভে প্রবল বেগে ধাক্কা মারে বিক্রমের গাড়ি। মাথায় গুরুতর আঘাত পান সোনিকা। বিক্রমই তাঁকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সোনিকাকে বাঁচানো যায়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বলিউডে মাদককাণ্ড নিয়ে মন্তব্যে জয়ার নিশানায় বিজেপি সাংসদ

আরও পড়ুন: ই-পাস ছাড়াই প্রবীণদের সফরে অনুমতি মেট্রোর, লাগবে পরিচয়পত্র​

শুরুতে টালিগঞ্জ থানার পুলিশ গাফিলতির জেরে মৃত্যু বলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ (এ) ধারায় মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু ঘটনার পর থেকে প্রকাশ্যে আসতে থাকে একের পর এক অন্য রকম তথ্য। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির ফরেন্সিক পরীক্ষায় জানা যায়, প্রায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ওই দিন গাড়িটি ধাক্কা মেরেছিল। সে রাতে একটি পার্টি থেকে ফিরছিলেন বিক্রম এবং সোনিয়া। অভিযোগ ওঠে, মত্ত ছিলেন বিক্রম। তদন্তের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এর পর বিক্রমের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪(২) ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করে। যদিও মদ্যপানের কথা আদালতে অস্বীকার করেন বিক্রম। ঘটনার পর তিনি কিছু দিন আত্মগোপন করে ছিলেন। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সোনিকার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো আড়াআড়ি ভাগ হয়ে যায় টলিউড। একটি অংশ দাবি করে, বিক্রমের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত। অন্য একটি অংশ বিক্রমের পাশে দাঁড়ায় এবং দাবি করে যে সোনিকার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনায়। এই ঘটনায় বিক্রমের কোনও দোষ নেই। ঘটনাচক্রে বিক্রম গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

তবে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারীরা যে চার্জশিট পেশ করেন আদালতে, সেখানে বিক্রমকে দায়ী করা হয় দুর্ঘটনার জন্য। তাঁরা দাবি করেন, শহরের অপরিসর রাস্তায় ওই গতিবেগে গাড়ি চালালে যে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তা বোঝার ক্ষমতা ছিল বিক্রমের। তার পরও তিনি জেনেশুনে ওই গতিতে গাড়ি চালিয়েছেন এবং দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন। যা অনিচ্ছাকৃত খুনেরই সমান। ঘটনার পর পরই বিক্রমের মেডিক্যাল টেস্ট না হওয়ায়, বিক্রম মত্ত ছিলেন কি না তা নিয়ে সরাসরি কোনও প্রমাণ পুলিশ পেশ করতে পারেনি। তবে পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্তকারীরা দাবি করেন, ওই রাতে বেসামাল অবস্থায় ছিলেন বিক্রম।

বিক্রম এর পরই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা কলকাতা হাইকোর্টে বিক্রমের বিরুদ্ধে ওই মামলা খারিজ করার আবেদন জানান। হাইকোর্ট সেই মামলা ফের নিম্ন আদালতে ফিরিয়ে দেয় এবং মামলার চার্জ গঠন করার নির্দেশ দেয়।

নিম্ন আদালতে মামলা ফিরে আসার প্রায় ১০ মাস পরে মঙ্গলবার আলিপুর জেলা আদালতের ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা জজ পুষ্পল শতপথি সরকারি আইনজীবী এবং বিক্রমের আইনজীবীর সওয়াল-জবাব শুনে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলায় চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই সওয়াল-জবাব পর্বে সরকারি আইনজীবী নব কুমার ঘোষ আদালতকে বলেন, পুলিশ অনিচ্ছাকৃত মামলার অভিযোগে চার্জশিট দিলেও, ওই মামলায় যে তথ্য প্রমাণ রয়েছে তাতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগের চার্জ গঠন করা যেতে পারে। যদিও সরকারি আইনজীবীর দাবি খারিজ করেন বিচারক। অনির্বাণ বলেন, ‘‘সরকারি আইনজীবী কার্যত একটি অদ্ভুত এবং অপ্রাসঙ্গিক আবেদন জানিয়েছিলেন আদালতে। বিচারক সেই আবেদন খারিজ করেছেন। আমরা রায়ের কপি হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন