বাংলাদেশে দীপু দাসের খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বেকবাগানে বাংলাদেশের উপদূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দীপু দাসের খুনের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতার বেকবাগানে বাংলাদেশের উপদূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অশান্তির ঘটনায় ধৃত ১৯ জনের মধ্যে সাত জন মহিলার জামিন বুধবার মঞ্জুর করেছে আলিপুর আদালত। কিন্তু সরকারপক্ষের আইনজীবীর আবেদনে সাড়া দিয়ে একই সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া ১২ জন পুরুষের জামিনের আর্জি খারিজ করে তাঁদের দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার শুনানিপর্বে সরকারপক্ষের আইনজীবী ধৃত মহিলা বিক্ষোভকারীদের জামিনের বিরোধিতা করেননি। কিন্তু ধৃত পুরুষদের ‘ফুল টার্ম’ পুলিশি হেফাজতের আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘‘এই ভাবে আক্রমণ! তা-ও বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে! মবের (বিক্ষোভকারী জনতার) ক্যারেক্টার (রাজনৈতিক চরিত্র) জানতে হবে। আগুন জ্বালানো হয়েছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে হামলা চালিয়েছেন। তাঁর ফলে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে গুরুতর জখম দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই পরিস্থিতিতে তদন্তের স্বার্থে ১২ জন বিক্ষোভকারীকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান তিনি।
অন্য দিকে, অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কী চলছে আমরা জানি। এটি ঘোষিত কর্মসূচি ছিল।’’ বাংলাদেশি যুবক দীপুকে নৃশংস ভাবে খুনের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল জানিয়ে অশান্তির জন্য পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘‘স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা ছিল। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ছিল, ব্যারিকেড ছিল। ব্যারিকেডের সামনে কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। পুলিশ হঠাৎ লাঠিচার্জ করে। যাঁরা গিয়েছিলেন, ডেপুটেশন দিতে পারেননি।’’ এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ বলছে, পুলিশ আহত হয়েছে। বলা হচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু সিজার লিস্ট অনুযায়ী কোনও গাড়ি বা পুলিশের ইউনিফর্ম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কি?’’ পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘আঘাত পেলেন বিক্ষোভকারীরা, মামলা করল পুলিশ!’’
সম্প্রতি ময়মনসিংহে দীপুকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার প্রতিবাদ শুরু হয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে। মঙ্গলবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, এভিবিপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-সহ সঙ্ঘ পরিবারের একাধিক সংগঠনের ডাকে বাংলাদেশের উপদূতাবাস অভিযানে জড়ো হন অনেকে। মিছিল করে তাঁরা পৌঁছোন বেকবাগান এলাকায়। তবে বাংলাদেশের উপদূতাবাসের সামনে পৌঁছোনোর আগেই বিক্ষোভকারীদের আটকে দেয় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের তরফে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ উপদূতাবাসে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। কিন্তু পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকাতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বেকবাগান এলাকা। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জও করে পুলিশ।
অভিযোগ, পুলিশের লাঠির ঘায়ে কয়েক জন আহত হন। বিক্ষোভকারীদের অনেককে টেনেহিঁচ়ড়ে প্রিজ়ন ভ্যানে তোলা হয়। অনেক বিক্ষোভকারীকে দেখা যায়, প্রিজ়ন ভ্যানের ছাদের উপর উঠে পড়তে। বেকবাগান তপ্ত হয়ে ওঠায় বিজেপি নেতৃত্বও ঘটনাস্থলে পৌঁছোন। ঘটনাস্থলে যান উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। তাঁর দাবি, পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদ জানাতে এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির পাশে দাঁড়াতে গিয়েছেন তাঁরা। বেশ কিছু ক্ষণ ওই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। পুলিশের তরফে বার বার ঘোষণা করা হয়, বাংলাদেশের উপদূতাবাসের বাইরে জমায়েত বেআইনি। ব্যারিকেড থেকে দূরে সরে যাওয়ার অনুরোধও করে পুলিশ। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাতে কর্ণপাত করেননি।
কলকাতার পাশাপাশি দিল্লিতেও ভিএইচপি এবং বজরং দলের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের আটকানোর চেষ্টা করে পুলিশ। জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে চাপা উত্তেজনা ছিল দিল্লিতে। সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা হয় হাইকমিশন চত্বর। দিকে দিকে বসানো হয় পুলিশ ব্যারিকেড। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বাহিনীও। বুধবারও দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দীপু হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। জম্মুতে কংগ্রেসের তরফেও করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশ।