জোড়া খুনে দোষীকে তিরিশ বছর কারাদণ্ড দিল আলিপুর ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। ২০১২ সালের ১ মে সন্ধ্যায় দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলা থানার বাংলা-হায়াতপুর এলাকায় খুন হন অন্তরা নাহা নামে এক তরুণী ও তাঁর পিসি শিবানী দে। গলার নলি কেটে ও মাথায় গুরুতর আঘাত করে ওই দু’জনকে খুন করা হয়েছিল। শুক্রবার ওই মামলাতেই আলিপুর আদালতের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক গৌরাঙ্গসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় সন্তোষ সিংহ নামে অন্তরার এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের কথায়, ২০০৮ সালে কলকাতার এক সরকারি মেডিক্যাল কলেজে একটি কোর্সে পড়ার সূত্রে বন্ধুত্ব সন্তোষ ও অন্তরার। বছরখানেক পরে সন্তোষ এক দিন অন্তরার বাড়িতে আসে। তার পর থেকেই সন্তোষের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য অন্তরার উপরে চাপ স়ষ্টি করতে থাকেন অন্তরার মা ও দিদি। এর পর থেকেই সন্তোষকে এড়িয়ে চলতে থাকেন ওই তরুণী। কিন্তু সন্তোষ নানা ভাবে অন্তরা ও তাঁর আত্মীয়দের ফোনে শাসানি দিতে থাকে। ২০১২ সালের ১ মে স্থানীয় একটি মন্দিরে গিয়েছিলেন অন্তরার মা সন্ধ্যাদেবী। বাড়ি ফিরে দেখেন মেয়ে ও ননদ খুন হয়েছেন। অন্তরার দিদি তনিমা কর্মকার বোনের খুনের ঘটনায় সন্তোষের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে হাওড়া থেকে সন্তোষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে জেরার পরে বাড়ির পিছন থেকে রক্তমাখা তোয়ালে ও ছুরি উদ্ধার হয়। সন্তোষের মোবাইল টাওয়ার লোকেশনও ওই সময়ে অন্তরার বাড়িতে ছিল বলে আদালতে তথ্যপ্রমাণ পেশ করে পুলিশ। তদন্তকারীদের কথায়, আক্রোশের জেরে অন্তরাকে খুন করেছিল সন্তোষ। ভাইঝিকে বাঁচাতে এসে খুন হন পিসি। খুনের পরে তথ্য লোপাটের উদ্দেশ্যে তোয়ালে দিয়ে দু’হাতের রক্ত মুছে ফেলে সে। বাড়ির পিছনে একটি ঝোপ থেকে ওই তোয়ালে ও ছুরি উদ্ধার করা হয়। ছুরি ও তোয়ালেতে পিসি-ভাইঝির খুনের নমুনা মেলে। সন্তোষের ঘর থেকেও একটি রক্তমাখা জামাও উদ্ধার হয়। তাতেও অন্তরা ও শিবানীদেবীর রক্তের নমুনা মেলে। আদালতে সরকারি আইনজীবী আকবর আলি বলেন, ‘‘আমরা ফাঁসির আবেদন করেছিলাম। আদালত ৩০ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে।’’ এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন অন্তরার দিদি তনিমা কর্মকার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ফাঁসির শাস্তি চেয়েছিলাম। তবে তিরিশ বছর কারাদণ্ডও কম কিছু নয়।’’