Kolkata Airport

মসজিদ সরাতে খুলতে চলেছে আলোচনার দরজা

যশোর রোডে বিরাটি ছাড়িয়ে আরও উত্তরে গেলে বাঁকড়া। বাঁকড়া মোড়ের উল্টো দিকে বিমানবন্দরের সাত নম্বর গেটের ভিতরে ওই মসজিদ।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

যাত্রী-নিরাপত্তার কথা ভেবে কলকাতা বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ের মুখে থাকা মসজিদ সরানো হবে কি না, কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনার পরে সেই বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। কারণ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাজারহাটের দিক থেকে নেমে কোনও কারণে রানওয়েতে বিমান দাঁড় করাতে না-পারলে মসজিদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যে মুষ্টিমেয় মানুষ ওই মসজিদে নিয়মিত নমাজ পড়তে যান, তাঁদের জন্য এত বিপুল সংখ্যক বিমানযাত্রী কেন ভুগবেন? এর ফলে তাঁদের আরও বড় বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না তো?

Advertisement

যদিও ওই মসজিদের ইমাম মহম্মদ মনিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, এখন করোনার জন্য লোক কম আসছেন ঠিকই। কিন্তু অন্য সময়ে প্রতি শুক্রবার প্রায় ২০০ মানুষ ওই মসজিদে নমাজ পড়তে আসেন। নিয়মিত বহু মানুষ পাঁচ বার সেখানে গিয়ে নমাজ পড়েন। মসজিদ কমিটির প্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও জানিয়েছেন, ইফতার, সবে বরাত-সহ নানা অনুষ্ঠানে মসজিদে ভিড় হয়। তিনি জানিয়েছেন, মসজিদ সরানোর জন্য উপযুক্ত স্তরে আলোচনার প্রয়োজন।

যশোর রোডে বিরাটি ছাড়িয়ে আরও উত্তরে গেলে বাঁকড়া। বাঁকড়া মোড়ের উল্টো দিকে বিমানবন্দরের সাত নম্বর গেটের ভিতরে ওই মসজিদ। যাঁরা নিয়মিত সেখানে যান, তাঁরা মূলত স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁদেরই এক জন মেহবুব আলির কথায়, ‘‘১৭০ বছরের পুরনো মসজিদ এটি। তখন কোথায় ছিল বিমানবন্দর? ১৯৬২ সালে বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। যশোর রোড তখন ছিল মসজিদের গা-ঘেঁষে। কিন্তু বিমানবন্দের স্বার্থে সেই রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। মসজিদ পড়ে যায় অধিগৃহীত জমির ভিতরে।’’

Advertisement

স্থানীয় আর এক বাসিন্দা মহম্মদ মনজুর আলি বলেন, ‘‘অসুবিধা যে হচ্ছে মানছি। কিন্তু আল্লার ঘর তো এই ভাবে সরিয়ে দেওয়া যায় না।’’

মুসলিমদের সর্বভারতীয় সংগঠন জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ-এর রাজ্য সভাপতিও সিদ্দিকুল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ চাইলেই কোথাও থেকে মসজিদ সরানো যায় না। ভারতে মুসলিমদের তিনটি প্রধান সংগঠন রয়েছে। তাদের মধ্যে জমিয়তে একটি। অন্য দু’টি হল দারুল উলুম দেওবন্দ এবং মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। মসজিদ সরানোর বিষয়টি এই তিনটি সংগঠনকে চিঠি দিয়ে জানানোর কথা আমি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। এ-ও বলেছিলাম, আমাকে যেন সেই চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়।’’

সিদ্দিকুল্লা জানিয়েছেন, মাস পাঁচেক আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ওই তিনটি সংগঠনকে চিঠি দেন এবং সেটির প্রতিলিপি তাঁর কাছেও পাঠান। কিন্তু তার পরে বিষয়টি আর এগিয়েছে কি না, জানা নেই তাঁর।

কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘আমরা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু জবাব পাইনি। নতুন করে আবার ওই সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ সিদ্দিকুল্লাও জানিয়েছেন, লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতির জন্য বিস্তারিত আলোচনায় দেরি হচ্ছে বলে তাঁর ধারণা।

তিনি আরও জানিয়েছেন, মসজিদ সরানো নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আলোচনা হয়েছিল। রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটি আইন তৈরি হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বাবরি মসজিদ ছাড়া দেশের আর কোনও মসজিদকে বর্তমান অবস্থান থেকে সরানো যাবে না। এই মসজিদ সরাতে গেলে সেই আইন বদল করতে হবে কি না, তা নিয়েও আলোচনার প্রয়োজন বলে মত তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন