বাতিল শিবিরের কার্ড দেখিয়ে রক্তের নয়ছয়

রক্তদাতাদের ডোনেশন কার্ড নিয়ে দুর্নীতি ও রক্ত নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

রক্তদাতাদের ডোনেশন কার্ড নিয়ে দুর্নীতি ও রক্ত নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কে। ওই ব্লাড ব্যাঙ্কের যে-সব রক্তদান শিবির হয়নি বা বাতিল হয়েছে, সেই সব শিবিরের কোড নম্বরযুক্ত ব্লাড ডোনেশন কার্ড রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই কার্ড দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য রক্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশ জড়িত বলে সন্দেহ।

Advertisement

তৃণমূলপন্থী সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোগ্রেসিভ টেকনোলজিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’ এই ব্যাপারে মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা বিশ্বজিৎ হালদারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘কই, এ-রকম কিছু শুনিনি তো!’’ বিষয়টি জানানো হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীকেও। তিনি বলেন, ‘‘গুরুতর অভিযোগ। নিশ্চয়ই তদন্ত করা হবে।’’

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও ক্লাব বা সংগঠন কোনও সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ককে নিয়ে রক্তদান শিবির করলে সরকার দাতাদের মাথাপিছু খাবারের জন্য ২৫ টাকা এবং একটি ডোনার কার্ড দেয়। বেসরকারি হাসপাতালে কোনও রোগীর যদি রক্তের প্রয়োজন হয় এবং তাঁর কাছে যদি ওই কার্ড থাকে, সেটি কোনও সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে দেখালে তিনি বিনা পয়সায় এক ইউনিট রক্ত বা রক্তের উপাদান পেতে পারেন। একটি কার্ডে বছরে এক বার এই সুবিধা পাওয়া যায়। কার্ড না-থাকলে বেসরকারি হাসপাতালের রোগীকে সরকারি হাসপাতাল থেকে রক্ত কিনতে হয়। এক ইউনিট রক্তের জন্য ১০৫০ টাকা এবং এক ইউনিট প্লেটলেট কিনতে ৩০০ টাকা লাগে।

Advertisement

প্রতিটি সরকারি রক্তদান শিবিরের কোড নম্বর থাকে। ‘রক্তিম’ নামে সরকারি সফটওয়্যারে শিবিরের তথ্য বাধ্যতামূলক ভাবে নথিভুক্তির সময় লেখা থাকে সেই নম্বর। ডোনার কার্ডেরও আলাদা আলাদা নম্বর থাকে। ব্লাড ব্যাঙ্ক ডোনার কার্ড দেখে রক্ত দেওয়ার সময় শিবিরের নম্বর ও কার্ডের নম্বর নথিভুক্ত করে রাখে।

৩০ নভেম্বর মধ্য কলাবেড়িয়া বান্ধব সম্মিলনীর শিবিরে মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত সংগ্রহের কথা ছিল। ‘রক্তিম’ সফটওয়্যারেই দেখা যাচ্ছে, ‘এমসিএইচ-১৮-৩৯৭’ কোডের ওই শিবির বাতিল এবং সেখানে রক্তদাতার সংখ্যা শূন্য। অথচ সেই শিবিরের কোডে ২৩৩৭৮, ২৩৩৭৯, ২৩৪৩৫, ২৩৪৪২-এর মতো বিভিন্ন নম্বরের ডোনার কার্ড দেওয়া হয়েছে। কার্ডগুলিতে একই শিবিরের কোডে এক-একটিতে এক-এক রকম তারিখ লেখা! ২৩৩৭৮ নম্বর কার্ডে স্টার্লিং হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর জন্য মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়া হয়েছে। ২৩৪৪২ নম্বর কার্ডে রক্ত নেওয়া হয়েছে সঞ্জীবনী হাসপাতালের এক রোগীর জন্য। ২৩৪৩৫ কার্ডে নদিয়ার জয়মাল্য মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি এক মহিলার জন্য রক্ত গিয়েছে‌। নভেম্বরেই কলকাতার আইডিয়াল নার্সিংহোম ও নিউ লাইফ নার্সিংহোমে ভর্তি দুই রোগীর কাগজে দেখা যাচ্ছে, মেডিক্যালেরই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেটা কোন কার্ডের ভিত্তিতে, তা লেখা নেই। সেই রক্ত কেনার রসিদও নেই!

টেকনোলজিস্ট সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শমিত মণ্ডলের অভিযোগ, ব্লাড ব্যাঙ্কের কিছু লোক ওই সব কার্ড রেখে দিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালের কেউ রক্ত নিতে এলে ওই কর্মীরা তাঁদের কাছ থেকে রক্তের জন্য টাকা নিচ্ছেন। সেই টাকা সরকারি খাতে জমা না-দিয়ে পকেটে ঢোকাচ্ছেন আর রোগীর নথির সঙ্গে একটি ডোনার কার্ডের কথা লিখে দিচ্ছেন। যাতে অডিটে দেখানো যায় যে, কার্ডের ভিত্তিতে নিখরচায় রক্ত নেওয়া হয়েছিল। ব্লাড ব্যাঙ্কের কেউ কেউ কার্ড বেচে দিচ্ছেন বাইরে। শমিতবাবু বলেন, ‘‘সব জানিয়েছি স্বাস্থ্যকর্তাদের। কিছু লোকের দুর্নীতির জন্য সরকারের নাম খারাপ হচ্ছে। এটা আটকানো দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন