ভর্তির নামে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠল আশুতোষ কলেজে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আশুতোষ কলেজে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হবে। তবে তার জন্য গুনতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা! কোন বিষয়ে ভর্তি হতে চান পড়ুয়ারা, তার উপর নির্ভর করবে টাকার অঙ্ক! আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, টাকা দিলেই ভর্তি নিশ্চিত! আশুতোষ কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার নামে ফোন করে টাকা চাওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই ভবানীপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে আলাদা ভাবে ওই মোবাইল নম্বরগুলির মধ্যে একটিতে ফোন করে খোঁজখবর নিল আনন্দবাজার ডট কম।
আনন্দবাজার ডট কম: কলেজে ভর্তি নিয়ে কি কথা বলা যাবে? আপনার সঙ্গে আগে এক জনের কথা হয়েছিল ভর্তির ব্যাপারে।
ফোনের ও প্রান্ত থেকে সম্মতিসূচক বার্তা আসে (কখনওই অস্বীকার করেননি যে ভর্তির ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কেন যোগাযোগ করা হচ্ছে)
আনন্দবাজার ডট কম: আমার এক বন্ধুর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছিল। তিনিই আমাকে আপনার সঙ্গে আশুতোষে ভর্তির ব্যাপারে কথা বলতে বলেছিলেন। তাই ফোন করলাম।
ওই ব্যক্তি: হ্যাঁ বলুন। কে আপনাকে ফোন করতে বলেছিলেন? আপনার নাম কী?
নাম বলার পরে কথাবার্তার মাঝপথে ওই ব্যক্তির কোনও কারণে সন্দেহ হয়। তখনই তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘ওই বন্ধুকে ফোন করতে বলুন। তার পরেই কথা বলব ভর্তির ব্যাপারে।’’
আনন্দবাজার ডট কম: আচ্ছা। ওই বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি। তার পরেই কেটে দেওয়া হয় ফোন!
রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিন্ন পোর্টাল চালু করেছে শিক্ষা দফতর। অর্থাৎ, কোনও কলেজে ভর্তির জন্য আলাদা কোনও ওয়েবসাইট বা পোর্টাল নয়, একটি পোর্টালেই আবেদন করতে হবে পড়ুয়াদের। কোন বিষয়ে, কোন কলেজে ভর্তি হতে চান, সেই মতো আবেদন করা সম্ভব! তার পর নম্বর এবং সংশ্লিষ্ট কলেজের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আসনসংখ্যার ভিত্তিতে মিলবে ভর্তির সুযোগ। সেখানে কী ভাবে টাকার বিনিময়ে ভর্তির টোপ দেওয়া হচ্ছে? উঠেছে প্রশ্ন। তা যাচাই করতে আনন্দবাজার ডট কম ফোন করেছিল। কথাবার্তা বেশি দূর অগ্রসর না-হলেও এটা স্পষ্ট যে আশুতোষ কলেজে ভর্তির নামে ‘প্রতারণার জাল’ বিস্তার করেছেন কয়েক জন। কে বা কারা এই চক্রের নেপথ্যে রয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিষয়টি নজরে আসতেই নড়েচড়ে বসেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ মানস কবি এ ব্যাপারে ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শুধু তা-ই নয়, কলকাতা পুলিশের সাইবার সেল এবং শিক্ষা দফতরকেও বিষয়টি জানানো হবে বলে জানান তিনি। আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, ম্যানেজমেন্ট কোটায় ভর্তি করিয়ে দেওয়া হবে বলে অপরিচিত কয়েকটি নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে পড়ুয়াদের সঙ্গে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, আশুতোষ কলেজে কোনও ম্যানেজমেন্ট কোটাই নেই।
পড়ুয়াদের সচেতন করে আশুতোষ কলেজে নোটিস টাঙানো হবে বলে জানান অধ্যক্ষ মানস কবি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
চলতি বছরে আশুতোষ কলেজে ভর্তির তত্ত্বাবধানে থাকা ছাত্রেরাও অতীতে এই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েকটি নম্বর উল্লেখ করে আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগও করা হয়। সেই সব অভিযোগ পাওয়ার পরেই থানার দ্বারস্থ হলেন আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ। অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে ভবানীপুর থানা। অধ্যক্ষের কথায়, ‘‘সেন্ট্রালাইজ়ড অ্যাডমিশন পোর্টালে ভর্তিপ্রক্রিয়া চলছে। সেখানে কখনওই আলাদা ভাবে কোনও কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন না।’’ কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করে নোটিসও টাঙানো হবে।