ডাক্তারিতে ভর্তির টোপ দিয়ে প্রতারণা

চলতি বছরের মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’ শেষ হতেই এখন একাধিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হচ্ছে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিভিন্ন থানায়।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

একটি সংস্থার নাম করে সাত দিনে অভিভাবকদের কাছে ফোন এসেছে বহু বার। প্রতিবারই দাবি করা হয়েছে, ‘ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট’ (নিট)-এ স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় নম্বর যা-ই থাক, তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করিয়ে দেওয়া যাবে শহরের যে কোনও মেডিক্যাল কলেজে। শুধু দিতে হবে কিছু ‘সার্ভিস চার্জ’!

Advertisement

চলতি বছরের মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’ শেষ হতেই এখন একাধিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হচ্ছে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিভিন্ন থানায়। কেউ ছেলের জন্য দিয়েছিলেন সাড়ে ছ’লক্ষ টাকা। কারও আবার বেহাত হয়ে গিয়েছে মেয়ের জন্য দেওয়া ন’লক্ষ টাকা! চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায় নামে এমনই এক প্রতারিত বাবার দাবি, ‘‘প্রতারিত হয়েছি বুঝেই যে সংস্থা ফোন করেছিল, তাদের অফিসে যাই। গিয়ে দেখি, তালা ঝুলছে। সেখানকার চা বিক্রেতা ও জল বিক্রেতারাও বলছেন, তাঁদেরও হাজার হাজার টাকা বাকি!’’

গত জুনে ‘নিট’ পরীক্ষা হয়েছে। এক অভিভাবক পুলিশকে জানান, তাঁর ছেলে ৪৭৯ নম্বর পেয়েছেন। সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। এর মধ্যেই গত ২৮ জুলাই থেকে ‘নিশা মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা তাঁর মোবাইলে লাগাতার ফোন করতে শুরু করে। ওই অভিভাবকের কথায়, ‘‘যাদবপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে রাজ্য কোটায় ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। একটা বছর নষ্ট হওয়ার কথা ভেবে গত ৫ অগস্ট সেক্টর ফাইভে ওই সংস্থার অফিসে যাই। আমাদের প্রায় ১৭ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার ‘প্যাকেজ’ দেখানো হয়।’’

Advertisement

ভর্তির ফি বাবদ ৫০ হাজার, ‘কশান ডিপোজ়িট’ বাবদ ২৫ হাজার, সাড়ে চার বছরের ‘টিউশন ফি’ বাবদ ন’লক্ষ ৯০ হাজার, ‘ক্যাপিটেশন ফি’ বাবদ সাড়ে চার লক্ষ এবং সংস্থার ‘সার্ভিস চার্জ’ হিসেবে দু’লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। ওই দিনই সার্ভিস চার্জের দেড় লক্ষ টাকা নগদে জমা দেন তিনি। এর পরে ৯ অগস্ট বাকি ৫০ হাজার নগদে এবং ক্যাপিটেশন ফি-র তিন লক্ষ টাকার একটি চেক জমা করেন তিনি। গত ১৪ অগস্ট ক্যাপিটেশন ফি-র বাকি দেড় লক্ষ টাকাও নগদে দিয়ে আসেন। তাঁর কথায়, ‘‘১৬ অগস্ট ওই সংস্থা থেকে ফের ফোন করে বলা হয়, চেকে টাকা উঠতে সময় লাগবে। ছেলের ভর্তি তত দিন আটকে থাকবে। দ্রুত তিন লক্ষ টাকা নগদে দিয়ে যান।’’ সেই দাবিও মেনে নেন ওই অভিভাবক।

এর পরে গত ১৮ অগস্ট ফের ফোন করে যাদবপুরের ওই বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে যেতে বলা হয়। ওই অভিভাবকের কথায়, ‘‘সকাল থেকে ছেলেকে নিয়ে আমি আর ওর মা দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেউ আসেনি। কত বার যে ওই সংস্থায় ফোন করেছি, বলতে পারব না। ওই কলেজের অফিসে গিয়ে জানতে পারি, কোনও ভর্তির ব্যাপারই নেই সে দিন।’’ একই অভিজ্ঞতা বিকাশচন্দ্র বর্মণ নামে আর এক ব্যক্তির। তিনি যাদবপুর থানায় ‘আরোহী এডুকেশনাল সার্ভিস’ নামে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। তাঁর কন্যাকেও যাদবপুরের ওই বেসরকারি কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নামে সাড়ে ন’লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি।

একের পর এক অভিযোগ পেয়ে নড়ে বসেছে পুলিশ। লালবাজারের দুর্নীতি-দমন শাখার এক কর্তা বলেন, ‘‘থানা স্তরে তদন্তের পাশাপাশি অভিযুক্ত সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ় করিয়েছি আমরা। দ্রুত ওই চক্র ধরা পড়বে।’’ বিধাননগর পুলিশও সেক্টর ফাইভের ওই সংস্থার তালাবন্ধ অফিসে হানা দিয়েছে। ঘরটি যিনি ভাড়ায় দিয়েছিলেন, তাঁকে এবং আশপাশের অফিসের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

যাদবপুরের ওই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অশোককুমার ভদ্র বলেন, ‘‘আমাদের কলেজ প্রতিষ্ঠিত। সেই কারণে বহু অভিভাবকই ছেলেমেয়েদের এখানে পড়ানোর চেষ্টা করেন। সব কিছু অনলাইনে হয় জেনেও কেন যে তাঁরা প্রতারকদের ফাঁদে পা দেন, ঠিক বুঝতে পারি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন