school student

ছাত্রদের কলরব ফেরাতে হাঁটবেন প্রাক্তনীরা

প্রভাতফেরিতে বেরিয়ে খলিসাকোটা, শক্তিগড়, নলতা এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাক্তনীরা অভিভাবকদের বলবেন, তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানদের আবার ওই স্কুলে পাঠান।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১৬
Share:

প্রতীক্ষা: খাঁ খাঁ স্কুলবাড়িতে ছাত্র ফেরানোর তোড়জোড়। নিজস্ব চিত্র।

কমতে কমতে এখন পড়ুয়া হাতে গোনা। ক্লাসঘরে, পরীক্ষাগারের যন্ত্রপাতিতে পুরু ধুলোর আস্তরণ। সেই ধুলো ঝেড়ে আবার ছাত্রদের স্কুলমুখী করতে ঝাঁপাচ্ছেন দমদম খলিসাকোটা আদর্শ বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা। কাল, রবিবার আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসে স্কুলের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার শপথ নেবেন তাঁরা। ওই দিন প্রভাতফেরিতে বেরিয়ে খলিসাকোটা, শক্তিগড়, নলতা এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাক্তনীরা অভিভাবকদের বলবেন, তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানদের আবার ওই স্কুলে পাঠান।

Advertisement

প্রাক্তনীরা জানাচ্ছেন, ১৯৫৫ সালে তৈরি হওয়ার পরে এলাকায় জনপ্রিয় হয়েছিল স্কুলটি। বাংলাদেশ থেকে আসা বহু মানুষ যাঁরা খলিসাকোটা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের সন্তানেরা ছিলেন এখানকার পড়ুয়া। স্কুল চলাকালীন দূর থেকে শোনা যেত পড়ুয়াদের কোলাহল। এই স্কুলের বহু ছাত্র এখন স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকে স্কুলে কমতে শুরু করে ছাত্র। বর্তমানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র সংখ্যা ৫০-এর আশপাশে! পড়ুয়াদের দৈনিক উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশেরও কম।

Advertisement

স্কুলেরই এক প্রাক্তনী সমীরবরণ সাহা কাজ করতেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার উচ্চ পদে। সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘খলিসাকোটা স্কুলের বন্ধুরা আড্ডার ফাঁকে মাঝেমধ্যেই ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করতাম। স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে নিস্তব্ধ বাড়িটা দেখে মন খারাপ হত। এক দিন আলোচনা করে ঠিক করি, স্কুলে আবার ছাত্র ফেরাতে উদ্যোগী হলে কেমন হয়?’’

যদিও সমীরবাবুরা জানেন, এই উদ্যোগকে বাস্তব রূপ দেওয়া কত কঠিন। এক প্রাক্তনী স্বীকার করে নিয়েছেন, চার দিকে এখন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের রমরমা। অধিকাংশ অভিভাবক ছেলেমেয়েদের সেখানে ভর্তি করেন। কারণ তাঁদের ধারণা, পরিকাঠামোর দিক থেকে সরকারি স্কুল বহু যোজন পিছিয়ে।

সেই ধারণা ভাঙতে চান প্রাক্তনীরা। এমনই এক প্রাক্তনী সমীর সেনগুপ্ত জানালেন, খলিসাকোটা আদর্শ বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত যে কোনও খামতি নেই, তা মানুষকে বোঝানোই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। সমীরবাবু বলেন, “স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক আছেন। উপযুক্ত ল্যাবরেটরি, পাঠাগার, কনফারেন্স রুম আছে। অনেকে মনে করেন, সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি পড়ানোর ঘাটতি আছে। সেই ঘাটতিও পুষিয়ে দিতে আমাদেরই কয়েক জন বিনা বেতনে ছাত্রদের ইংরেজি শেখানোর ক্লাস এবং অন্যান্য ক্লাস নেবেন, এমন পরিকল্পনাও হয়েছে।”

যাঁরা খলিসাকোটা আদর্শ বিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পথ হাঁটবেন, তাঁরা তাঁদের সন্তানকে কি এই স্কুলে পাঠাবেন? কয়েক জন প্রাক্তনী জানান, তাঁদের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়েছেন। এখন তাঁদের নাতি-নাতনিদের স্কুলে যাওয়ার সময়। সমীরবরণবাবুর কথায়, “এমন অনেকে আছেন, যাঁদের পরিবারের দুই প্রজন্ম এই স্কুলে পড়েছে। তৃতীয় প্রজন্ম কেন পড়বে না?

স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “আমাদের স্কুলের পরিকাঠামো ভাল। পর্যাপ্ত শিক্ষক আছেন। শূন্য পদে নিয়োগের আর্জিও জানিয়েছি। সদর্থক ইচ্ছা কাজ করছে। শুধু দরকার প্রচার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন