যোদ্ধা: হিমাংশু এবং টুইঙ্কল কালিয়া। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রোগী। সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের কাউন্টারে রক্তের রিকুইজিশন স্লিপ জমা দিয়ে তাঁর বাড়ির লোককে শুনতে হল, দাতা ছাড়া রক্ত মিলবে না। রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শহর কলকাতার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগীর পরিজনেদের তখন অসহায় অবস্থা। অচেনা শহরে কোথায় রক্তদাতা পাবেন তাঁরা?
সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে এই ছবিটা চেনা। এমন পরিস্থিতিতে রোগীর পরিজনেদের জন্য মুশকিল আসান হতে পারেন রাজধানীর ‘অ্যাম্বুল্যান্স-ম্যান’। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, আমদাবাদ, জয়পুর, হরিয়ানা, পঞ্জাবের পরে কলকাতায় রক্তদাতাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাইছেন ‘অ্যাম্বুল্যান্স-ম্যান’ হিমাংশু কালিয়া। এই কাজে তাঁর সহযোদ্ধা স্ত্রী টুইঙ্কল কালিয়া।
২৭ বছর আগে পথ দুর্ঘটনার শিকার বাবার জন্য সময়ে রক্ত এবং অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে পারেননি হিমাংশু। আর কাউকে যাতে এমন পরিস্থিতির মধ্যে না পড়তে হয়, সে জন্য ২০০২ সালে বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চালু করেন পেশায় বিমা সংস্থার ওই কর্মী। ২০০৭ সালে সেই যাত্রায় শামিল হন স্ত্রী টুইঙ্কল। টুইঙ্কল নিজে অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। ভাল কাজের এই ধারা এখন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান দম্পতি। সেই সূত্রেই রক্তদাতাদের নেটওয়ার্ক তৈরির ভাবনা।
হিমাংশুর কথায়, ‘‘কলকাতায় আপাতত ৭০ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল তৈরি করা হয়েছে। শহরের অলিগলি সমীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা নাগরিকদের সচেতন করবেন। কাউকে সচেতন করার সময়ে তাঁকে রক্তদাতার নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার আর্জি জানাব। যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁদের জন্য হাসপাতালে হাজির হয়ে যাবেন সেই ব্যক্তিই।’’ কিন্তু ওই রক্তদাতার খোঁজ মিলবে কী করে? কলকাতায় প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর রঞ্জন দাশগুপ্ত জানান, এ কাজে প্রশাসনের সাহায্যের জন্য তাঁরা ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান। টুইঙ্কল জানান, সারা দেশে ১৫ লক্ষ রক্তদাতার ডিরেক্টরি বানাচ্ছেন তাঁরা।
জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘উদ্যোগ স্বাগত। কিন্তু স্বেচ্ছায় রক্তদানের আদর্শ ব্যাহত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। আসলে এখন সরকারি-বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলেই দাতা চাওয়ার জন্য এ ধরনের উদ্যোগের প্রয়োজন হচ্ছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তারা ভুলে যান, দাতা চাওয়া জাতীয় রক্তদান নীতির পরিপন্থী।’’