আমরি-মামলায় সাত বছরে শুনানি মাত্র এক জনের!

অভিযুক্তেরা বর্তমানে জামিনে মুক্ত। আলিপুর আদালত সূত্রে খবর, হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে ২০১৬ সালের জুনে শুরু হয় ওই মামলার বিচার।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫২
Share:

চলছে উদ্ধারকাজ। ফাইল চিত্র

২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর। মাঝ রাতে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতাল। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৯৩ জন রোগীর।
ওই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিসেবে শিল্পপতি শ্রবণ টোডি-সহ একাধিক ব্যক্তি গ্রেফতার হন। এফআইআর দায়ের হয় ১৬ জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করে চার্জশিট জমা দেয়। অভিযুক্তেরা বর্তমানে জামিনে মুক্ত। আলিপুর আদালত সূত্রে খবর, হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে ২০১৬ সালের জুনে শুরু হয় ওই মামলার বিচার। আলিপুরের তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ইন্দ্রনীল অধিকারীর এজলাসে শুনানি শুরু হয়। মামলায় সাক্ষী ৪৫০ জন। এত দিনে পার্থ রায় নামে হাসপাতালের এক স্থপতির সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এ ছাড়া এন আলম নামে হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। তিনি মাত্র এক দিন সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে আলিপুরের আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, মামলার শুনানি কবে শেষ হবে, তা নিয়ে। তাঁদের মতে, দু’জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করতেই যদি দু’বছর লেগে যায়, তা হলে সাক্ষ্যগ্রহণ কবে মিটবে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
আলিপুর আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মামলাটি স্পর্শকাতর। ৪৫০ সাক্ষী থাকা অস্বাভাবিক নয়। আলিপুর আদালতের সব বিচারকের এজলাসেই প্রচুর মামলা জমে রয়েছে। আমরি মামলার বিচার কোনও একটি বিশেষ আদালতে হলে ভাল হয়। তাতে বিচারের কাজে কিছুটা গতি আসতে পারে।’’ আলিপুরের আইনজীবীদের একাংশের কথায়, নিম্ন আদালতের রায় অভিযুক্তদের পক্ষে না গেলে তাঁরা হাইকোর্টে যেতে পারেন। হাইকোর্ট তাঁদের পক্ষে রায় না দিলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারেন। ফলে আমরি অগ্নি-কাণ্ডের মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আমরির আইনজীবী সেলিম রহমান অবশ্য বলছেন, ‘‘আদালতের নিয়ম মেনেই শুনানি হচ্ছে।’’
মামলার প্রতিটি শুনানির দিনে‌ বাঁকুড়ার জয়রামবাটির বাসিন্দা, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী ধনঞ্জয় পাল নিয়মিত আদালতে আসেন। মাথায় চোট পেয়ে তাঁর মেয়ে প্রজ্ঞাপিতা পাল (১৫) ভর্তি ছিল ওই হাসপাতালে। ধনঞ্জয়বাবু জানান, চিকিৎসকেরা মেয়েকে ১০ ডিসেম্বর ছুটিও দিয়েছিলেন। কিন্তু ৯ তারিখ রাতেই ওই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েকে তো ফিরে পাব না। কিন্তু দোষীদের শাস্তির আশা করতে পারি। কিন্তু মামলা কী ভাবে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারি না।’’ এক তদন্তকারী অফিসার জানান, মামলা শুরুর প্রথম দিকে মৃত রোগীদের অনেক আত্মীয়ই নিয়মিত আদালতে আসতেন। কিন্তু এখন ধনঞ্জয়বাবু ছাড়া আর কাউকে নিয়মিত দেখা যায় না বলে আইনজীবীরা জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন