স্ত্রীর মৃত্যুতে ধৃত ইঞ্জিনিয়ার

কর্মসূত্রে দশদ্রোণে থাকতেন। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, বধূ নির্যাতন, ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, ঘটনায় শুভঙ্করের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত ছিল। তাঁকে জেরা করে তাঁদের খোঁজ করছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

শুভঙ্কর সরকার

এক মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে মিলেছিল সুইসাইড নোট। প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হয়েছিল পুলিশের। যদিও ঘটনার কিছু দিন পরেই মৃতার পরিবার খুনের অভিযোগ করে। এমনকী, সুইসাইড নোটও মৃতার লেখা নয় বলে দাবি করা হয় পরিবারের তরফে। পরে ময়না-তদন্তের দেখা যায় মহিলাকে খুন করা হয়েছে। তার পর থেকেই মৃতার স্বামীর খোঁজ মিলছিল না। শুক্রবার ভুটান সীমান্ত থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে বাগুইআটি থানার পুলিশ। ধৃতের নাম শুভঙ্কর সরকার (৩২)। রবিবার তাঁকে বারাসত আদালতে তোলা হবে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, দশদ্রোণ এলাকার একটি ফ্ল্যাটবাড়ির চারতলায় গৃহবধূ মণিকা মণ্ডলের (২৫) অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তাঁর স্বামী শুভঙ্কর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার বানারহাট থানা এলাকার পূর্ব গয়েরকাটা এলাকায়। কর্মসূত্রে দশদ্রোণে থাকতেন। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, বধূ নির্যাতন, ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, ঘটনায় শুভঙ্করের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত ছিল। তাঁকে জেরা করে তাঁদের খোঁজ করছে পুলিশ।

সূত্রের খবর, ২০১৬-র জানুয়ারি মাসে পাঁচ নম্বর সেক্টরের নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সফ্‌টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শুভঙ্করের সঙ্গে বিয়ে হয় মণিকার। তার পরেই দশদ্রোণের ফ্ল্যাটটি কেনেন তিনি। ২৮ এপ্রিল সেই ফ্ল্যাটেই মণিকার ঝুলন্ত দেহ মেলে। তবে দেহের অবস্থান দেখে সন্দেহ তৈরি হয়। পুলিশ গিয়ে দেখে, মেঝেতে কাপড় পাতা, তার উপরে হাঁটু মোড়া অবস্থায় মণিকা। তাঁর গলার দড়িটি সিলিংয়ের সঙ্গে লাগানো। সূত্রের খবর, সুইসাইড নোটে মণিকা লিখেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন। কিন্তু দু’দিন পরে মণিকার পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, সুইসাইড নোট জাল। বিয়ের পর থেকেই অশান্তি চলছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। মণিকার উপরে নিয়মিত নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন তাঁরা। মণিকার বোন যূথিকা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার পরে প্রথম ফোনটি তিনিই পান। শুভঙ্করের ফোন থেকে এক অপরিচিত মহিলা তাঁকে জানান মণিকার মৃত্যুর খবর। তিনি বলেন স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে জ্ঞান হারিয়েছেন শুভঙ্করও। কিন্তু মণিকার পরিবারের প্রশ্ন, শুভঙ্করের ফোন লক করা থাকে। অপরিচিত এক জন সেই লক খুললেন কী করে? শুভঙ্করের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ মণিকার পরিবারের।

Advertisement

মণিকার পরিবারের সদস্যেরা তাঁর লেখা ডায়েরি-সহ অন্য নথি পুলিশের কাছে জমা করেন। হস্তরেখাবিদদের সাহায্যে জানা যায়, ওই সুইসাইড নোট মণিকার লেখা নয়। পাশাপাশি, ময়না-তদন্তের পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, গলায় ফাঁস লেগেই মৃত্যু হয়েছে মণিকার। কিন্তু তা খুন না আত্মহত্যা, নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এর পরেই তাঁর স্বামীর খোঁজ শুরু করে পুলিশ। কিন্তু তাঁর খোঁজ না মেলায় শুভঙ্করের পরিবার ও পরিচিতদের গতিবিধির উপরে নজরদারি শুরু হয়। সম্প্রতি বিশেষ সূত্রে পুলিশ খবর পায়, ভুটান সীমান্তে নাগরাকাটা থানা এলাকার চাংমারি চা বাগানের গেস্ট হাউসে রয়েছেন শুভঙ্কর। এর পরেই পুলিশ উত্তরবঙ্গে যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

এ দিন শুভঙ্করকে দশদ্রোণের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্রের খবর, মণিকার মৃত্যুর খবর পুলিশ পায় স্থানীয়দের থেকে। অথচ তাঁরা ঘটনাস্থলে শুভঙ্করকে দেখতে পেয়েছিলেন। কেন শুভঙ্কর পুলিশে জানাননি? এই প্রশ্নের জবাবে শুভঙ্কর জানিয়েছিলেন, তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। অথচ পুলিশ জানতে পেরেছে, শুভঙ্কর সেই রাতে শববাহী গাড়ি ডেকেছিলেন। তা ছাড়া শুভঙ্করকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার সময়ে ফ্ল্যাটের দরজা খোলা ছিল। তা জেনে সন্দেহ আরও পোক্ত হয়েছে পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন