Jessore Road

যশোর রোডের গাছ বাঁচাতে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি

যশোর রোডের ধারের ৩৫০টিরও বেশি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার উপরে হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল ২০১৮ সালে। পরে সেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৩ ০৬:০৭
Share:

গাছ বাঁচাতেই শুরু হয়েছে উদ্যোগ। নিজস্ব চিত্র।

যশোর রোড ও তার দু’পাশের গাছগুলিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি তুলল ‘যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি।’ পাশাপাশি, যশোর রোডের ধারের প্রাচীন গাছগুলির রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলেও দাবি উঠেছে।

Advertisement

শনিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে যশোর রোডের শতাব্দীপ্রাচীন গাছ বাঁচানোর আন্দোলন, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় ও কমিটির অবস্থান-পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়। যশোর রোডের গাছ বাঁচাতে এ দিন ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির কাছে জমায়েত হয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়।

গাছ বাঁচাও কমিটির পক্ষে অর্পিতা সাহা বলেন, ‘‘যশোর রোডের গাছগুলির ঐতিহাসিক এবং পরিবেশগত গুরুত্বকে মাথায় রেখে সমস্ত গাছ-সহ রাস্তাটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক। সরকার গাছের রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিক। গাছগুলি পরিবেশগত ভাবে উন্নত সম্পদ, যার প্রতিস্থাপন অসম্ভব।’’

Advertisement

যশোর রোডের ধারের ৩৫০টিরও বেশি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার উপরে হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল ২০১৮ সালে। পরে সেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর করা ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটার উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। সেই স্থগিতাদেশ দিনকয়েক আগে খারিজ করেছে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। গাছ বাঁচাও কমিটি জানিয়েছে, পাঁচ বছরের আইনি লড়াইয়ের শেষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে যে, যশোর রোডে ৩৫৬টি গাছ কেটে রেল ওভারব্রিজ করার পক্ষে ২০১৮ সালে কলকাতা হাই কোর্টের আদেশই বহাল রাখা হল।

কিন্তু কমিটির মতে, এর ফলে প্রাচীন গাছগুলির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত তারা মানছে না। কারণ, শুধু পরিবেশগত নয়, যশোর রোড দেশ ভাগের সময়ে উদ্বাস্তুদের লড়াইয়ের বহু ইতিহাস বহন করছে।

যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ থমকে থাকায় এই পথে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের পক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৬০০ বলে দাবি করেছেন তিনি। গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের অনুমতি পেলে গাছ-পিছু পাঁচটি করে গাছ লাগাতেও রাজ্য সরকার প্রস্তুত বলে আদালতকে জানান তিনি। তবে, এ বিষয়ে কমিটির দাবি, যানজটের জেরে প্রতিটি মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা করতে হবে রাজ্য সরকারকে। অর্পিতা বলেন, ‘‘যশোর রোডে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হেলমেটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করে দুর্ঘটনার হার কমাতে হবে।’’ আরও দাবি, যশোর রোডের উপরে চাপ কমাতে বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় সব ট্রেন ১২ বগির করতে হবে।

তবে যশোর রোডে গাছ কাটার সমর্থনে রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মতে, গাছের শুকনো ডাল ভেঙেও মৃত্যু বা জখম হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে অর্পিতা বলেন, ‘‘প্রশাসনিক গাফিলতিতে গাছের ডাল ভেঙে দুর্ঘটনায় যত জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’’ গাছ বাঁচাও কমিটির এই বক্তব্য প্রসঙ্গে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সবুজের পক্ষে। আমিও ব্যক্তিগত ভাবে চাই, যশোর রোডের একটিও গাছ যেন কাটা না হয়। কিন্তু আদালতের যদি কোনও নির্দেশ থাকে, তা হলে আমাদের মান্যতা দিতে হবে।’’ তাঁর প্রস্তাব, ‘‘এখন আধুনিক যন্ত্র এসেছে। একশো বছরের প্রাচীন গাছকে না কেটে সরিয়ে অন্যত্র বসানো যায়। কমিটির সদস্যদের বলব, এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে। আদালত নির্দেশ দিলে আমরা পদক্ষেপ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন