Two Bodies Recovered in Canal

‘কাজে যাচ্ছি’ বলে বেরোন, ফিরল দেহ! ‘শান্ত’ রোহিত কী ভাবে আনন্দপুরের খালে? বান্ধবী নিয়েও ধন্দে পরিবার

রোহিতের কাছে স্কুটার চালানো শিখতে সোমবার বাড়ি থেকে বার হয়েছিলেন রণিতা। তেমনটাই জানা গিয়েছে রণিতার পরিবার সূত্রে। তার পর থেকে খোঁজ মিলছিল না দু’জনের। এক দিন পর মঙ্গলবার দুপুরে নোনাডাঙা খাল থেকে উদ্ধার হয় তরুণ-তরুণীর দেহ।

Advertisement

সারমিন বেগম

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ১৮:৩৫
Share:

(বাঁ দিকে) রণিতা বৈদ্য। রোহিত আগরওয়াল (ডান দিকে) — ফাইল চিত্র।

কারও সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশা ছিল না। বাড়িতেও চুপচাপ, নিজের মতো থাকতেন। রোহিত আগরওয়াল নামে ১৯ বছরের সেই তরুণের দেহ উদ্ধার হয়েছে আনন্দপুরের খালে। ওই খালেই মিলেছে তাঁর পূর্ব পরিচিত বছর তেইশের রণিতা বৈদ্যর দেহও। কী ভাবে দু’জনের মৃত্যু হল, তা নিয়ে ধন্দ এখনও কাটেনি। শান্তশিষ্ট ছেলের হঠাৎ কী হয়ে গেল, এখনও বুঝেই উঠতে পারছে না রোহিতের পরিবার।

Advertisement

নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন রোহিত। মা-বাবা গত হয়েছেন আগেই। মাঝে দু’বছর মামার বাড়িতে থাকতেন। পরে দাদা-বৌদির সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। বৌদি প্রিয়ঙ্কা সাউ এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না, রোহিত আর নেই। প্রিয়ঙ্কার কথায়, ‘‘খুবই শান্ত, চাপা স্বভাবের ছেলে ছিল। বাড়িতে বিশেষ কথা বলত না। নিজের বিষয়েও বেশি কিছু বলত না। তবে কখনও কোনও কিছু নিয়ে ঝগড়া কিংবা অশান্তি করত না। আমাদের থেকেও বিশেষ কিছু চাইত না।’’

দাদার সঙ্গে রোহিতের বয়সের ফারাক প্রায় ১০ বছরের। ফলে দাদার সঙ্গে সে রকম সখ্য ছিল না। নিজের মতো বাড়ি ফিরতেন, খেতেন, ঘুমোতেন। কখনও দু’-একটা কথা বলতেন। তার পর ফের বেরিয়ে যেতেন কাজে। খাবার ডেলিভারি সংস্থায় কাজ করতেন রোহিত। সোমবার রাতে তিনি বাড়ি ফেরেননি। প্রথমে সন্দেহ হয়নি পরিবারের। কারণ, খাবার ডেলিভারির কাজে প্রায়ই মাঝরাত পর্যন্ত বাইরে থাকতেন তরুণ। কিন্তু সোমবার গভীর রাতেও রোহিত বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন সকলে। থানায় অভিযোগ করতে বেরোবেন, তার আগে রোহিতের খোঁজে উল্টে থানা থেকেই ফোন আসে। হতচকিত পরিবার জানায়, বাড়ি ফেরেননি তরুণ। তার ১২ ঘণ্টার মধ্যে খাল থেকে উদ্ধার হয় রোহিতের দেহ।

Advertisement

উত্তর পঞ্চান্নগ্রামের দু’কামরার ঘরের একটিতে থাকেন রোহিতের দাদা-বৌদি। অন্যটিতে রোহিত ও তাঁর মাসতুতো দাদা ববি সাউ থাকতেন। অথচ একই ঘরে থেকেও কখনও ভাইয়ের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানতেন না ববি। রণিতার সঙ্গে ভাইয়ের ঠিক কী সম্পর্ক ছিল, জানতেন না সে সবও। ববি বলেন, ‘‘মেয়েটিকে আগে দেখেছি। ওদের পাড়ায় খেলতে যেতাম আমরা। কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে বিশেষ কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, জানি না। রোহিত কখনও বাড়িতে এই নিয়ে কিছু বলেনি। কোনও কিছু নিয়ে মানসিক টানাপড়েনে ছিল কি না, তা-ও জানি না।’’ তা হলে ঠিক কী কারণে এ রকম সিদ্ধান্ত নিলেন তরুণ, এখনও ভেবে পাচ্ছেন না পরিজনেরা। রণিতাই বা সেখানে কী করছিলেন, ধোঁয়াশা কাটছে না।

সমাজমাধ্যমে তরুণ-তরুণীর একসঙ্গে ছবি। ছবি: সংগৃহীত।

রোহিতের কাছে স্কুটার চালানো শিখতে সোমবার বাড়ি থেকে বার হয়েছিলেন রণিতা। তেমনটাই জানা গিয়েছে তরুণীর পরিবার সূত্রে। তার পর থেকে খোঁজ মিলছিল না দু’জনের। এক দিন পর মঙ্গলবার দুপুরে নোনাডাঙা খাল থেকে উদ্ধার হয় তরুণ-তরুণীর দেহ। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, নোনাডাঙা খালের ধারে অদূরে স্কুটারে সওয়ার এক যুগল ঝগড়া করছিলেন। আচমকা তরুণী স্কুটার থেকে নেমে খালের দিকে ছুটে যান। তরুণও খালের পাড়ে স্কুটার দাঁড় করিয়ে তরুণীর পিছু নেন। এর কিছু ক্ষণ পরেই খালে ঝাঁপ দেওয়ার শব্দ!

রণিতার পরিবার জানিয়েছে, পাঁচ মাস আগে স্কুটার কিনেছিলেন রণিতা। এক তরুণের কাছে স্কুটার চালানো শিখতেন তিনি। সোমবারও তা শিখতে বেরিয়েই নিখোঁজ হয়ে যান বছর তেইশের তরুণী। তবে একই এলাকার বাসিন্দা রোহিত ও রণিতা যে পরস্পরকে চিনতেন, তা স্পষ্ট। সমাজমাধ্যমে দু’জনের একসঙ্গে একটি ছবিও রয়েছে। তবে সে সবের বিষয়ে কিছু জানতেন না রোহিতের পরিজনেরা। বৌদি প্রিয়াঙ্কা জানাচ্ছেন, রোহিত বাড়িতে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কখনও কিছু বলতেন না। পরিজনদের সঙ্গে সমাজমাধ্যমেও যুক্ত ছিলেন না তরুণ। ফলে রণিতার সঙ্গে যে তাঁর পরিচয় ছিল, তা জানতেন না কেউই। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা পরস্পরের পূর্বপরিচিত।

তা হলে ঠিক কী হয়েছিল সোমবার? তদন্তে নেমে ইতিমধ্যে স্থানীয় এক দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। তাতে দেখা গিয়েছে, খালের দিকে ছুটছিলেন রণিতা। পিছনে দৌড়োচ্ছিলেন রোহিত, এ টুকুই। তার পর ঠিক কী হয়েছিল, দু’জনেই খালে ঝাঁপ দিয়েছিলেন কি না, সে সব এখনও অজানা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement