এখানে আগেও এমন হয়েছে

২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে  স্কুলের এক অনুষ্ঠানের মহড়া দিতে স্কুলের সময়েই ছাত্রীদের বিভিন্ন অনুশীলন কেন্দ্রে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মহড়ার ফাঁকে বাসে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময়ে স্কুলের এক কর্মী ওই চার বছরের ছাত্রীর যৌন নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ উঠেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
Share:

ক্ষুব্ধ: শুক্রবার, জিডি বিড়লা স্কুলে এক অভিভাবক। —নিজস্ব চিত্র।

এ বারই প্রথম নয়। তিন বছর আগে রানিকুঠির জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে চার বছরের এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে অভিভাবকেরা দিনের পর দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। ক্ষোভ ছড়িয়েছিল ওই গোষ্ঠীর অন্য স্কুলেও। কর্তৃপক্ষ অবশ্য সেই ঘটনার কোনও যথার্থতা খুঁজে পাননি বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে স্কুলের এক অনুষ্ঠানের মহড়া দিতে স্কুলের সময়েই ছাত্রীদের বিভিন্ন অনুশীলন কেন্দ্রে বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মহড়ার ফাঁকে বাসে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময়ে স্কুলের এক কর্মী ওই চার বছরের ছাত্রীর যৌন নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময়ে অভিভাবকেরা অবিলম্বে স্কুলে সিসিটিভি বসানোর দাবি জানিয়েছিলেন। তা এখনও বসানো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন। সেই তদন্তে কেউই দোষী সাব্যস্ত হয়নি। শুক্রবার স্কুলের অধ্যক্ষ শর্মিলা নাথ জানিয়েছেন, ওই ঘটনার কোনও যথার্থতা তখন পাওয়া যায়নি।

ফের একই রকম ঘটনার অভিযোগ ওঠায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বেগ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষ আগের ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন। চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর মা কাকলি সমাদ্দার এ দিন জানান, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মেয়েকে আর এই স্কুলে রাখব কি না, এখন ভাবছি।’’ কলেজ শিক্ষিকা পাপিয়া চক্রবর্তীর মেয়ে এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাঁর দাবি, যদি মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষ, তবে মেয়েকে অন্যত্র ভর্তি করবেন তিনিও।

Advertisement

সব মিলিয়ে এ দিনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিভাবকদের একটা বড় অংশ দাবি তোলেন, স্কুলে যেন কোনও পুরুষ শিক্ষক, অ্যাটেন্ড্যান্ট, সাফাইকর্মী না থাকেন। শুক্রবার দুপুরে স্কুলের অধ্যক্ষাকে যখন ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ ওই দাবি জানাচ্ছেন, সেই সময়ে এক শিক্ষিকার বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন, ‘‘স্কুলে কোনও পুরু‌ষ শিক্ষক থাকবেন না? ’’ ওই স্কুলেরই এক ছাত্রীর বাবা তখন ক্ষোভে ফেটে পড়ে চিৎকার করে বলেন, ‘‘না, কোনও পুরুষ শিক্ষককেই স্কুলে রাখা যাবে না। আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তার তা হলে ঝুঁকি থেকে যাবে।’’

এ সবের মধ্যেই স্কুলের অধ্যক্ষার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন অভিভাবকদের একাংশ। সেখানে তাঁদের দাবি:

১) স্কুলে কোনও পুরুষ শিক্ষক, সাফাইকর্মী ও অ্যাটেন্ড্যান্ট রাখা চলবে না।

২) গোটা স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে।

৩) শৌচাগারে মহিলা অ্যাটেন্ড্যান্ট রাখতে হবে।

৪) চার বছরের ওই ছাত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে কী কী সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার ভাবে অভিভাবকদের জানাবেন।

৫) স্কুলে প্রাথমিক চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। অবিলম্বে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে এই স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পরেও স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে অভিভাবকেরা। তাঁদের অভিযোগ, তিন বছর আগেও ছাত্রীদের সুরক্ষার ত্রুটিবিচ্যুতি ধরা পড়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, তা প্রমাণ করল এ দিনের ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন