নাগেরবাজারে মৃত আরও এক

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শরৎবাবুর শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এ দিন দুপুরে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩৫
Share:

শোকার্ত: অজিত হালদারের পরিবার। আরজি কর হাসপাতালের মর্গের বাইরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দমদম নাগেরবাজারে কাজিপাড়ার বিস্ফোরণে আহত আরও এক জন রবিবার মারা গিয়েছেন। তাঁর নাম শরৎ শেঠি (৫০)। পেশায় রজক ওই ব্যক্তি আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই নিয়ে ওই বিস্ফোরণে তিন জনের মৃত্যু হল।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শরৎবাবুর শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এ দিন দুপুরে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ওড়িশার বাসিন্দা শরৎবাবু স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে রাষ্ট্রগুরু অ্যাভিনিউয়ে ভাড়া থাকতেন। ২ অক্টোবর যে-বন্ধ দোকানের শাটারের সামনে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার পাশে রুটির দোকানের বাইরে বেঞ্চে বসে ছিলেন তিনি। আচমকা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন রাস্তায়। শরৎবাবুর ভাই বাবুরাম শেঠি বলেন, ‘‘দাদার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বৌদিকে সামলানো যাচ্ছে না। ১৩ আর ১০ বছরের দুই মেয়ে এবং বছর সাতেকের ছেলেকে নিয়ে ছিল ওর সংসার। বিস্ফোরণে গোটা পরিবারটাই ভেসে গেল। ওরা তো কারও ক্ষতি করেনি!’’

প্রাণহানি যত বাড়ছে, উৎসবের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির অসহায়তা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। আহত ফল বিক্রেতা অজিত হালদার (৩৮)-এর পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকার চেক দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, শনিবার অজিতবাবুর মৃত্যুর পরে ওই চেক আদৌ কোনও কাজে আসবে কি? বিস্ফোরণে মৃতের তালিকায় ওই যুবকের নাম ওঠায় তাঁর পরিবার কি বাড়তি এ বার ক্ষতিপূরণ পাবে না? জবাব মিলছে না। সব মিলিয়ে অজিতবাবুর মৃত্যুতে অথৈ জলে তাঁর পরিবার। একই প্রশ্ন শরৎবাবুর আত্মীয়দেরও।

Advertisement

২ অক্টোবর সকালে কাজিপাড়ার বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় আট বছরের বালক, অর্জুনপুরের বাসিন্দা বিভাস ওরফে বিল্টু ঘোষের। অজিতবাবু-সহ ন’জন আহত হন। আরজি করে চিকিৎসাধীন অজিতবাবুর মৃত্যু হয় শনিবার রাতে। তাঁর স্ত্রী শেফালি হালদার রবিবার বলেন, ‘‘ব্যবসা করতে গিয়ে বেঘোরে স্বামীর প্রাণ গেল। ওর রোজগারই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন চলবে কী করে?’’ অজিতবাবুর দাদা অসিত হালদারের প্রশ্ন, সরকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকার যে-চেক দিয়েছে, সেটা তো তাঁর ভাইয়ের নামে ছিল। ভাইয়ের মৃত্যুর পরে ওই চেক কাজে আসবে কি? ‘‘রোজগারের একটা ব্যবস্থা হলে পরিবারটা বাঁচত,’’ বলেন অসিতবাবু। শেফালিদেবী জানান, রোজগারের রাস্তা করে দেওয়ার আর্জি জানাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান।

এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, ধূপকাঠি বিক্রেতা শুভম দে-র সিটি স্ক্যান হয়েছে। তাঁর কাকা পিন্টু দে বলেন, ‘‘বারবার মাথায় যন্ত্রণার কথা বলছে ও। তার মধ্যেই জ্বর, দুশ্চিন্তায় আছি।’’ ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিভাসের মা সীতা ঘোষকে ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকেরা আজ, সোমবার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। নাগেরবাজারের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সঙ্গীতা প্রসাদের শারীরিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক। আজ, সোমবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পুরপ্রধান পাচু রায় বলেন, ‘‘একের পর এক মৃত্যুর খবরে আমি মর্মাহত। নিরীহ গরিব মানুষগুলোর এই পরিণতি মেনে নিতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন