মঙ্গলবার কলকাতায় বামেদের মিছিল। —ফেসবুক।
সোমবারের মতো কলকাতার রাজপথে যুদ্ধবিরোধী মিছিলে ‘হামলা’র পুনরাবৃত্তি হল না মঙ্গলবার। বামফ্রন্ট ও ফ্রন্ট বহির্ভূত বিভিন্ন বাম দলের ডাকা শান্তি ও সম্প্রীতি মিছিল শেষ হল শান্তিতেই।
সোমবার যুদ্ধবিরোধী শান্তিমিছিলের ডাক দিয়েছিল নাগরিক সমাজের বেশ কয়েকজন পরিচিত জনের পক্ষ থেকে। তাতে জুড়ে ছিলেন বিভিন্ন বাম, অতিবাম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। সেই মিছিলেই বাধা দিতে গিয়েছিল বিজেপি। তবে দলীয় পতাকা নিয়ে নয়। কলকাতার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের নেতৃত্বে জাতীয় পতাকা নিয়েই ‘দেশদ্রোহিতা’র অভিযোগে শান্তিমিছিলে বাধা দেওয়ায় অশান্তি পেকেছিল মৌলালি মোড়ে। তেমন কোনও বিরোধিতা মঙ্গলবারের মিছিলের বিরুদ্ধে দেখা যায়নি।
বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ মিছিল শুরু হয় ধর্মতলার লেনিন মূর্তির সামনে থেকে। লেনিন সরণি হয়ে মিছিল গিয়ে শেষ হয় শিয়ালদহে। মিছিলে পুলিশের নিরাপত্তা ছিল। কোনও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। তবে মিছিল যখন সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যারের খানিকটা আগে, তখন দেখা যায় হিন্দ সিনেমার দিক থেকে বিজেপির পতাকা হাতে কয়েক জন যুবক, কয়েকটি মোটরসাইকেলে চেপে যাচ্ছেন। তা দেখতে পেয়েই মিছিলের গতি সামান্য শ্লথ করে দেয় পুলিশ। যদিও মোটরসাইকেলে থাকা যুবকেরা সেখানে দাঁড়াননি।
সোমবার সজলের নেতৃত্বে মিছিলের বিরোধিতা হয়। মঙ্গলবারের মিছিল সম্পর্কে প্রশ্ন করায় সজল জানান, এ দিন তাঁদের কোনও কর্মসূচি ছিল না। ফলে যাওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। সোমবার মৌলালিতে জমায়েত, তার পর সেখান থেকে মিছিল— এই ছিল কর্মসূচি। মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা অমিতাভ ভট্টাচার্য জানান, প্রশাসনকে আগেই এই কর্মসূচি নিয়ে অবহিত করা হয়েছিল। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দু’-তিন ধরেই সমাজমাধ্যমে চাপানউতোর চলছিল। বিজেপির একটা অংশের পক্ষ থেকে সরাসরি বলা হয়, এই ধরনের ‘দেশবিরোধী কর্মসূচি’র বিরোধিতা তারা সামনাসামনি করবে। উদ্যোক্তাদের দাবি, মিছিল শুরু হওয়ার আগেই সজলের নেতৃত্বে একদল লোক হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে এসে তাঁদের উপর চড়াও হন। এ-ও অভিযোগ, দেশদ্রোহী দাবি তুলে তাঁদের লক্ষ্য করে ডিজেল, মোবিল ছোড়া হয়েছে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মীরাতুন নাহার, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্টেরা। সজল যদিও মোবিল, ডিজ়েল বা এমন কিছু ছোড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তবে বলেছিলেন, ‘‘আমরা কোনও পেট্রল-ডিজেল ছুড়িনি। তবে দেশবিরোধী কথা কেউ যদি বলেন, তবে তার দাওয়াই যেমন হয় তেমনই দেওয়া হবে।’’
মঙ্গলবারের মিছিলে বামফ্রন্টভুক্ত দলগুলির বাইরেও এসইউসি, সিআইএমএল (লিবারেশন)-এর মতো দলগুলি ছিল। মিছিলে এসইউসির জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও মিছিল শুরুর সময়ে মূল ব্যানারের সামনে কারা থাকবেন, তা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সেই সময়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে ঘোষণা করতে হয়, সামনে সবার জায়গা হবে না। দু’টি-তিনটি সারিতে দাঁড়াতে হবে। তাঁর ঘোষণার পর হুড়োহুড়ি থামে।