সেতুর নীচে বিপদের আঁতুড়

কোথাও আগুন জ্বেলে রান্না হচ্ছে স্টোভে বা গ্যাসে। তার পাশেই ডাঁই করে রাখা থামোর্কলের প্যাকিং বাক্স, পিসবোর্ডের কার্টন, প্লাস্টিক। কোথাও বসানো হয়েছে থার্মোকলের বাক্স ভাঙার যন্ত্র।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০০:৫০
Share:

একেবারে আক্ষরিক অর্থেই যেন বিপদের আঁতুড়ঘর!

Advertisement

কোথাও আগুন জ্বেলে রান্না হচ্ছে স্টোভে বা গ্যাসে। তার পাশেই ডাঁই করে রাখা থামোর্কলের প্যাকিং বাক্স, পিসবোর্ডের কার্টন, প্লাস্টিক। কোথাও বসানো হয়েছে থার্মোকলের বাক্স ভাঙার যন্ত্র। সেতুর নীচে সশব্দে চলছে বরফের চাঁই গুড়ো করার যন্ত্রও। চারদিকে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। এরই মধ্যে গজিয়ে উঠেছে মাছের আড়তদারদের অফিস-সহ অন্য ব্যবসা। এমনই ছবি দেখা গেল হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর নীচে।

এই সেতুর গোলাবাড়ির দিকে, দক্ষিণ প্রান্তে নামার সময়ে হাওড়া মাছ বাজারের সেতুর ঢালের নীচে রয়েছে দাহ্য বস্তুতে ঠাসা ব্যবসার কেন্দ্র। ব্যবসায়ীদের দাবি, বাম আমলে হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (এইচআইটি) যখন সেতুর দেখভালের দায়িত্ব ছিল, তখনই রীতিমতো ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে বসানো হয়েছিল সেতুর নীচে প্রায় ৫০টি স্টল। বর্তমানে সেতুর দায়িত্ব রয়েছে কেএমডিএ-র উপরে। কেএমডিএ-র অবশ্য দাবি, ওই স্টলগুলি বেআইনি। জায়গা দখল করে সেতুর নীচে বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।

Advertisement

যদিও নন্দকিশোর সিংহ নামে সেতুর নীচের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এখানে এক একটি স্টল চার জনকে বিক্রি করা হয়েছে। আমাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে। কিন্তু বহু দোকানদারের তা নেই।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেএমডিএ-র এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘যে দল যখন শাসন ক্ষমতায় থাকে তাঁরাই মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিয়ে সেতুর নীচে এই সব স্টল বসানোর অনুমতি দিয়ে থাকে। কেএমডিএ কাউকে বসায়নি। পুলিশ বা স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত কড়া পদক্ষেপ না করলে যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’

কিন্তু সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তো কেএমডিএ-র? কেএমডিএ-র ওই কর্তা বলেন, ‘‘আমরা বারবার বিষয়টি উপর মহলে জানিয়েছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’

মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে নড়ে বসেছিল প্রশাসন। কলকাতার কয়েকটি সেতুর পাশাপাশি, বঙ্কিম সেতুরও স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। বিভিন্ন সেতুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইতিমধ্যেই হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে এই সেতুও। সেই পরীক্ষায় উঠে এসেছে রাজ্যের দুর্বল সেতুর তালিকায় হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর নাম। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেতুর নীচে দখল করে চলা বিপজ্জনক ব্যবসা বন্ধ হয়নি।

হাওড়া পাইকারি মাছবাজার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, ‘‘এটা ঠিকই, সেতুর নীচে বিপজ্জনক ভাবে নানা দাহ্য বস্তু রাখা হচ্ছে। তবে সেতুর নীচে সব ক’টি স্টলই যে বেআইনি, সে কথা ঠিক নয়। স্টলগুলির অধিকাংশ অনেক আগে থেকেই সরকার অনুমোদন দিয়েছে। তবে কিছু স্টল অবশ্যই বেআইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন