হাসপাতালে সুজয় ঘরামি। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
সারা রাত ধরে ডিউটি করার পরে সকালের দিকে চোখটা জড়িয়ে এসেছিল তাঁর। আর কিছু মনে নেই। ঘণ্টাখানেক পরে যখন চোখ খুললেন, তখন তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যালের শয্যায়। সোমবার, দুর্ঘটনার পরের দিন নিজেই এ কথা জানান অ্যাপ-ক্যাব চালক সুজয় ঘরামি। বলেন, ‘‘জ্ঞান ফিরতে বুঝলাম, কত বড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছি।’’ সুজয় এখনও ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
রবিবার সকালের পথ দুর্ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যুতে কার্যত নিজেকেই দায়ী করছেন হরিদেবপুর থানার কবরডাঙার বাসিন্দা সুজয়। বললেন, ‘‘রাত সাড়ে আটটা থেকে সকাল সা়ড়ে আটটা পর্যন্ত আমার ডিউটি। রবিবার শিবপুরের আইআইইএসটি থেকে বুকিং পাই। ছ’টা নাগাদ চার ছাত্রকে নিয়ে রাজারহাটের দিকে রওনা দিই। মা উড়ালপুল থেকে নামতেই চোখটা বুজে এসেছিল। তার পরেই...।’’
গাড়ি চালাচ্ছেন বছর চারেক। অ্যাপ-ক্যাব দেড় বছর। বাবা-মা আর দুই বোনকে নিয়ে কবরডাঙার ভাড়া বাড়িতে থাকেন। পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে। হাসপাতালের সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুজয়ের অবস্থা স্থিতিশীল।’’ তবে শরীরে অসহ্য ব্যথা। ওঠার ক্ষমতা নেই।
এ দিন সুজয় বলেন, ‘‘আমি সায়ন্তনের বাবা-মা, পরিবার ও বাকি তিন জনের কাছে ক্ষমা চাইছি। ভবিষ্যতে যাতে এমন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’’ পুলিশ সুজয়ের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো-সহ অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর ধারা যুক্ত করেছে।
আহত আর এক ছাত্র সুদাম পাণ্ডা দুর্ঘটনার জন্য চালককেই দায়ী করেছেন। তিনি বাইপাসের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর কোমরের হাড় ভাঙায় অস্ত্রোপচার হয়েছে। অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে বেশ কয়েক দিন তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সুদাম বলেন, ‘‘শিবপুর থেকেই গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। আমাদের হাতে সময় ছিল। তাই চালককে সাবধানে চালাতে বলি। তা সত্ত্বেও এই কাণ্ড ঘটে গেল।’’
ওই অ্যাপ-ক্যাবে থাকা বাকি দুই ছাত্র, মহম্মদ পারভেজ ও শুভদীপ প্রধান এখনও আতঙ্কে। প্রত্যেকেরই কাউন্সেলিং করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।