সৌমেন কয়াল
প্রাক্তন প্রেমিকাকে খুন করে একেবারেই অনুতপ্ত নয় সোনারপুরের গুলি-কাণ্ডে ধৃত যুবক। বৃহস্পতিবার এমনই দাবি করলেন পুলিশকর্তারা। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় সৌমেন কয়াল নামে ওই যুবক স্বীকার করেছে, প্রেমিকা পূজা মহাজনকে (২১) হারানোর আক্রোশ থেকেই তাঁকে খুন করেছে সে। পুলিশ জানায়, পূজার পারিবারিক সম্পত্তির দিকেও নজর ছিল সৌমেনের। তাই সে অন্য কারও সঙ্গে নিজের প্রাক্তন প্রেমিকার ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারেনি বলে দাবি পুলিশকর্তাদের।
গত মঙ্গলবার রাতে সোনারপুর থানার ঘোষপাড়ায় পূজাকে মাথার পিছনে গুলি করা হয়। বুধবার রাতে হাসপাতালে মৃত্যু হয় পূজার। ওই খুনের ঘটনায় পূজার প্রাক্তন প্রেমিক সৌমেন ও তার বন্ধু সুকুমার দে-কে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারীদের বক্তব্য, পূজার বাবা সাজু মহাজন মারফত ওই তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল পেশায় ফিজিয়োথেরাপিস্ট সৌমেনের। সাজু মহাজন ওই এলাকার জমির কারবারি। সৌমেনও নিজের কাজের পাশাপাশি জমির দালালি করত বলে জেনেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের কথায়, পূজা সাজুর একমাত্র সন্তান। ফলে পূজাকে বিয়ে করে সাজুর সম্পত্তির দখলদার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল সৌমেন। কারণ, জমি ব্যবসায়ী সাজু কোটিপতি। যদিও সম্প্রতি ৩৪ লক্ষ টাকা প্রতারণার মামলায় সাজু এখন জেলে রয়েছে। পুলিশ জেনেছে, সাজুর বেনামে বেশ কয়েক লক্ষ টাকার জমি রয়েছে। ওই জমির হদিসও ছিল সৌমেনের কাছে।
পুলিশের দাবি, জেরায় সৌমেন জানিয়েছে, পূজার সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। সৌমেন পূজার মা হ্যাপিকে ‘মা’ বলেই ডাকত। তদন্তকারীদের সৌমেন জানিয়েছে, গত অক্টোবরে পূজা সৌমেনকে জানিয়ে দেন, তার সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক শেষ করছেন তিনি। অন্য এক যুবকের সঙ্গে পূজার ঘনিষ্ঠতা বাড়ার খবরও পায় সৌমেন। এর পরে কয়েক বার পূজাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল সৌমেন। এমনকি, পূজার মা হ্যাপির পায়ে ধরেছিল। কিন্তু হ্যাপি জানিয়েছিলেন, মেয়ে না চাইলে তিনি কিছুই করতে পারবেন না।
তদন্তকারীদের কথায়, গত ডিসেম্বরেই পূজাকে খুনের ছক কষে সৌমেন। ক্যানিং থানা এলাকা থেকে জানুয়ারি মাসের প্রথমে ছ’হাজার টাকা দিয়ে একটি ওয়ান শটার পিস্তল কেনে সে। সঙ্গে দু’টি কার্তুজ। এর পরেই বন্ধু সুকুমারকে খুনের পরিকল্পনার কথা জানায় সে। খুনের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই পূজার বাড়ির গলির কাছে দু’জনে মোটরবাইক নিয়ে ঘোরাফেরা করত। সাধারণত আটটা থেকে সাড়ে আটটা মধ্যে বাড়ি ফিরতেন পূজা। সেই সময়েই তাঁকে গুলি করার পরিকল্পনা করা হয়। সুকুমার মোটরসাইকেল চালাত আর সৌমেন ওয়ান-শটার পিস্তল রুমাল দিয়ে মুড়ে হাতে রাখত। সৌমেনকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, বেশ কয়েক দিন পূজাকে মারার চেষ্টা করেছিল তারা। কিন্তু আশপাশে লোক এসে যাওয়ায় আর হয়নি। মঙ্গলবার পূজাদের গলির কাছে একটি ক্লাবে মিটিং চলছিল। পাড়ার সবাই সেখানেই ছিলেন। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে পূজাকে গুলি করা হয় বলে জানায় পুলিশ। সৌমেন পুলিশকে জানিয়েছে, ওই রাতেও পূজাকে তার কাছে ফিরে আসার জন্য বলে সে। পূজা রাজি হননি। তার পরেই ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে তরুণীর মাথার পিছনে গুলি চালায় সে। পূজা মাটিতে পড়ে যেতেই মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরে যায় সৌমেন। পিস্তলটি বাড়ির পাশের একটি ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়। খুনের সময়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।