—ফাইল চিত্র।
সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসানোর জন্য আসাদুদ্দিন ওয়েইসি-র দল এই রাজ্যে ভোট লড়তে চাওয়ায়, আখেরে কার ‘স্বার্থ’ রক্ষা হবে, রাজনৈতিক মহলে এখন এই প্রশ্ন সামনে আসতে শুরু করেছে। তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস— সকলেরই এ ব্যাপারে কার্যত এক সুর। তাঁদের অভিযোগ, এরা আসলে বিজেপির বি-টিম হিসেবে কাজ করতে নেমেছে। বিজেপির অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রথীন বসু বলেন, ‘‘নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধীরা এ সব ভিত্তিহীন প্রচার করছে। এমআইএম নিজেদের মতো লড়ছে, বিজেপি নিজেদের মতো।’’
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের ভোট-পরিসংখ্যান বিচার করলে দেখা যাবে, সংখ্যালঘু প্রধান এলাকায় তৃণমূল ভাল ফল করেছে। কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দুই বিধানসভা আসন সিতাই ও শীতলখুচিতে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। উত্তর দিনাজপুরে ৯টি বিধানসভা আসনের ৫টিতে এগিয়েছিল তারা, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৬টি আসনের ৩টিতে। মালদহে কংগ্রেস ভোট
কাটা সত্ত্বেও তৃণমূল ২টি আসনে এগিয়ে ছিল।
জেলার সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটের পর থেকেই এই জেলাগুলিতে সক্রিয় হচ্ছে এমআইএম। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির বি-টিম হয়েই ভোটে লড়ছে এমআইএম। তৃণমূল যুব’র কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘এমআইএম বিজেপিরই একটি অংশ। সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করে দেওয়া লক্ষ্য ওদের।’’ উত্তর দিনাজপুরের দুই তৃণমূল বিধায়ক, গোয়ালপোখরের গোলাম রব্বানি এবং ইসলামপুরের আব্দুল করিম চৌধুরী মুখে বলছেন, এমআইএমের মতো সাম্প্রদায়িক দলের জায়গা নেই পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু বিহার ভোটের ফল বার হওয়ার পরে ইসলামপুর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এত দিনেও এই এলাকায় কোনও উর্দু কলেজ নেই কেন? এই ধরনের প্রশ্নকেই তৃণমূলের পক্ষে অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ওয়েইসির দল যে বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে, সেটা বলছেন বাম, কংগ্রেসের নেতারাও। উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার বিধায়ক, ফব-র আলি ইমরান রমজ বলেন, ‘‘ওয়েইসির দল বিজেপির বি-টিম বলে শুনছি। সেই প্রসঙ্গে না গেলেও এটা স্পষ্ট, তাদের জন্য বিজেপি সুবিধা পাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, যে সব আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত রয়েছে, সেখানে এক শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট কাটলেও তৃণমূল, বাম ও কংগ্রেস বিপাকে পড়বে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে ওয়েইসি-কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়েছে, তার পিছনে কী উদ্দেশ্য আছে, দেখতে হবে। মালদহের সুজাপুরের বিধায়ক, কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী বলেন, ‘‘ছোট দল হয়েও বিভিন্ন রাজ্যে ওরা কী ভাবে প্রার্থী দিচ্ছে, সেটা প্রশ্ন। বিজেপির সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া আছে বলেই মানুষ বলছে। উদ্দেশ্য, বিজেপি বিরোধী দলগুলোর সংখ্যালঘু ভোটটা ভাগ করে দিচ্ছে তারা।’’
যদিও এই অভিযোগ ওয়েইসি নিজে বারবার খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য সংখ্যালঘুদের ন্যায়ের জন্য লড়াই। পশ্চিমবঙ্গে দলের দায়িত্বে থাক সৈয়দ জামিরুল হাসান বলেন, ‘‘আমাদের ৯৪টি আসন দিন তৃণমূল নেতৃত্ব। তা হলে আমরা তাঁদের সঙ্গে দোস্তি করে ভোটে লড়ব। না হলে নিজেদের শক্তিতেই ভোটে থাকব আমরা।’’