এটিএমে ‘স্কিমার’ লাগিয়েই প্রতারণা, পুলিশের হাতে এল ফুটেজ!

সকাল হতেই ফের চারটি এসএমএস। আবার উধাও ৪০ হাজার। প্রশান্ত নিজে পুলিশ কর্মী। তাই আর দেরি না করে ছুটলেন লালবাজারে। জানতে পারলেন, দিল্লি থেকে মোট ৮০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। ঘটনাটি গত মাসের ২২ জুলাই।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ১৪:৫১
Share:

আশঙ্কাই সত্যি হল! কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ল সাইবার অপরাধীদের কীর্তি। তাতে দেখা যাচ্ছে, এক যুবক ‘কার্ড’ ঢোকানোর জায়গায় স্কিমার মেশিন লাগাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ‘পিন প্যাড’-এর ঠিক ওপরে লাগানো হচ্ছে গোপন ক্যামেরাও।

Advertisement

ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনায় গঠিত স্পেশাল ইভেস্টিগেশন টিম (সিট) এখন ওই যুবকের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। লালবাজার সূত্রে খবর, গত কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনামাফিক এটিএমগুলিতে এই ধরনের স্কিমার মেশিন লাগিয়েছে অপরাধীরা। এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে একটি ‘নাইজেরিয়ান গ্যাং’। দিল্লি থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হলেও, কলকাতাতে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় ছিল।

আসলে দলবল নিয়ে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে ব্যাঙ্ক ডাকাতির দিন চলে গিয়েছে। টাকা লুট করার জন্য বন্দুকেরও দরকার পড়ে না। ‘স্কিমার’ নামক একটি ছোট্ট যন্ত্রই যথেষ্ট। এটিএমে ‘কার্ড’ ঢোকানোর মুখে লাগিয়ে দিলেই হল। আপনার ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে, চোখের পলকে জেনে যাবে সাইবার অপরাধীরা। দ্রুত অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাবে কষ্টার্জিত অর্থ!

Advertisement

আশ্চর্যের বিষয় হল, এমন একটি বিপজ্জনক যন্ত্র খুব সহজেই চলে যাচ্ছে অপরাধীদের কাছে। এখন অনলাইনে পণ্য বিক্রয় সাইটগুলিতে দেদার বিকোচ্ছে এই স্কিমার মেশিন! যেমন টাকা, তেমন উন্নতমানের স্কিমার।

এমনই একটি সাইটে ভারতীয় মুদ্রায় ৮ থেকে ১০ হাজারে পাওয়া যাচ্ছে এই যন্ত্র। আরেকটু ট্যাঁকের কড়ি খসালে আরও আধুনিক স্কিমার মিলবে। আরেকটি সাইটে ২০ হাজার টাকায় ব্লুটুথ-সহ স্কিমারের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। এটিএমে কার্ড ঢোকানোর মুখে এই স্কিমারটি লাগিয়ে দিলে, সঙ্গে সঙ্গে কার্ড লুকোনো সব তথ্য চলে যাবে সাইবার অপরাধীদের কাছে।

আরও পড়ুন: এ বার অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক থেকেও টাকা গায়েব! ৫০ হাজার টাকা উধাও রেডিও জকি নীলাঞ্জনার

ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং-এর ডিরেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “বিদেশি অন-লাইনে সাইটগুলোতে এই ধরনের যন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। হয়ত হাত ঘুরে এখানেও সেই যন্ত্র চলে আসছে। যে সব এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী নেই সেখান থেকে টাকা তোলাই উচিত নয়।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গত সাত দিনে কলকাতার ৭৬ জন গ্রাহকের মোট ২০ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ জানতে পেরেছে স্কিমিং পদ্ধতিতেই টাকা হাতিয়েছে অপরাধীরা। তা-ও আবার দিল্লিতে বসে। পরিকল্পনা মাফিক, আগে থেকেই কলকাতার এটিএম মেশিনে এই যন্ত্র বসানো হয়। এখনও পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। তবে গোয়েন্দাদের অনুমান কলকাতাতেও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে অপরাধীরা।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল (অপরাধ দমন) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, "কোন কোন অনলাইন সাইটে স্কিমার মেশিন বিক্রি হচ্ছে তা ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা ওই স্কিমার মেশিন কিনে বেআইনি ভাবে কাজে লাগাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" এর পাশপাশি খোলা বাজারেও এই যন্ত্র বিকোচ্ছে কি না, তারও খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এটিএম জালিয়াতির ঘটনায় কানাড়া ব্যাঙ্কের এগারো জন পদস্থ অফিসারেরই টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার আরও দু'টি নতুন অভিযোগ এসেছে। এই দু'টি ঘটনাতেও দিল্লি থেকে টাকা তোলা হয়েছে।

কী এই স্কিমিং পদ্ধতি ?

তথ্য চুরির জন্য স্কিমার যন্ত্রটি এটিএম মেশিন কার্ড প্রবেশ করানোর মুখেই বাসানো থাকে। গ্রাহক বুঝতেও পারেন না। কার্ড ঢোকানোর পরই সব সংরক্ষিত হয় স্কিমার যন্ত্রে। আপনার ব্যাঙ্কে কত টাকা রয়েছে, তাও সঙ্গে সঙ্গে জানা যায়। পরে সেই তথ্যের ভিত্তিতে বানানো হয় একটি ‘ক্লোন এটিএম কার্ড’। সেই কার্ড এটিএমে ঢুকিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকেই তুলে নেওয়া হয় টাকা। এ ভাবেই দেশ-বিদেশ চলছে স্কিমিং পদ্ধতিতে এটিএম জালিয়াতি। তাই এখন এটিএমতে কিয়স্কে অ্যান্টি স্কিমিং মেশিন বসানোর পক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন: ১০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত পাবেন এটিএম জালিয়াতির শিকার হওয়া গ্রাহকরা

‘ফেক পিন প্যাড’

এটিএম মেশিনে অনেক সময় ফেক ‘পিন প্যাড’ লাগানো থাকে। অর্থাৎ এটিএমের আসল পিন প্যাডের ওপরে আরেকটি নকল পিন প্যাড। আপনি পিন নম্বর দিলেই তাতে ছাপ থেকে যায়। পরে সেটি খুলে নেয় সাইবার অপরাধীরা।

আবার অনেক সময় পিন প্যাডের ঠিক ওপরে একটি গোপন ক্যামেরা লাগানো থাকে। আপনি যখন পিন নম্বর দিচ্ছেন, তখন সেটি রেকর্ড হয়। পরে সেই পিন নম্বরের মাধ্যমে টাকা হাতানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন