রবীন্দ্র সদন

অন্ধকারে ইঁদুর-দৌড়, আসনে আতঙ্কে দর্শক

রবীন্দ্র সদনে চলছে পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠান। দর্শকাসনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরও এক দল ‘বিশেষ অতিথি’। নিমন্ত্রণপত্র ছাড়াই। দর্শকেরা কেউ পা তুলে বসে, কেউ বা ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন। আর তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে সগৌরবে। রবীন্দ্র সদন তাদের কাছে মুক্তমঞ্চ।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৬
Share:

রবীন্দ্র সদনে চলছে পশ্চিমবঙ্গ উর্দু অ্যাকাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠান। দর্শকাসনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরও এক দল ‘বিশেষ অতিথি’। নিমন্ত্রণপত্র ছাড়াই। দর্শকেরা কেউ পা তুলে বসে, কেউ বা ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন। আর তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে সগৌরবে। রবীন্দ্র সদন তাদের কাছে মুক্তমঞ্চ।

Advertisement

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি মৌলানা আবুল কালাম আজাদের ৫৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান চলছিল। গুরুগম্ভীর আলোচনার ফাঁকেই হঠাৎ দর্শকাসনের তৃতীয় সারি থেকে আর্তনাদ, ‘ও মা গো!’। ব্যাপারটা তখনও ঠিক পরিষ্কার হয়নি। পরের মুহূর্তেই ফের চিৎকার প্রমীলা কণ্ঠে, ‘‘ইঁদুর, ইঁদুর! আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল যে!’’ পাশ থেকে আর এক মহিলা কণ্ঠে সংযোজন, ‘‘এ মা, রবীন্দ্র সদনেও ইঁদুর!’’

আলোচনা তখন মাথায় উঠেছে। শ্রোতাদের অধিকাংশেরই নজর তখন নিজেদের পায়ের দিকে। কিন্তু ইঁদুর আসছে কোথা থেকে? দেখা গেল, উৎস মঞ্চের নীচেই। নীল রঙা কাপড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে বড় বড় ধূসর রঙের ইঁদুর। একটা-দু’টো নয়, অসংখ্য। নানা আকারের।

Advertisement

অনুষ্ঠান শুরুর সময়ে চারপাশে যথেষ্ট আলো ছিল, তাদের উৎপাতও তখন একটু কম। কিন্তু টম অল্টারের নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার আগে যেই একে একে প্রেক্ষাগৃহের আলো নিভতে শুরু করল, ততই সংখ্যা বাড়তে লাগল মূষিক-বাহিনীর। মানুষের উপস্থিতির তোয়াক্কাই নেই। হলের অন্ধকার যত গাঢ় হচ্ছে, ততই দাপট বাড়ছে তাদের। অনাহূত এই অতিথিদের ঠেকানোর কেউই নেই। আসলে অতিথি নয়, রবীন্দ্র সদনেরই অস্থায়ী বাসিন্দা ওরা।

কিন্তু রবীন্দ্র সদনের মতো প্রেক্ষাগৃহে ইঁদুর কেন? তবে কি দেখভাল বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অধীন এই হলটির? দফতরের অধিকর্তা পিয়ালী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা মাঝেমধ্যেই ইঁদুর ধরার ব্যবস্থা করি। শুধু রবীন্দ্র সদন নয়, শহরের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহেই ইঁদুর হটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে পূর্ত দফতরকে।’’ কিন্তু তা বলে খাস রবীন্দ্র সদনে ইঁদুরের বাসা! পিয়ালীদেবী বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সদনের আশপাশের এলাকা ফাঁকা। চারপাশে প্রচুর খাবারের দোকানও আছে। তাই ইঁদুরের উপদ্রব বেশি। তবে এ বিষয়ে আমরা আরও বেশি সচেতন থাকব।’’

রবীন্দ্র সদন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত প্রবীণ শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমিও অনেক বার ইঁদুরের সমস্যার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’’ নাট্যব্যক্তিত্ব তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘এমন হয়ে থাকলে তা নিশ্চয়ই সমস্যার। উপযুক্ত মহলে বিষয়টি জানাব। যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’

অঙ্কন: সুমন চৌধুরী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন