প্রতি দিনের প্রতীক্ষা। ছবি: অরুণ লোধ।
সন্ধ্যার পরে চালকের মর্জির উপরেই নির্ভর করতে হয় গড়িয়া-টালিগঞ্জ রুটের অটোযাত্রীদের। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে টালিগঞ্জ থেকে সরাসরি গড়িয়া যাওয়ার অটো। ফলে ভোগান্তির শিকার হন অফিস ফেরত নিত্যযাত্রীরা।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, চারটে মালঞ্চ, তিনটে রানিকুঠির এবং দু’টি নেতাজী নগর যাওয়ার অটো মেলার পরে কপাল ভালো থাকলে মিলতে পারে একটি গড়িয়া যাওয়ার অটো। আর কপাল মন্দ হলে আরও ৬-৭টি অটোর পরে এক জন চালক রাজি হন গড়িয়া যেতে। ফলে যাত্রীদের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা অথবা তিনগুণ বেশি খরচ করে গড়িয়া যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
এই রুটের চালকদের একাংশের যুক্তি হচ্ছে টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া মেট্রো সম্প্রসারণের জন্য আগের মতো গড়িয়ার যাত্রী মেলে না। কিন্তু যাত্রীরা জানান, গড়িয়া পর্যন্ত এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে মেট্রোর চেয়ে অটোতেই যাতায়াত করা সহজ এবং খরচও কম। বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা মানব চৌধুরী বলেন, ‘‘মেট্রোর চেয়ে টালিগঞ্জে নেমে অটো ধরেই আসতে সুবিধে হয়। পয়সারও সাশ্রয় হয়। কিন্তু অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে টালিগঞ্জে অটো পাওয়াটা একটা বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ায়।’’
গত কয়েক মাস ধরে টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়াগামী অটোগুলো প্রতি দিন বিকেলে ট্রামডিপোর পাশ থেকে সরে মেট্রো স্টেশনের পাশে এসে দাঁড়ায়। চালকদের দাবি, ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশেই তাঁরা এই কাজ করেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতি দিন বিকেলে অটোর লাইনে কোনও স্টার্টার থাকে না। চালকরা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও পছন্দের জায়াগা ছাড়া যেতে চান না। ফলে গড়িয়া যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না।
কেন এমন হয়?
গড়িয়া-টালিগঞ্জ অটো রুটের চালকদেরই একাংশ জানান, সম্প্রতি ট্রামলাইনের সংস্কারের জন্য রোজ বিকেলে অটো দাঁড়ানোর এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যাত্রী-চালক সুসর্ম্পক বজায় রাখার জন্য এই রুটের তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির তরফ থেকে লিফলেটও বিলি করা হয়েছিল। তার পরে বেশ কিছু দিন যাত্রীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করেছিল। কয়েক দিন পর আবার যে-কে-সেই। পুরনো চেহারায় ফিরে এসেছে অটোর টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুট। যাত্রীদের অভিযোগ, এই রুটের অধিকাংশ চালকই সন্ধ্যার পর থেকে কাটা রুটে অটো চালিয়ে বেশি লাভ করতে চান। আর তার খেসারত দিতে হয় যাত্রীদের।
টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুট সূত্রে খবর, এখন টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়ার ভাড়া ১১ টাকা। মালঞ্চ, আজাদগড়, রানিকুঠির ছয় টাকা। নেতাজিনগর সাত টাকা। নাকতলা পোস্টঅফিস পর্যন্ত আট এবং তার পরে নয় টাকা ও গড়িয়া পর্যন্ত ১১ টাকা।
চালকরা জানান, রাতে টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া গেলে এক ট্রিপে খুব বেশি হলে ৬০-৭০ টাকা ভাড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফেরার সময়ে সব সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। গ্যাসও বেশি খরচ হয়। অথচ তার বদলে মালঞ্চ, আজাদগড়, রানিকুঠি এবং নেতাজিনগর ভাড়া খাটলে দেড় ঘণ্টার মধ্যে অনায়সে ২৫০ টাকা ওঠে। তুলনামূলক ভাবে গ্যাসের খরচও কম হয়।
যাত্রীদের একাংশ জানান, চালকের এই লাভের প্রবণতার জন্য তাঁদের দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তিন বার অটো বদল করে গন্তব্যে পৌঁছোতে হয়। খরচও অনেক বেশি হয়।
দক্ষিণ কলকাতা এবং টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা বিতান হালদার বলেন, ‘‘কিছু চালকের মধ্যে এখনও যে কাটা রুটে ভাড়া খাটানোর প্রবণতা রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে কোনও যাত্রী আমাদের কাছে অভিযোগ করলে বা কোনও প্রমাণ মিললে আমাদের ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সেই চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমরা নতুন গাড়ি রুটে চলার অনুমতি, চালকের লাইসেন্স নবীকরণ, গাড়ির যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়টির উপরে নজর রাখি।’’