মেট্রো নেই? ঝোপ বুঝে কোপ

একটা শহরের ‘লাইফলাইন’ যে পরিষেবা, সেই মেট্রো বিগড়োলে ভোগান্তি কোন পর্যায়ে যেতে পারে, বুধবার ফের তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন শহরবাসী। অভিযোগ, সেই সুযোগে দাপিয়ে বেড়াল অটো, হলুদ ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৩
Share:

মেট্রো না চলায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

অটোর ভাড়া বাড়ল দ্বিগুণ, কোথাও বা তিন গুণ। হলুদ ট্যাক্সিরও সটান জবাব, মিটারে যাব না। সাকুল্যে ১০০ টাকা ভাড়া উঠতে পারে, এমন দূরত্বের জন্য চাওয়া হল ৩৫০-৪০০ টাকা! সার্জ প্রাইস বাড়াল অ্যাপ-ক্যাবও।

Advertisement

একটা শহরের ‘লাইফলাইন’ যে পরিষেবা, সেই মেট্রো বিগড়োলে ভোগান্তি কোন পর্যায়ে যেতে পারে, বুধবার ফের তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন শহরবাসী। অভিযোগ, সেই সুযোগে দাপিয়ে বেড়াল অটো, হলুদ ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাব। তাদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পেতে বাসে উঠে বাদুড়ঝোলা হতে হল যাত্রীদের। আরও অভিযোগ, সব কিছু দেখেও পুলিশ রইল দর্শক। এ দিন মেট্রোয় জোড়া বিপর্যয়ের পরে এটাই ছিল শহরের পথের চিত্র।

গত বৃহস্পতিবারই মেট্রো বিপর্যয়ে মৃত্যুভয় তাড়া করেছে যাত্রীদের। তার পরেও মেট্রো পরিষেবাই শহরের বড় ভরসা। এ দিন সেই ভরসার জায়গাটাই যাত্রীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াল। সকালে দমদম স্টেশনে এক ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনায় ডাউন লাইনে মেট্রো চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সকাল ৯টা ১৭ থেকে সাড়ে দশটা, অফিসের ব্যস্ত সময়ে নাকাল হন যাত্রীরা। ট্রেন না পেয়ে অনেকেই ততক্ষণে উঠে এসেছেন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। একে গাড়ির জট, তার উপরে মানুষের ভিড়— দুইয়ের চাপে রীতিমতো হাঁসফাঁস অবস্থা হয় ওই রাস্তার। বাসে যদি বা ওঠা গিয়েছে, সেখানেও ভিড়ের চাপে প্রাণান্তকর অবস্থা। যা দেখে শোভাবাজার মোড়ে এক যাত্রীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘বাসে এক জনের ঘাড়ে চার জন উঠছে। অনেকে দরজায় ঝুলছেন। পুলিশ কী করছে?’’ উত্তর মেলেনি কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) মিতেশ জৈনের কাছে। ফোন এবং এসএমএসের জবাব দেননি তিনি। তবে শোভাবাজার এলাকার এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর সাফাই, ‘‘রাস্তা সাফ করে দেওয়া হয়েছে সময় মতো। গাড়ি তো আর ধরিয়ে দিতে পারি না!’’

Advertisement

চাঁদনি চকে কর্মরত সন্দীপ হাজরা নামে এক যুবক বলেন, ‘‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাসে উঠতেই পারছি না। বেশ কয়েকটি ট্যাক্সি এল। তবে চাঁদনি যেতে রাজি হল না। কারণ তো বললই না, উল্টে প্রায় গায়ের উপর দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছিল।’’ এআইটিইউসি-র ট্যাক্সি সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়ক নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘ট্যাক্সিচালকদের আমরা বোঝাই। তবু এমন কেউ করে থাকলে আইন আইনের পথে চলবে।’’

শেষমেশ প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে বুঝে পুলিশ যতক্ষণে নামল, তত ক্ষণে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে মেট্রো। গিরিশ পার্ক থেকে ডাউন লাইনে শুরু হয়েছে পরিষেবা। এর পাশাপাশি উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতায় দেদার অটোর দাপট দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাঁদের দাবি, গলিপথের ১০ টাকার ভাড়া এ দিন বা়ড়িয়ে চাওয়া হয়েছে ২৫ টাকা, কোথাও ৩০। দক্ষিণ কলকাতা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি তথা অটো ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দিল্লিতে সংসদের অধিবেশনে রয়েছি। ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।’’ উত্তর নেই অটোচালকদের কাছেও।

অ্যাপ-ক্যাব চালকদেরও দাবি, ভাড়া নেওয়া হয়েছে সাধারণ নিয়মে। সার্জ প্রাইস নেওয়ার প্রশ্ন নেই। যদিও শোভাবাজার থেকে অ্যাপ-ক্যাবে ওঠার পরে এক চালককে সংস্থায় ফোন করে বলতে শোনা যায়, ‘‘মেট্রোর কাছের লোক দেখুন দাদা। তিন-চারটে করে শেয়ারে দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন