অভিযুক্তের পাশেই থাকল ইউনিয়ন

অটোচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় থানার সামনেই হুমকির মুখে প়়ড়তে হয়েছিল অভিযোগকারিণীকে। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করায় বৃহস্পতিবার টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে অটো চলাচল বন্ধ করেছিল স্থানীয় তৃণমূল ইউনিয়ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৮
Share:

অভিযুক্ত অটোচালক। ফাইল চিত্র।

বুধবার রাতের আতঙ্ক এখনও কাটেনি নেতাজিনগরে অটোয় নিগৃহীতা মহিলার। এরই মধ্যে শুক্রবার আলিপুর আদালত থেকে জামিন পেলেন অভিযুক্ত অটোচালক। সরকারি কৌঁসুলি প্রবীর দে জানান, ৫০০ টাকা ব্যক্তিগত বন্ডে অভিযুক্ত অটোচালক ইমান আলি খান ওরফে মামাকে জামিন দিয়েছে আদালত। এ দিন বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন নিগৃহীতা। আতঙ্ক এতটাই যে তিনি এ দিন জানান, ভবিষ্যতে টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটের কোনও অটোয় আর উঠবেন না। তবে অটো ইউনিয়ন যে পাশেই আছে অভিযুক্তের, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এ দিনও।

Advertisement

অটোচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় থানার সামনেই হুমকির মুখে প়়ড়তে হয়েছিল অভিযোগকারিণীকে। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করায় বৃহস্পতিবার টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে অটো চলাচল বন্ধ করেছিল স্থানীয় তৃণমূল ইউনিয়ন। পুলিশি হস্তক্ষেপে এ দিন দুপুর থেকে ওই রুটে ফের অটো চলাচল শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, অটো চলাচল চালু করার জন্য শাসক দলের উপরমহল থেকেও ইউনিয়নের উপরে রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।

বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বছর পঞ্চাশের মহিলা ছেলের সঙ্গে জুতো কিনতে বেরিয়েছিলেন। এন এস সি রোডের ঊষা মোড় থেকে গড়িয়া যাওয়ার জন্য অটোয় ওঠেন তাঁরা। বাঁ পায়ে সমস্যা আছে বলে চালকের পাশের আসনে বসেন তিনি। ছেলে বসেন পিছনের আসনে। অটোতে অন্য যাত্রী ছিলেন না। অভিযোগ, চলন্ত অটোয় ওই চালক তাঁর শরীরের নানা জায়গায় হাত দিয়েছিলেন। তরুণ ছেলের সামনে কী ভাবে হেনস্থার কথা মুখে আনবেন, তা বুঝতে না পেরে চুপ করে ছিলেন মা। গড়িয়া মোড়ে পৌঁছতেই চলন্ত অটো থেকেই লাফিয়ে নেমে পড়েন তিনি। তার পরেই গোটা ঘটনা সামনে আসে।

Advertisement

গড়িয়া মোড়ে থাকা ট্র্যাফিক পুলিশ ঘটনাটি জেনে নেতাজিনগর থানায় খবর দেয়। থানা থেকে পুলিশ এসে চালককে গ্রেফতার করে। অভিযোগ, সে সময়ে থানার বাইরে প্রচুর অটোচালক জড়ো হয়ে ওই মহিলা ও তাঁর ছেলেকে ‘ছিঁড়ে খাওয়ার’ হুমকি দেন। মহিলা থানা থেকে বেরোলে তাঁদের উপরে চড়াও হয় জনতা। পরে পুলিশ গা়ড়িতে চাপিয়ে মহিলা ও তাঁর ছেলেকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। জামিন অযোগ্য ধারায় শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করায় বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন পাননি অভিযুক্ত অটোচালক। তাঁকে এক দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠান বিচারক।

এ দিন নিগৃহীতা জানান, আতঙ্কে ঘুম উবে গিয়েছে তাঁর। তবে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আর হুমকি পাননি তিনি। এ দিন তাঁকে গড়িয়ার বাড়ি থেকে গাড়ি করে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিতে নিয়ে যায় পুলিশ। থানার সহযোগিতায় সন্তুষ্ট নিগৃহীতার ছেলেও। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ সব রকম সহযোগিতা করেছে। অটো ইউনিয়নের নেতারা সমাজবিরোধীদের ঠেকানোর বদলে তাদের আড়াল করছেন।’’

নিগৃহীতার ছেলের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন অটো ইউনিয়নের নেতারা। তাঁদের মতে, কোনও একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন অভিযোগ সঙ্গত নয়। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি এবং অটো ইউনিয়নের নেতা শুভাশিস চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘কেউ কোনও অভিযোগ করলেই সেটা সত্যি হয়ে যায় না কি? বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ ধোপে টেকে না। কারণ, তার সারবত্তা থাকে না। অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন