লেলিহান: মঙ্গলবার রাতে ফের দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে বাগড়ি মার্কেটের একাংশে। ছবি: সুমন বল্লভ
দিনভর আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ বাগড়ি মার্কেটের চেহারা তখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকার মতো।
অবসন্নতা আর ক্লান্তির ছাপ চারদিকে। জল থইথই রাস্তায় পোড়া-ভ্যাপসা গন্ধের মধ্যেই ইতি-উতি পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। লোহার গ্রিলের জানলা কাটার যন্ত্রপাতি পাশে রেখে জিরিয়ে নিচ্ছেন পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। তখনও নাগাড়ে জল ছিটিয়ে দেওয়াল ঠান্ডা রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন দমকলকর্মীরা।
তার মধ্যেই যে কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়া আগুন হয়ে ফণা তুলবে, তা সম্ভবত আঁচ করতে পারেননি সেখানে উপস্থিত অধিকাংশই। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ই-ব্লকের কাছে তিনতলার জানলা দিয়ে হঠাৎ দেখা দিল আগুনের শিখা। তড়িঘড়ি ১৬ হাজার লিটারের ওয়াটার ব্রাউজ়ার থেকে দমকলকর্মীরা জল দেওয়ার কাজ শুরু করলেও ভিতরে আগুন তত ক্ষণে রীতিমতো ফুঁসছে। জলের তোড়ে দু’-একটা জানালার কাচ ভাঙল, তবে আগুন শান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা গেল না। বোঝা গেল, আগুনের কাছে পৌঁছচ্ছেই না জল।
এ দিকে প্রবল ধোঁয়ার জেরে আগুনের উৎস পর্যন্ত পৌঁছতে পারছিলেন না দমকলকর্মীরাও। তারই মধ্যে হুগলি ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার সনৎ মণ্ডল মই বেয়ে উঠে দেখার চেষ্টা করলেন পরিস্থিতি। জানা গেল, ঘণ্টা দেড়েক আগে গ্রিল কেটে যে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন দমকলকর্মীরা, সেখানেই একটি পার্টিশনের পাশে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে ইমিটেশন গয়নার দোকান।
আগুনের আগ্রাসী চেহারা দেখে উদ্বেগ বাড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বছর তিরিশের হার্দিক সাংভি, আসিফ, রেহানরা তখন দমকলকে বিকল্প পথের হদিস দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। এক আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে উপরে ঘুরেও আসেন কয়েক জন। কিন্তু ভেঙে পড়া সিঁড়ি পেরিয়ে সঙ্কীর্ণ পরিসরের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া গেল না দমকলকর্মীদের ভিতরে আটকে পড়ার আশঙ্কায়।
তবে উপায়? অনেক ভেবে দমকলের আধিকারিক সুমিত শূর কলকাতা পুরসভার গাছের ডাল ছাঁটার যান্ত্রিক মই আনার নির্দেশ দিলেন। রাত ১টা নাগাদ সেই মই পৌঁছলে ফের শুরু হয় আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ। কিছু ক্ষণের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে পরিস্থিতি। এ দিকে, মাত্র দু’দিন আগেই সুবিধে করতে না পেরে ওই রাস্তার মুখ থেকে ফিরে গিয়েছে বহু কোটি টাকায় কেনা, বহুতলে আগুন নেভানোর উপযোগী মই ‘ব্রন্টো’। এই যন্ত্রটি কেন আগে আনা হল না, বলাবলি শুরু করেলন অনেকেই।
অন্য পাশে তখন ব্যারিকেড করে রাখা এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়েছে গুরুতর আহত এক পথ-কুকুর। সারা গায়ে ক্ষত। থমথমে মুখের ব্যবসায়ী আর রাত জাগা দমকলকর্মীরা কুকুরটির অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন। এক দমকলকর্মী গ্লাসে জল খাওয়ানোর চেষ্টা করেন তাকে। খবর যায় একটি পশুপ্রেমী সংগঠনে। কিছু ক্ষণে মোটরবাইক নিয়ে পৌঁছন তিন যুবক। তাঁদের মধ্যে দু’জন, মণীশ সাহা এবং রাজেন্দ্র বসাক বাইকের হাতলে স্যালাইনের বোতল ঝুলিয়ে শুরু করেন আহত কুকুরের চিকিৎসা।
রাত জাগা চোখে তখনও আগুন নেভার অপেক্ষায় ঝলসানো বাগড়ি মার্কেটের দিকে তাকিয়ে জিতেন মেটা, বাদল অরোরা, মহম্মদ সেলিমেরা।