দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রহৃত

কখনও প্রকাশ্য রাস্তায় চোলাই বিক্রির প্রতিবাদ করা। কখনও বা পানশালায় নাচগানের আড়ালে দেহব্যবসা চলার অভিযোগ করে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের— এ হেন নানা প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কার্যত দুষ্কৃতীদের ‘হিট লিস্ট’-এ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ০২:৩৭
Share:

রাজীব সরকার

কখনও প্রকাশ্য রাস্তায় চোলাই বিক্রির প্রতিবাদ করা। কখনও বা পানশালায় নাচগানের আড়ালে দেহব্যবসা চলার অভিযোগ করে আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের— এ হেন নানা প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কার্যত দুষ্কৃতীদের ‘হিট লিস্ট’-এ। আশঙ্কা সত্যি হল সোমবার গভীর রাতে। মামলা করার ‘অপরাধে’ বাড়ির সামনেই এক দল দুষ্কৃতী বাঁশ আর লোহার রড দিয়ে পেটাল বাগুইআটির বাসিন্দা, সমাজকর্মী রাজীব সরকারকে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে রেহাই পাননি বন্ধু রজত মুহুরিও।

Advertisement

রাজীবের মাথায় তিনটি ও রজতের মাথায় আটটি সেলাই পড়েছে। পুলিশ জানায়, বাগুইআটির পাঠশালা এলাকার বাসিন্দা রাজীব ওই রাতে রজতকে ছাড়তে বাইরে বেরোন। অভিযোগ, সেই সময়েই তাঁকে পিছন থেকে ঘিরে ফেলে কিছু দুষ্কৃতী। প্রথমে লোহার রড দিয়ে রাজীবের মাথায় আঘাত করা হয়। রাজীব রাস্তায় পড়ে গেলে বাঁশ দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় তাঁকে।

অতীতে বাগুইআটি মোড়ে প্রকাশ্য রাস্তায় চোলাই মদ বিক্রি হতো। কার্যত পুলিশের চোখের সামনেই ঘটত সেই ঘটনা। রাজীবরাই স্থানীয় মানুষকে নিয়ে প্রথম তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তার পরেই সেই চোলাইয়ের ঠেক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এ বার ভিআইপি রোডের ধারে বিভিন্ন পানশালায় নাচগানের আড়ালে দেহব্যবসা চলার অভিযোগ করে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছেন রাজীব। সেই মামলার শুনানি আগামী ৩০ জুলাই। তাঁর দাবি, পানশালাগুলিতে দেহব্যবসা ও নারী পাচার হচ্ছে বলে গত মার্চ মাসেই তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। ঘটনার প্রেক্ষিতে যে কোনও সময়ে তাঁদের উপরে হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা পুলিশ-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলেই জানিয়েছিলেন তাঁরা।

Advertisement

ইতিমধ্যে গত এক-দেড় মাসে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ভিআইপি রোডের ধারে বিভিন্ন পানশালায় হানা দিয়ে ভিন্‌ রাজ্য থেকে পাচার হয়ে আসা বেশ কিছু মহিলাকে উদ্ধার করে। যাঁদের অনেকেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, তাঁরা পাচার হয়ে কলকাতায় এসেছেন। জোর করে তাঁদের দেহব্যবসাতেও নামানো হয়েছে। এ ছাড়াও পানশালায় নাচগান ঘিরে অসামাজিক কাজকর্মের একাধিক অভিযোগ বহু দিন ধরেই পাচ্ছিল পুলিশ। ফলে তেঘরিয়া, কৈখালি, নিউ টাউন এলাকার বিভিন্ন পানশালায় লাগাতার হানা দিতে থাকেন পুলিশকর্মীরা।

সোমবার রাতে রাজীব ও রজত আক্রান্ত হওয়ার পরে বাগুইআটি থানার পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে ভিআইপি রোডের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করায়। দু’জনেই রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন।

তবে এ সব সত্ত্বেও চাপের মুখে মাথা নোয়াতে রাজি নন রাজীব। তিনি জানান, তাঁকে বাঁচাতে তাঁর বন্ধু রাস্তায় পড়ে থাকা ইট নিয়ে দুষ্কৃতীদের দিকে ধেয়ে যান। কিন্তু পেরে ওঠেননি। ইটটি রজতের থেকে কেড়ে নিয়ে উল্টে তাঁরই মাথায় আঘাত করে দুষ্কৃতীরা।

রাজীব বলেন, ‘‘আমাকে মারতে মারতে বারবারই ছেলেগুলো বলছিল, আমি মারা গেলে মামলাও শেষ হয়ে যাবে। আমি এখন সেই মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন