আমার পাড়া

সে দিনের ‘বাঙালপাড়া’ আজ বেশ ঝাঁ চকচকে

পাড়ার নাম বাঙালপাড়া। এমন নামকরণের একটা কারণও আছে বইকী! দেশভাগের আগেই পূর্ববঙ্গের বেশ কিছু মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন।

Advertisement

মলয় দাস

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৮
Share:

পায়ে-পায়ে: প্রতি দিনের পরিচিত ছবি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পাড়ার নাম বাঙালপাড়া। এমন নামকরণের একটা কারণও আছে বইকী! দেশভাগের আগেই পূর্ববঙ্গের বেশ কিছু মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। অতীতের বাঙালপাড়ার নামবদলে হয়েছে ব্রজেন্দ্রলাল গাঙ্গুলি লেন। দেশপ্রাণ শ্যাসমল রোডে থেকে শুরু হয়ে পাড়াটা মিশেছে টালিগঞ্জ রোডে।

Advertisement

টালিগঞ্জ ভবানী সিনেমার ধার ঘেঁষা মধ্যবিত্ত এ পাড়ার আবহাওয়ায় মিশে আছে ভরপুর বাঙালিয়ানা আর আটপৌরে পাড়া পাড়া গন্ধটা। এ পাড়ায় আমি জন্মাইনি, তবু শৈশব, কৈশোর, যৌবন অতিক্রম করে এখানেই চলেছে দিনযাপন।

আজকের পাড়াটা বেশ আকর্ষণীয়। এখনও বাড়ির সংখ্যাই বেশি। তবে সময়ের প্রভাবে মাথা তুলেছে কিছু ঝাঁ চকচকে বহুতল। এসেছেন নতুন অনেকেই। তবু পুরনো পড়শিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে।

Advertisement

অতীতে পাড়াটাই যেন ছিল এক বৃহৎ পরিবার। সেটা অবশ্যই বদলেছে। তবে পুজো-পার্বণে প্রতিবেশীদের বাড়িতে প্রসাদ পাঠানো, উৎসবে অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করা সব আছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বা কেউ প্রয়াত হলে পাশে থাকার অভ্যাসটা আজও এ পাড়ার মানুষের মধ্যে রয়েছে। সময়ের সঙ্গে এক দিন সব কিছুই বদলায়। তবু হারায়নি এ পাড়ার মানুষের আন্তরিকতা, মূল্যবোধ আর জীবনের উপলব্ধি। সেটাই ধরে রেখেছে সম্পর্কের বন্ধন।

অতীতে এ পাড়ায় পাকা বাড়ির সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। বেশির ভাগ বাড়ি ছিল খড়ের চালের অথবা
টিনের ছাদের। পাড়ার রাস্তাটাও ছিল কাঁচা। তার ধারেই ছিল খোলা নর্দমা। তাই মশার উপদ্রব ছিল নিত্যসঙ্গী। তখন পাড়ায় কোনও আলোকস্তম্ভ ছিল না। বাড়ির দেওয়ালের ব্র্যাকেটে ঝুলত কম পাওয়ারের আলো। এক সময়ে দিন বদলাল। এখন আর
পাঁচটা পাড়ার মতোই এখানেও মিলছে প্রয়োজনীয় নাগরিক পরিষেবা। পাড়টাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বাসিন্দারাও সমান ভাবে উৎসাহী। পাড়াতেই থাকতেন চারণকবি মুকুন্দ দাসের সহযোগী ব্রজেন্দ্রলাল গঙ্গোপাধ্যায়। তার নামেই রাস্তাটা। আর থাকতেন সঙ্গীতশিল্পী সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সত্যেশ্বর মুখোপাধ্যায়। প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

ফিকে হয়ে এসেছে পাড়ার লাইব্রেরি কালচার। টালিগঞ্জ বিবেকানন্দ ব্রতী সঙ্ঘের একটি পাঠাগার রয়েছে। তবে পাঠকের অভাবে লাইব্রেরিটা আজ মৃত প্রায়। আক্ষেপ কাছাকাছি নেই কোনও মাঠ। কেউ কেউ অবশ্য রবীন্দ্র সরোবরে খেলতে যান। প্রতি দিনের খেলাধুলো যেন বছরে এক দিনের প্রতীকী খেলাধুলোয় বদলে গিয়েছে।

আগের তুলনায় কমলেও হারায়নি এ পাড়ার আড্ডা। পাড়ার মুখে বসে চায়ের দোকানের আড্ডাটা। পড়শিরা অনেকেই সকালে সেখানে যোগ দেন। এ পাড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। কাছেই মেট্রো স্টেশন, টালিগঞ্জ রেলস্টেশন। এ পাড়ার পুজো-পার্বণও আকর্ষণীয়। পাড়ার মহিলারা চাঁদা তোলা থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

বাঙালপাড়া নাম হলেও এ পাড়ায় নেই ঘটি বাঙালের ঝগড়া। বরং সুখ-দুঃখে হাসিমুখে পাশাপাশি থাকাই এ পাড়ার ঐতিহ্য।

লেখক আইনজীবী

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement