বৃদ্ধাকে মারধর, সস্ত্রীক অভিযুক্ত নেতা

হাতে নখের আঁচড়ের দাগ নিয়ে ৬৭ বছরের বৃদ্ধা রূপালিদেবী এ দিন বলেন, ‘‘এই বয়সে এমন হেনস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে চোখে জল চলে আসছে। ওদের সাজা চাই।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৬
Share:

(১) এই বাড়ি ভাঙা ঘিরেই গোলমাল। (২) ঘটনাস্থলে উপস্থিত অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ইমন বসু। (৩) হাতে নখের আঁচড়ের দাগ দেখাচ্ছেন রূপালি ঘোষ। বৃহস্পতিবার, সাউথ সিঁথিতে। নিজস্ব চিত্র

প্রোমোটিংয়ের জন্য বসতবাড়ি দখলের লক্ষ্যে ৬৭ বছরের এক বৃদ্ধাকে মারধরের অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতা এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে সাউথ সিঁথির কেদারনাথ দাস লেনে।

Advertisement

কেদারনাথ দাস লেনে ১২২এ এবং ১২২এফ হোল্ডিং নম্বরের বাড়িটি শরিকি সম্পত্তি। দিলীপ ঘোষ ছাড়া বাকি দুই ভাই বিভূতিভূষণ ঘোষ এবং নৃপেন্দ্রনাথ ঘোষ মারা গিয়েছেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শরিকেরা সর্বসম্মত ভাবে অরুণ ঘোষ নামে এক প্রোমোটারকে বাড়িটি ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরির জন্য রেজিস্ট্রি করেন। অভিযোগ, প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ি ভাঙার কাজ হওয়ার পরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে আচমকা স্থানীয় তৃণমূল নেতা ইমন বসু এবং তাঁর স্ত্রী নেহা বসু এক জন মহিলাকে ওই বাড়িতে জোর করে ঢুকিয়ে দেন। ইমনের বক্তব্য ছিল, অঞ্জনা বিশ্বাস নামে ওই মহিলা গত দু’বছর ধরে ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তাঁকে উচ্ছেদ করে বাড়ি ভাঙার কাজ চলছে। এই ঘটনাকে ঘিরে গোলমাল চলছিলই। তা চূড়ান্ত রূপ নেয় এ দিন সকালে। দিলীপবাবুর স্ত্রী রূপালি ঘোষের অভিযোগ, চুলের মুঠি ধরে টানা চড়-ঘুষি মারা হয়েছে তাঁকে। হাতে নখের আঁচড়ের দাগ নিয়ে ৬৭ বছরের বৃদ্ধা রূপালিদেবী এ দিন বলেন, ‘‘এই বয়সে এমন হেনস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে চোখে জল চলে আসছে। ওদের সাজা চাই।’’

রূপালিদেবী জানান, অঞ্জনা যে ভাড়াটে নন, তা প্রমাণে তাঁকে কিছু প্রশ্ন করতে সকাল ১০টা নাগাদ আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে ওই বাড়িতে যান তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে ইমন, তাঁর স্ত্রী-সহ আরও কয়েক জন ঘটনাস্থলে হাজির হন। রূপালিদেবীর কথায়, ‘‘রাস্তা থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে বাড়িতে ঢোকেন ইমনের স্ত্রী। আমার চুলের মুঠি ধরে গালে চড় মারলে চশমাটা খুলে যায়। দু’হাতে নখ দিয়ে আঁচড় কাটেন। এ সবের মধ্যে পিঠে ঘুষি মারেন ইমন।’’ যার প্রেক্ষিতে সিঁথি থানায় জিডি (এন্ট্রি নম্বর ৪৪০) করেন আক্রান্ত। পরে আর জি করে পরীক্ষাও করান। সিঁথি থানা অবশ্য জানিয়েছে, এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়নি। রূপালিদেবী জানান, তিন বছর আগে বেলগাছিয়ার একটি সম্পত্তি প্রোমোটিংয়ের জন্য ইমনের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর হয়। সেই চুক্তির কাগজপত্র জাল করে অঞ্জনাকে ভাড়াটে হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

Advertisement

অভিযোগ অস্বীকার করে ইমনের দাবি, তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেছে প্রোমোটারের দলবল। ভাড়াটের কাছে থাকা চুক্তিপত্র আসল। এমনকী, অঞ্জনা যে ওই বাড়িরই ভাড়াটে তার জন্য তিনি ‘রাজসাক্ষী’ পর্যন্ত হতে রাজি। একই সঙ্গে অরুণের রাজনৈতিক যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর বক্তব্য, ‘‘অঞ্চলের মানুষ হিসেবে এক অসহায় মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছি। এর পিছনে প্রোমোটিংয়ের কোনও স্বার্থ নেই।’’ যদিও ঘোষ পরিবারের সম্পত্তির প্রোমোটিং ঘিরে এক সময়ে ইমনের সঙ্গে যে মউ হয়েছিল, তা বাতিল হওয়াতেই এ দিনের ঘটনা বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। ইমনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অরুণ বলেন, ‘‘পুরো বিষয় থেকে নজর ঘোরাতে এ সব হাস্যকর অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

এ দিনের ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মালা সাহা বলেন, ‘‘পুলিশকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কোনও রকম অন্যায় কাজ দল বরদাস্ত করবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন