Bengali New year

বন্দি শহরের আর্তিতে ভোজবাক্সে পয়লা পার্বণ

বচ্ছরকার দিনে খানিক স্বাদ-সম্ভারে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে তবু অনেকেই স্মার্টফোনে অ্যাপের দ্বারস্থ।

Advertisement

ঋজু বসু ও সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

১৪২৭ বঙ্গাব্দে পা রাখার প্রাক্কালে তালাবন্দি বাঙালির কাছে যা নিউ ইয়র্ক, তা-ই নিউ টাউন। পঞ্চসায়রের ফ্ল্যাট থেকে অসহায় কন্যার কাছে বাগবাজারে বাপের বাড়ির পুরনো ঠিকানা বেঙ্গালুরু বা ব্রিসবেনের মতো দূর ঠেকছে।

Advertisement

বচ্ছরকার দিনে খানিক স্বাদ-সম্ভারে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে তবু অনেকেই স্মার্টফোনে অ্যাপের দ্বারস্থ। পকেটে টাকা থাকতে পারে। তবু পাঁচতারায় মহারাজকীয় বাঙালি ভূরিভোজ এ বার স্বপ্নে। কিছু বয়স্ক নাগরিক বা রান্না অপটু অসহায়দের খানিক ভরসা জোগাচ্ছে, গুটিকয়েক রেস্তরাঁ বা ঘরোয়া শেফেদের জোট। বাড়ির হেঁশেলের ভারপ্রাপ্ত মানুষটিকে ছুটি দিতে খাবার সরবরাহের অ্যাপের ভরসাতেই অনেকে নববর্ষের ভূরিভোজের স্বপ্ন দেখছেন।

কলকাতা জুড়ে বিস্তৃত চিনে ও বিরিয়ানি রেস্তরাঁর কর্ণধার শিলাদিত্য ও দেবাদিত্য চৌধুরী বলছিলেন, “লকডাউনের জন্য বিহার-উত্তরপ্রদেশ থেকে পাঁঠার মাংসের জোগান আটকে। তাই মাটনপ্রেমীদের সবাইকে খুশি করা কঠিন। তবে রফতানি হচ্ছে না-বলে চিংড়ি, ভেটকির দেদার স্টক।” মল্লিকবাজার ও বাইপাসের দু’টি মাত্র ঠিকানায় সক্রিয় নামী বিরিয়ানি রেস্তরাঁর কর্ণধার ইশতিয়াক আহমেদেরও আক্ষেপ, “কোনও মতে ১০-২০ কেজি মাটন কখনও মিলছে। নববর্ষে মাটন বিরিয়ানি হবে কি না নিশ্চিত নই।” কর্মচারীদের মাইনে থেকে আউটলেটের ভাড়া গোনার স্বার্থে নমো-নমো করেই অনেকে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।

Advertisement

গুরুসদয় দত্ত রোডে চিনে রেস্তরাঁর ঠিকানা থেকেই কিছু চিনে ও বাঙালি রান্নার পদ চালু রেখেছে একটি সর্বভারতীয় রেস্তরাঁ। তাঁদের মুখপাত্র দেবাশিস ঘোষের কথায়, “আনাজ থেকে মাংসের জোগান স্বাভাবিক রাখতে বাঁধা সাপ্লায়ারেরা নাজেহাল। ছোট রেস্তরাঁগুলি বরং স্থানীয় বাজারের ভরসায় চালাতে পারে।’’

তাতেও নানা সঙ্কট। শহরে ছড়ানো ২০০ জন নানা কিসিমের ঘরোয়া রান্না-শিল্পীর জোটের একটি অ্যাপ থেকে চেষ্টা হচ্ছিল, নিয়মিত গ্রাহকদের জন্য অন্তত পোলাও, বেগুনি, মাংস, পায়েসের একটি ছিমছাম মেনু চালু রাখার। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে, এই খাবারটুকু সরবরাহের তোড়জোড় চলছে। কিন্তু এই প্রয়াসের আহ্বায়ক দেবযানী মুখোপাধ্যায় দুশ্চিন্তা, “শহরের নানা এলাকা ‘স্পর্শকাতর’ ঘোষণা করায় এটুকুও পারব কি না, অনিশ্চিত।”

তবু পিকনিক গার্ডেন থেকে দু’টি রেস্তরাঁ ব্র্যান্ডের কর্তা আকর্ষ ভার্গব এক হেঁশেলে রকমারি কাবাব, পাস্তা স্যালাডের আশ্বাস দিচ্ছেন। কেয়াতলার চিনে রেস্তরাঁয় পর্ক, চিকেনের কাঙ্ক্ষিত সম্ভার। বালিগঞ্জের একটি কেটারার নিরামিষ ও আমিষে মাংস-চিংড়ির সুলভ থালির বন্দোবস্ত করেছে। দশ চক্রে ভগবান ভূত বা ভূত ভগবান হয়। গ্লুটেনমুক্ত পাওভাজি বা ব্রাউন রাইসের চিকেন বিরিয়ানির জন্য পরিচিত হ্যারিংটন স্ট্রিট, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের ক্লাউড কিচেনও নববর্ষে খাঁটি বাঙালি। তাদের মেনুতে লুচি-ছোলার ডাল, কষা মাংস বা চিংড়ি মালাইকারি। খাবার সরবরাহকারীদের সবারই ফলাও আশ্বাস, সামাজিক দূরত্ব থেকে পরিচ্ছন্নতা বিধির সাতকাহন অক্ষরে অক্ষরে মানা হচ্ছে।

অ্যাপের ভোজবাক্সের অপেক্ষায় চাতক অনেকেই। তালাবন্দি ও স্পর্শকাতর এলাকার নিষেধ ঠেলে সে আসবে তো ঘরেতে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন