winter clothes

করোনার কোপ শীত-পোশাকের ভুটিয়াবাজারেও

এ বার কলকাতামুখো হননি ভুটান, নেপাল, সিকিম, হিমাচলপ্রদেশ থেকে প্রতি বছর আসা শীতের পোশাকের বিক্রেতারা। ওয়েলিংটন, হেদুয়া পার্ক বা চৌরঙ্গির যে ফুটপাত তাঁদের ভিড়ে প্রতি বার নভেম্বর থেকেই গমগম করে, এ বার তার সবই ফাঁকা। 

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০৯
Share:

ছেদ: (১) ভুটিয়া বিক্রেতাদের বসার জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল, তবে তাঁরা এসে পৌঁছতে না পারায় ফাঁকাই রয়েছে হেদুয়া পার্কের ফুটপাত।(বাঁদিকে)(২) ওয়েলিংটনে কিছু দোকান বসলেও নেই ভুটিয়া বিক্রেতারা।(ডানদিকে) ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য এবং নিজস্ব চিত্র।

জগদ্ধাত্রী পুজো শেষ হলেই কলকাতায় চলে আসতেন তিনি। কিছু গানের ক্যাসেটের পাশাপাশি সঙ্গে থাকত চার মাস চলার মতো গ্রাম থেকে আনা মধু। হেদুয়ার ফুটপাতে শীতের পোশাক বিক্রি করতে আসা সিকিমের তাসি ভুটিয়ার মাস চারেকের সংসারে গানের ক্যাসেট আর ওই মধুই ছিল ‘অক্সিজেন’! বুধবার সকাল থেকে একাধিক বার চেষ্টার পরে ফোনে পাওয়া গেল তাসিকে। বললেন, ‘‘এ বার আর সংসার পাততে যাইনি। করোনা সব শেষ করে দিয়েছে। পোশাক নিয়ে কলকাতায় যাওয়া খুব মুশকিল। তা ছাড়া লকডাউনের পরে লোকের হাতে টাকা কই? পুরনো পোশাকেই এ বারের শীত কাটাবে কলকাতা!’’

Advertisement

শুধু তাসি নন। একই আশঙ্কায় এ বার কলকাতামুখো হননি ভুটান, নেপাল, সিকিম, হিমাচলপ্রদেশ থেকে প্রতি বছর আসা শীতের পোশাকের বিক্রেতারা। ওয়েলিংটন, হেদুয়া পার্ক বা চৌরঙ্গির যে ফুটপাত তাঁদের ভিড়ে প্রতি বার নভেম্বর থেকেই গমগম করে, এ বার তার সবই ফাঁকা।

হেদুয়া পার্কের গায়ে শুধু রয়ে গিয়েছে স্টলের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে লেখা এক, দুই, তিন নম্বরগুলি।

Advertisement

শীত-পোশাকের যে বিক্রেতারা শহরে আসেন, তাঁদের দলের অন্যতম মাথা তাসি। শীতের একেবারে শুরুতে তিনিই প্রথম কলকাতায় আসেন। ডেকরেটরকে দিয়ে স্টল বানানো থেকে শুরু করে, কাকে কোন স্টলে বসানো হবে— সব দেখেন। কিন্তু নিজে বিক্রি করেন স্রেফ কয়েকটি শীতের টুপি। তাসির কথায়, ‘‘নিজে কত টাকা রোজগার করলাম, তার থেকে সকলকে নিয়ে যাওয়াটাই মজা। হেদুয়া পার্কের গায়ে ওই এক, দুই, তিন করে লেখা নম্বর দেখেই প্রতি বার স্টল হয়। সকলে আলোচনা করে ঠিক করলাম, এ বার আর কলকাতায় যাওয়া সম্ভব নয়। ক্রেতা পাওয়া যাবে কি না, সেই আশঙ্কা তো ছিলই। তার চেয়েও বড় কথা, পোশাক বিক্রি করতে গিয়ে করোনা নিয়ে গ্রামে ফেরার ভয়।’’

কথা থামিয়ে মুহূর্তে গ্রামের লোকেদের জড়ো করে ফেলেন তাসি। সকলেরই নাকি কিছু না কিছু বলার আছে। তরুণী সুকমা লাল গৌতম বললেন, ‘‘১০ বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গে কলকাতায় যেতাম। বাবা বলত, কলকাতায় ঠান্ডা কমছে। হাল্কা শীত-পোশাকই এখন সকলে নিতে চান। সেই মতোই গত বছর গিয়েছিলাম। কিন্তু বিক্রি তেমন হয়নি। এ বার গেলে গত বছর বিক্রি না হওয়া হাল্কা উলের সোয়েটারের সঙ্গে টুপিওয়ালা সোয়েটার, হাফ জ্যাকেট নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু আমাদের গ্রাম এখনও ভাল আছে, করোনা নিয়ে ফিরে বিপদ বাড়াতে চাইনি।’’

আরও পড়ুন: স্পিকার ডাকলে আবার এসে তাঁর হাতেই ইস্তফা দিয়ে যাবেন ‘মুক্ত’ শুভেন্দু

একই দাবি অরুণাচলের সান্তা চাকমার। গত বছর ওয়েলিংটন বাজারে এসেছিলেন। বছরের অন্য সময়ে হোটেলে রান্নার কাজ করা সান্তাই ওয়েলিংটনের ব্যবসায়ী-দলের মূল রাঁধুনি হন। এ বার তাঁর সেই হোটেলের কাজও চলে গিয়েছে লকডাউনের পরে। সান্তা বলেন, ‘‘বাড়িতে তিন ছেলে, স্ত্রী আর আমি। খুব ভাল হত কলকাতায় গিয়ে পোশাক বেচতে পারলে। কিন্তু দল ছাড়া আমাদের দর নেই। কলকাতায় ঢুকতেই যদি না দেয়! সেই ভয়ে এ বার পা বাড়াইনি।’’

তা হলে সংসার চলবে কী করে?

আরও পড়ুন: ৫ লক্ষ ছুঁইছুঁই মোট সুস্থ, সাড়ে ৫ শতাংশের কম সংক্রমণের হার

সান্তার মতোই উত্তর নেই সিরং থাপার কাছে। ১৮ বছর ধরে কলকাতায় আসা সিরং হিন্দির পাশাপাশি বাংলাও খানিকটা শিখে নিয়েছেন। বাংলাতেই বললেন, ‘‘আমার গাড়ি চালানোর কাজ চলে গিয়েছে। কলকাতায় গেলে খেতে পাওয়ার আশার চেয়ে এ বার না খেতে পেয়ে ফিরে আসার ভয়টাই বেশি হল। সামনের শীতে করোনা চলে গেলে আবার আসব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন