বেপরোয়া বাইকের আঘাতে প্রাণ গেল তিন জনের

অষ্টমীর রাত থেকে নবমীর ভোর পর্যন্ত শহরের চার জায়গায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিন যুবকের। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি দুই মোটরবাইক আরোহী

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share:

এ ভাবেই দাপিয়ে বেড়ালেন হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ফের পুজোর শহরে বেপরোয়া মোটরবাইকের দাপট। অষ্টমীর রাত থেকে নবমীর ভোর পর্যন্ত শহরের চার জায়গায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিন যুবকের। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি দুই মোটরবাইক আরোহী। সপ্তমীতেও শহরে বেপরোয়া মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের।
পুজোর আগে লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছিল, হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক দেখলেই আরোহীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও পুজোর ক’দিন শহরের রাস্তায় বেপরোয়া মোটরবাইক কিংবা হেলমেট ছাড়া বাইক আরোহীদের দাপট চোখে পড়েছে। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বেপরোয়া মোটরবাইক চলাচলের বলি হলেন তিন যুবক।
পুলিশ জানিয়েছে, অষ্টমীতে গভীর রাতে সাড়ে তিনটে নাগাদ দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে হাওড়ার দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসছিল একটি মোটরবাইক। এ জে সি বসু রোড র‌্যাম্পের দিকে নামার সময়ে একটি বাঁকের মুখে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চিনি বোঝাই একটি মিনি ট্রাকে ধাক্কা দেয় মোটরবাইকটি। গতি বেশি থাকায় ধাক্কা মারার পরেই মোটরবাইকের দুই আরোহী সামনের দিকে ছিটকে পড়েন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, মিনি ট্রাকের চালক ওই দুই যুবককে বাঁচানোর জন্য ব্রেক কষেন। তাতে মিনি ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার মাঝের ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে বাঁ দিকে মোটরবাইকের উপরেই উল্টে পড়ে। মিনি ট্রাকে থাকা চিনির বস্তায় চাপা পড়েন মোটরবাইক চালক প্রতীম কুণ্ডু (২১) এবং শুভদীপ চক্রবর্তী (২২)। দুই বাইক–আরোহীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত দু’জনই নেতাজিনগর থানা এলাকার নাকতলার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, দু’‌জনেরই মাথায় হেলমেট ছিল না। দুর্ঘটনার সময়ে মোটরবাইকের গতিও ছিল বেশি।
লালবাজার সূত্রের খবর, ওই ঘটনার কিছু আগেই শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার জওহরলাল নেহরু রোড এবং হো চি মিন সরণির সংযোগস্থলে বেপরোয় মোটরবাইকের বলি হয়েছেন রাহুল যাদব (২৪) নামে এক যুবক। ওই ঘটনায় জখম হয়েছেন তাঁর বন্ধু সুজয় পাত্রও। গুরুতর জখম অবস্থায় সুজয় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। দু’জনেই বালিগঞ্জের বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, রাত আড়াইটে নাগাদ দুই বন্ধুকে নিয়ে দ্রুতি গতিতে বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন রাহুল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টাটা সেন্টারের কাছে উল্টো দিক থেকে আসা একটি গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় রাহুলদের মোটরবাইকের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাহুলের। সুজয় এবং অপর দুই বন্ধুকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
লালবাজার জানিয়েছে, এ ছাড়া আরও দু’টি মোটরবাইকের দুর্ঘটনা ঘটেছে হেস্টিংস মোড় এবং খিদিরপুর রোডে। দু’টি ঘটনাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইক দু’টি ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। হেস্টিংস মোড়ে জখম হন হাওড়ার বাসিন্দা মোটরবাইরক চালক প্রদীপ সাউ। অন্য দিকে খিদিরপুর রোডে জখম
হয়েছেন মোটরবাইকের পিছনে বসে থাকা আরোহী কাকলি দত্ত। জখম দু’জনেই গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
বছর কয়েক আগে পুজোর শুরুতেই পরপর মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল বেশ কয়েক জন বাইক আরোহীর। এর পরেই তৎকালীন পুলিশকর্তারা পুজোর ক’দিন বেপরোয়া মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার ফলে মোটরবাইকের দুর্ঘটনার হ্রাস টানা গিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। এ বার সেই পথে কেন গেল না পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন: সেঞ্চুরি পেরোল আকবরের উকিলের সংখ্যা, ৩১ অক্টোবর ফের শুনানি

লালবাজারের কর্তারা বলছেন, পুজোর ভিড় সামলাতে ব্যস্ত রয়েছেন পুলিশকর্মীরা। তবু শহরের বিভিন্ন এলাকায় মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কম সংখ্যাতেই বাইক ধরা হচ্ছে। কিন্তু ধরলেই সব কাগজ দেখতে চাওয়া হচ্ছে। না দিতে পারলে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘শুধু মাত্র সাউথ গার্ডই ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত ছশোর বেশি আইন ভাঙা মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন