কলকাতা পুরসভা। ফাইল চিত্র।
কলকাতার বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে শিশুরা জন্মাবে, এ বার তাদের জন্মের শংসাপত্র ওই হাসপাতাল থেকেই পাওয়া যাবে। এত দিন কলকাতায় জন্মানো প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই বার্থ সার্টিফিকেট দিত কলকাতা পুরসভা। বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা বাড়িতে জন্মানো শিশুর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য ছিল।
সম্প্রতি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসনের কাছে। তাতে বলা হয়েছে, এ বার থেকে হাসপাতালে জন্মানো শিশুদের জন্মের শংসাপত্র সেখান থেকেই নিতে হবে। বলা হয়েছে, সদ্যোজাত শিশুর পরিবারকে বার্থ সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে সিস্টার ইন-চার্জকে তা দিতে হবে।
নতুন এই বিজ্ঞপ্তি পেয়েই চরম বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে পুর প্রশাসনে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘কলকাতার ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে পুর প্রশাসন। শিশু যেখানেই জন্মাক, সেখান থেকে ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ নিয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে গেলেই পাওয়া যায় বার্থ সার্টিফিকেট। আর শহরের সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, প্রসূতি কেন্দ্র— সর্বত্রই কর্তৃপক্ষকে বলা ছিল, কেউ জন্মালেই তার রেকর্ড পুরসভায় পাঠাতে হবে। সেই মতো পুর প্রশাসন জন্মের শংসাপত্র তৈরি করে তার প্রতিলিপি রেখে দেয় বিশেষ সার্ভারে, কেন্দ্রীয় সরকারের জন্ম-মৃত্যু নথিবদ্ধ করার নিয়ম মেনে। কলকাতার প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও পুর প্রশাসনের কাছে সদ্যোজাতদের রেকর্ড পাঠিয়ে দিতেই অভ্যস্ত ছিল। এখন হাসপাতালগুলি নিজেরা বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় বিভ্রান্ত পুর প্রশাসন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। পুর কমিশনারকে বলা হয়েছে, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করতে।’’
নতুন বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা ভাইস প্রেসিডেন্ট (এমএসভিপি) সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনেই ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এর জন্য হাসপাতালে আলাদা দফতর খোলা হয়েছে। কলকাতার বাকি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও এই নিয়ম চালু হয়েছে।’’
বিজ্ঞপ্তিতে সমস্যা কোথায়? এ বিষয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপনকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, কলকাতা জেলা প্রশাসন বলে কিছু নেই। এখানে সেই দায়িত্ব কলকাতা পুর প্রশাসনের। অন্য জেলার মতো পরিকাঠামো নেই কলকাতায়। আবার কলকাতা পুর প্রশাসন কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার অধীনেও নয়। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের অন্য সব জেলার ক্ষেত্রে ওই সব সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিকর্তার হাতে। কিন্তু কলকাতার ক্ষেত্রে তা দেখার দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার চিফ মিউনিসিপ্যাল হেল্থ অফিসারের (সিএমএইচও)। এত কাল সেই কাজ করেছে পুর প্রশাসন। এখন ওই নিয়ম বদলানো হলে কলকাতা শহরের বার্থ রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জটিলতা বাড়বে। তা ছাড়া, শিশুর জন্মের পরেই অনেকে নাম দিতে পারেন না। পরে নাম দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে থাকেন। আর নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জন্মের পরেই বার্থ সার্টিফিকেট নিতে হবে।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিজেরা সার্টিফিকেট দিলে বাকি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে জন্মানো শিশুদের সার্টিফিকেট কে দেবে?
তপনবাবুর মতে, দু’রকম নিয়ম চালু থাকলে তা নিয়ে মানুষের বিভ্রান্তি বাড়বে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার জানান, শিশু জন্মানোর আগেই অভিভাবকদের বলা হচ্ছে নাম ঠিক করে রাখতে। সেই মতো অনেকেই তৈরি থাকছেন।
জন্মের শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে এই জটিলতা কাটাতে চান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের যাতে হয়রানি না হয়, সেটা দেখা হবে।’’ তিনি নিজেও এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।