সিঁড়ি জুড়ে কালো ধোঁয়া ফিরিয়ে আনল স্টিফেন কোর্টের আতঙ্ক

সকাল সাড়ে সাতটায় ১৯ তলায় কোল ইন্ডিয়ার অফিসে সাফাইয়ের কাজে লেগে গিয়েছিলেন রাজেশ দাস, পরেশ গড়াই, সৌরভ দাসেরা। পৌনে ন’টা নাগাদ লোকজনের চেঁচামেচিতে জানতে পারেন, ১৬ তলায় একটি অফিসে আগুন লেগেছে। তড়িঘড়ি নীচে নামতে গিয়ে দেখেন, সিঁড়ি জুড়ে কালো ধোঁয়া। ফের ১৯ তলাতেই উঠে যান তাঁরা। জানলা দিয়ে লাল গামছা নেড়ে পুলিশ-দমকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

সকাল সাড়ে সাতটায় ১৯ তলায় কোল ইন্ডিয়ার অফিসে সাফাইয়ের কাজে লেগে গিয়েছিলেন রাজেশ দাস, পরেশ গড়াই, সৌরভ দাসেরা। পৌনে ন’টা নাগাদ লোকজনের চেঁচামেচিতে জানতে পারেন, ১৬ তলায় একটি অফিসে আগুন লেগেছে। তড়িঘড়ি নীচে নামতে গিয়ে দেখেন, সিঁড়ি জুড়ে কালো ধোঁয়া। ফের ১৯ তলাতেই উঠে যান তাঁরা। জানলা দিয়ে লাল গামছা নেড়ে পুলিশ-দমকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন।

Advertisement

২২ তলায় আটকে বাঁচার পথ খুঁজছিলেন গণেশ টকিজের বাসিন্দা শানওয়ার অগ্রবাল। অফিস থেকেই উদ্ধারকারীদের দিকে লাল শালু নাড়াতে থাকেন তিনি। কিন্তু গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখে সেখানে বেশিক্ষণ থাকার ভরসা পাননি। আট সহকর্মীকে নিয়ে উঠে যান ছাদে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁদের।

চার বছর আগে স্টিফেন কোর্ট দেখেছে শহর। দেখেছে, অফিসে এসে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনাও। মঙ্গলবার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্কটা ছিল একই রকম। উদ্ধার হওয়ার পরে বেলা এগারোটা নাগাদ জওহরলাল নেহরু রোডে দাঁড়িয়েছিলেন রাজেশ। জানালেন, অসুস্থ হয়ে পড়া তাঁর দুই সহকর্মী পরেশ ও সৌরভকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। রাজেশের কথায়, “ঘণ্টাখানেক আটকে ছিলাম। পরে পুলিশ গিয়ে মুখে গামছা বেঁধে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে আনে আমাদের।” সেই এক ঘণ্টার আতঙ্ক তখনও চোখেমুখে তাঁর।

Advertisement

দুপুর আড়াইটে নাগাদ গণেশ টকিজের বাড়িতে বসে ভয়ার্ত মুখে ধোঁয়াভর্তি বহুতলে আটকে থাকার কথা বলছিলেন শানওয়ার। জানালেন, সাড়ে আটটায় অফিস খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তীব্র পোড়া গন্ধ নাকে এসেছিল। প্রথমে আমল না দিলেও পরে নীচের তলা থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে আগুন লাগার খবর দেন। কিন্তু কালো ধোঁয়ায় ভরে থাকা সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারেননি। অফিসেই আটকে ছিলেন। পরে রঞ্জন ভট্টাচার্য নামে এক সহকর্মীর পরামর্শে ছাদে উঠে যান। সেখানেই পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাঁধা, মুখোশপরা এক ব্যক্তি এসে নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দেন। এবং ফের নীচে নেমে গিয়ে আরও ৮-১০ জন দমকলকর্মীকে নিয়ে এসে শানওয়ারদের উদ্ধার করেন।

বহুতলটির কর্মীরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ অফিসই শুরু হয় সকাল সাড়ে ন’টা-দশটা থেকে। গোটা বাড়িটাই গিজগিজ করে। তখন আগুন লাগলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিত। এ দিন ১৬ তলা থেকে আগুন ছড়ায় ১৭ তলার একটি অফিসেও। ওই তলার আর একটি অফিসের কর্মী বেহালার গোপাল সাহা আগুনের খবর পেয়ে হাজির হয়েছিলেন অফিসের সামনে। পুলিশের কাছে ভিতরে যাওয়ার আর্জি জানাচ্ছিলেন। প্রথমে অবশ্য পুলিশ কাউকেই ভিতরে যেতে দেয়নি। বাইরে দাঁড়িয়েই গোপালবাবু জানান, সকাল দশটা থেকেই অফিস শুরু হয়ে যায় তাঁদের। তখন আগুন লাগলে কী হত?

১৭ তলার একটি মোবাইল সংস্থার কর্মী সন্তোষ গুপ্তের অফিসেই আগুন লেগেছিল এ দিন। দুপুর ১টা নাগাদ জওহরলাল নেহরু রোডের সামনে বিধ্বস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বলছিলেন, “অফিস চলার সময়ে আগুন লাগলে কী হত ভাবতে পারছি না। জানি না, অফিসটার কী অবস্থা!”

শুধু ক্ষতিগ্রস্ত অফিসের কর্মীরাই নন, এ দিন সকাল থেকেই হাজির হয়েছিলেন বহুতলটির প্রায় সব অফিসের কর্মীরাই। সকাল পৌনে ন’টায় হোয়াটস্অ্যাপের মেসেজ দেখেই আগুন লাগার খবর জেনেছিলেন মুদিয়ালির বাসিন্দা সিদ্ধার্থ কারনানি ও টালিগঞ্জের বাসিন্দা যোগেশ গুপ্ত। তড়িঘড়ি পৌঁছে যান তাঁরা। যোগেশবাবুর ন’তলা ও সিদ্ধার্থের পনেরো তলার অফিসের কিছু হয়নি। তবে উদ্ধারকাজে লেগে পড়েন দু’জনেই।

ওই বহুতলেরই ১৬ তলায় একটি অফিস রয়েছে অভিনেতা সোহমের। তাঁর অফিসের কিছু হয়নি। এ দিন ঘটনার পরে তিনি বলেন, “এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের অসুবিধে বলে অফিসটা ছেড়ে দেব ভাবছিলাম। আগেও এখানে দু’বার আগুন লেগেছে।” চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এখানে পাঁচটা লিফ্টের মধ্যে একটি ভিআইপি লিফ্ট। কিন্তু মাঝেমধ্যেই দু’একটি লিফ্ট খারাপ থাকে। তখন অগত্যা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়।” অফিসে আগুন লাগার স্মৃতি নিয়ে জওহরলাল নেহরু রোডের উপরে দাঁড়িয়েছিলেন সুজিত পাল, রিনা রায়েরাও। তাঁরা জানান, স্টিফেন কোর্টের পর থেকেই এই বহুতলে অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছিল। অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রও বসেছিল। “তবে দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে”, বলছিলেন সুজিতবাবু।

সেই দুর্ঘটনা বয়ে আনে আতঙ্কও। যার রেশ ধরেই ওই বাড়ির ২০ তলার একটি অফিসের কর্মী শুভাশিস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “আতঙ্ক তো থাকবেই। কিন্তু অফিস তো আর বললেই সরিয়ে নেওয়া যায় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন