হোটেলের ঘর থেকে মিলল মহিলা ও শিশুকন্যার দেহ

আগের দিন সকালে বছর পঁচিশের এক তরুণী ও বছর সাতেকের একটি শিশুর সঙ্গে এসে হোটেলে ঘর চেয়েছিলেন এক যুবক। বাকি দু’জনের পরিচয় দিয়েছিলেন নিজের স্ত্রী ও মেয়ে হিসেবে। মঙ্গলবার ১২টায় ‘চেক আউট’-এর সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিকেল তিনটে পর্যন্ত ওই তিন জনের সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরে দেখতে যান হোটেলের এক সাফাইকর্মী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০২:৫২
Share:

হোটেলের ঘরে এ ভাবেই পড়ে ছিল দু’টি দেহ।

আগের দিন সকালে বছর পঁচিশের এক তরুণী ও বছর সাতেকের একটি শিশুর সঙ্গে এসে হোটেলে ঘর চেয়েছিলেন এক যুবক। বাকি দু’জনের পরিচয় দিয়েছিলেন নিজের স্ত্রী ও মেয়ে হিসেবে। মঙ্গলবার ১২টায় ‘চেক আউট’-এর সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিকেল তিনটে পর্যন্ত ওই তিন জনের সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরে দেখতে যান হোটেলের এক সাফাইকর্মী। ভেজানো দরজায় একটু চাপ দিতেই দরজা খুলে যায়। ঘরে ঢুকে ওই সাফাইকর্মী দেখেন, বিছানায় পড়ে রয়েছে সালোয়ার-কামিজ পরা তরুণীর দেহ। হাত-পা বিদ্যুতের তার দিয়ে বাঁধা, দেহের বিভিন্ন জায়গায় কালো কালো দাগ।

Advertisement

ওই সাফাইকর্মী সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের অন্যদের ডেকে আনেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিশ। হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানান, ওই ‘দম্পতি’র সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। ঘরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আলমারি খোলে পুলিশ। আর তখনই দেখে, আলমারির তিন নম্বর তাকে শিশুকন্যার দেহ হাত-পা মুড়ে ঠেলে ঢোকানো। জিনস এবং চেকশার্ট পরা ওই মেয়েটির হাত-পাও ছিল বিদ্যুতের তার দিয়ে বাঁধা, গায়ে কালো কালো দাগ। তবে তাঁদের সঙ্গের ব্যক্তিটি বেপাত্তা। দু’টি দেহ ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, ঘুমের ওযুধ খাইয়ে অচৈতন্য করে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মারা হয়েছে তরুণী ও শিশুটিকে। তার দিয়ে ‘শক্’ দেওয়ার কারণেই দেহ দু’টিতে কালো কালো দাগ রয়েছে।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ এক যুবক নিজেকে শম্ভুকুমার গুপ্ত নামে পরিচয় দিয়ে রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের ওই হোটেলের একটি ঘর ভাড়া নিতে চান। তিনি জানান, সঙ্গের মহিলা এবং শিশুটি তাঁর স্ত্রী ও কন্যা। হোটেলের কর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা ওই ব্যক্তির ভোটার কার্ডের একটি প্রতিলিপিও জমা রাখেন। তাতে শম্ভুকুমারের ঠিকানা লেখা রয়েছে বিহারের নালন্দা। ওই হোটেলের রেজিস্টার দেখে পুলিশ জানতে পেরেছে, শম্ভুকুমার ওই হোটেলের ১৮০০ টাকার একটি এসি ঘর এক দিনের জন্য ভাড়া নেন। হোটেল কর্তৃপক্ষের দাবি, কলকাতায় বেড়ানোর জন্য তাঁরা এখানে এসেছেন বলে দাবি করেছিলেন শম্ভুকুমার।

Advertisement


শম্ভুকুমারের ভোটার কার্ড।

ওই হোটেলের কর্মীরা পুলিশকে আরও জানিয়েছেন, সোমবার সকালে হোটেলে ঢোকার পরে শম্ভুকুমার কয়েক বার বেরোলেও বিকেলের পর থেকে তাঁকে আর বেরোতে দেখা যায়নি। সোমবার দুপুরের খাবার হোটেল থেকেই অর্ডার করেছিলেন তিনি। তবে সোমবার রাতের বা মঙ্গলবার সকালের ও দুপুরের খাবার— কোনওটাই নেয়নি ওই পরিবার। এমনকী, এক দিনের জন্য ঘর ভাড়া নিলেও মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শম্ভুকুমার হোটেল ছাড়েননি।

এক হোটেলকর্মী জানিয়েছেন, ‘চেক আউট’-এর সময় ১২টা থাকলেও সবাইকেই আরও দু’ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এ দিন বিকেল তিনটে পর্যন্ত ওই ঘর থেকে কারও কোনও সাড়া মেলেনি।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তরুণীর মৃতদেহের পাশে ২৫টি করে ঘুমের ওষুধের দু’টি খালি স্ট্রিপ মিলেছে। ওই ওষুধ মেশানো হয়েছিল ঘরে রাখা বোতলের জলেও। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের অনুমান, ওই তরুণী ও শিশুটিকে খুন করা হয়েছে।

পুলিশের সন্দেহ, সঙ্গের ব্যক্তিই খুন করেছেন তাঁদের। তদন্তকারীদের আরও অনুমান, যে-ই খুন করে থাকুক, সে বিদ্যুতের কাজ খুব ভাল ভাবে জানে। কারণ, দেহ দু’টিতে তামার তার এমন ভাবে জড়ানো ছিল যাতে ফিউজ উড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ না হয়ে যায়।

তবে কোন সময়ে এই খুন করা হয়েছে তা পরিষ্কার নয় কলকাতা পুলিশের অফিসারদের কাছে। মৃতদেহ ময়না-তদন্তের পরেই সব জানা যাবে বলে তদন্তকারীদের দাবি।

ঘটনার পরে নবান্নের শীর্ষ মহল থেকে কলকাতা পুলিশের কাছে নির্দেশ আসে, কলকাতা শহরের বড় হোটেলের পাশাপাশি, মাঝারি এবং ছোট হোটেলগুলিতেও এ বার থেকে ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরা লাগাতে হবে। পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, তাঁরা শহরের সব হোটেলের কাছেই নবান্নের এই নির্দেশিকা বলবৎ করার জন্য পাঠাচ্ছেন।

— নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন