বলিভিয়ান বন্দির হাতে বাংলার কাঁথার কাজ 

বলিভিয়ার বেনবোলের মাদ্রিদ হাউসিংয়ের বাসিন্দা জেনি ২০১০ সালেও এক বার কোকেন পাচার করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে বছর চারেক জেলে কাটান।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২২
Share:

—ফাইল চিত্র

কোকেন বা ড্রাগ পাচার করেই চলত সংসার। তা করতে গিয়েই বছর দু’য়েক আগে কলকাতা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন তিনি। তার পরে ঠাঁই হয় দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে। কারণ, স্প্যানিশ ছাড়া কোনও ভাষাই জানতেন না সাউসেদো চাও জেনি। তবে কয়েক বছরের ব্যবধানে শুধু ভাষাতেই শক্তি অর্জন করেননি জেনি। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত সেলাইয়ের কাজে সহকর্মী ও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে মুগ্ধ করতে শুরু করেছেন তিনি।

Advertisement

বলিভিয়ার বেনবোলের মাদ্রিদ হাউসিংয়ের বাসিন্দা জেনি ২০১০ সালেও এক বার কোকেন পাচার করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে বছর চারেক জেলে কাটান। কোকেন বা ড্রাগের হাতবদল করে সংসার চালাতেন জেনি। ২০১৭ সালের নভেম্বরের শুরুতে প্রায় দু’কেজি কোকেন-সহ কলকাতা বিমানবন্দরে ধরা পড়েন। বলিভিয়ান জেনির ভাষা বুঝতে গুগল টকের মাধ্যমে স্প্যানিশকে ইংরেজিতে পরিবর্তন করে তাঁর সঙ্গে কথা বলতেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। ভাষা সমস্যার জন্য দৈনন্দিন কাজকর্মেও সমস্যায় পড়তেন জেনিও। সংশোধনাগারের ভিতরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকেও নিজেকে দূরে রাখতেন। ফলে জেনির ভাষাগত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, জেনি এখন ভাঙা ইংরেজি আর ভাঙা বাংলা বলতে শুরু করেছেন।

সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ জানান, জেনি এখনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তবে ধীরে ধীরে নিজেকে বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছেন তিনি। আর তা করতে গিয়ে সংশোধনাগারের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গেও জড়িয়ে ফেলেছেন নিজেকে। সূত্রের খবর, বিভিন্ন দেশের বন্দিদের জড়িয়ে থাকার কারণে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে খানিকটা ‘আন্তজার্তিক’ পরিবেশ রয়েছে। সেখানে ছাত্রী হিসাবে রয়েছে পাকিস্তানের আজরা, ইশরাতের সঙ্গে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাভিত্রি। জেনির সঙ্গে দু’জন বাংলাদেশি মহিলা বন্দিও রয়েছেন। সেখানে কয়েক দিন আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে কাঁথা সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হয়েছে। আর অল্প সময়ের মধ্যেই জেনি সেই সেলাইয়ের কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এক কর্তার কথায়, ‘‘যিনি স্প্যানিশের বাইরে কিছু বুঝতে বা বলতে পারতেন না, তিনিই এখন বাংলার কাঁথা সেলাই কাজ তরতরিয়ে করছেন।’’ জেনির হাতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজের আগে অন্য সেলাইয়ের কাজও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন