কৌটো ঘিরে বোমাতঙ্ক হাওড়া স্টেশনে, গেল সিআইডি-র রোবট

দুপুর আড়াইটে। আচমকা যেন থমকে গেল হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের সামনের ব্যস্ত রাস্তা। নিরাপত্তার কারণে ফিতে দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে স্টেশনে ঢোকা ও বেরোনোর দু’টি রাস্তাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৪ ০০:০১
Share:

বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার সেই রোবট। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দুপুর আড়াইটে। আচমকা যেন থমকে গেল হাওড়া স্টেশনের নিউ কমপ্লেক্সের সামনের ব্যস্ত রাস্তা। নিরাপত্তার কারণে ফিতে দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে স্টেশনে ঢোকা ও বেরোনোর দু’টি রাস্তাই। রাস্তার দু’প্রান্তে দাঁড়ানো কয়েকশো মানুষের চোখ তখন ফুট তিনেকের এক রোবটের দিকে। সাঁড়াশির মতো হাতে প্লাস্টিকের বালতি ঝুলিয়ে রিমোট নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রটি তখন এগিয়ে চলেছে রাস্তার অন্য প্রান্তে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুর তখন ১২টা। রেলরক্ষী বাহিনীর এক জওয়ানের নজরে পড়ে ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের টিকিট কাউন্টারের সামনে প্লাস্টিকের টেপ জড়ানো বেশ বড়সড় একটা স্টিলের কৌটো। তার কোনও দাবিদার না মেলায় বোমাতঙ্ক ছড়ায়। ছুটে আসেন রেল পুলিশ, হাওড়া সিটি পুলিশ ও রেলরক্ষী বাহিনীর পদস্থ কর্তারা। প্রায় ৫ কেজি ওজনের কৌটোটি তুলে রেলরক্ষী বাহিনী ও হাওড়া রেল পুলিশের বম্ব স্কোয়াড প্রথমে নিয়ে যায় নিউ কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে। প্লাটিকের বালতিতে সেটি ঢুকিয়ে ‘বম্ব ব্ল্যাঙ্কেট’ বা বোমা নিরোধক চাদর পরিয়ে রেখে দেওয়া হয় নিরাপদ জায়গায়। তার পরেই খবর দেওয়া হয় সিআইডির বম্ব স্কোয়াডকে।

দুপুর ১টা নাগাদ পৌঁছন সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের অফিসারেরা। বোমা নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু হয় আধ ঘণ্টা পরে। এই প্রথম এ কাজে নামানো হয় রিমোট-চালিত রোবটটিকে। সিআইডি সূত্রে জানা যায়, যন্ত্রটির নাম ‘মিনি রোবট অপারেশন ভেহিক্ল’। যার কাজ যে কোনও বিস্ফোরককে চিহ্নিত করে নিষ্ক্রিয় করা। রাজ্য সিআইডির বোমা নিষ্ক্রিয় করার সরঞ্জামে নতুন সংযোজন এটি। প্রায় ২ কোটি টাকা দামের যন্ত্রটির কার্যকারিতা আগেই প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা হয়েছিল। হাতেকলমে কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন ছিল। এ দিন সেই সুযোগ মিলল।

Advertisement

এ দিন স্টিলের কৌটোটিকে প্রথমে নিউ কমপ্লেক্সের গেট থেকে রোবটের সাহায্যে তুলে নিয়ে রেখে আসা হয় গঙ্গার দিকে টিন-ঘেরা জায়গার সামনে। নতুন যন্ত্রটি দেখতে ততক্ষণে স্টেশন চত্বরে ভিড়। নামাতে হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। নিরাপত্তার কারণে ট্রেন ধরতে যাওয়া যাত্রী ছাড়া বাকিদের দূরে আটকে দিয়েছে পুলিশ।

বিকেল পৌনে তিনটে। রিমোট-চালিত রোবট ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরে বোমা নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া শুরু করেন সিআইডি-র অফিসারেরা। মিনিট দশেকের মধ্যে বোমা ফাটার মতো কান-ফাটানো শব্দ। স্টিলের কৌটো থেকে নানা রকম জিনিস ছড়িয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পরে কৌটোটি দেখতে এগিয়ে গেলেন সিআইডি অফিসার-সহ রেলপুলিশ ও রেলরক্ষী বাহিনীর অফিসাররা।

কিন্তু কী ছিল কৌটোয়? সিআইডির অফিসাররা জানান, বিস্ফোরক মেলেনি। কৌটোর ভিতরে মিলেছে মহিলাদের ফেয়ারনেস ক্রিমের একটি টিউব, বিস্কুট, প্রচুর খেজুর এবং প্লাস্টিকের কিছু কাপ।

এতক্ষণ কি তবে পণ্ডশ্রম হল? সিআইডি বম্ব স্কোয়াডের এক অফিসার বলেন, “আমাদের এই পরীক্ষাটা করতেই হত। তা না করে রোবট ব্যবহারের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। আজকে অন্তত সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন