কলকাতার কড়চা

জীবনের শেষ কবিতাটি লিখে নিজেকে নদীতে সঁপে দিয়েছিলেন কবি কু ইউয়ান (সঙ্গের ছবি)। চিনের লোককথায় আছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকলে ড্রাগনমুখী নৌকো নিয়ে ভেসে পড়েন নদীতে। আর জলে ফেলতে থাকেন চং নামক ভাতের মণ্ড যার ভেতরে থাকে মাংস, মুসুরির ডাল আর ডিমের কুসুমের পুর। মাছেরা যাতে এই খাবার খায়, প্রিয় কবিকে খেয়ে না ফেলে, সেই জন্য। মানুষের আশা তিনি আবার ফিরে আসবেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০০:০১
Share:

শহরে নতুন চিনা উৎসব

Advertisement

জীবনের শেষ কবিতাটি লিখে নিজেকে নদীতে সঁপে দিয়েছিলেন কবি কু ইউয়ান (সঙ্গের ছবি)। চিনের লোককথায় আছে, এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকলে ড্রাগনমুখী নৌকো নিয়ে ভেসে পড়েন নদীতে। আর জলে ফেলতে থাকেন চং নামক ভাতের মণ্ড যার ভেতরে থাকে মাংস, মুসুরির ডাল আর ডিমের কুসুমের পুর। মাছেরা যাতে এই খাবার খায়, প্রিয় কবিকে খেয়ে না ফেলে, সেই জন্য। মানুষের আশা তিনি আবার ফিরে আসবেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৪৩ অব্দে চিনের হুবেইতে জন্ম এই কবির, এখনও তিনি জনপ্রিয়। তাঁর স্মরণেই আয়োজিত হয় ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল, ফি বছর, খাওয়া হয় চং। এ বারেই প্রথম এই উৎসবের আয়োজন কলকাতা শহরে, যেখানে চিনা সংস্কৃতির ঐতিহ্য বড় কম নয়। গতকাল বিকেল-সন্ধেয় পোদ্দার কোর্টের কাছে টেরিটিবাজার অঞ্চলে বিপুল উৎসাহে পালিত হল এই উৎসব, ইন্ডিয়ান চাইনিজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে টি২–র যৌথ উদ্যোগে। ছিল লায়ন ডান্স (বাঁ দিকে শুভাশিস ভট্টাচার্যের ছবি), ঘরে তৈরি চিনা খাবার এবং বাঁশ পাতায় জড়ানো চং, স্ট্রিট আর্ট, গান, ক্যালিগ্রাফি শিক্ষা, হস্তশিল্প এবং আরও অনেক কিছু। অল্প জায়গায় ভিড় ছিল খুব, জানা গেল, আগামী বছর বাবুঘাটে সত্যি সত্যি ড্রাগন বোটেই উৎসবের আয়োজন হবে। কলকাতার আনন্দের সঙ্গে মিলে গেল চিনের একটুকরো লোককথা।

Advertisement

পরিচালক

‘লাথি খেয়ে আর কতদিন মরবি তোরা/ একবার রুখে দাঁড়া, একবার রুখে দাঁড়া...’ এই গানটা দিয়ে শেষ হয়েছিল ‘গণদেবতা’। তারাশঙ্করের উপন্যাস থেকে ১৯৭৯-তে তৈরি এই ধ্রুপদী ছবিটি দেখতে-দেখতে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। তরুণ মজুমদারের স্বনামে ছবি-পরিচালনার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ-ছবি দেখানো হবে, ২৪ জুন সন্ধে ৬টায় আইসিসিআর-এর সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে। সংবর্ধিত করা হবে তরুণবাবুকে, সঙ্গে থাকবেন মাধবী মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ওদিন দুপুরে ওখানেই দেখানো হবে ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’। পলাতক (যাত্রিক-এর ব্যানারে), বালিকা বধূ, নিমন্ত্রণ, ফুলেশ্বরী, সংসার সীমান্তে সহ আরও অনেক মনকাড়া ছবির পরিচালক তরুণবাবু যে আমাদেরই সহনাগরিক, এবং এখনও ছবি করে চলেছেন, সে কথা মনে করাতেই এ আয়োজন। উদ্যোক্তা সিনে সেন্ট্রাল, সঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। অন্য দিকে পঞ্চম ইতালীয় চলচ্চিত্রোৎসব, নন্দনে ২২-২৪ জুন, উদ্যোগে ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস।

প্রয়াণ

জনজাতীয় মানুষের সংগ্রামে এতটাই ওতপ্রোত ছিলেন যে তাঁর পরিচিতি হয় ‘মারাং মাস্টার’। বামপন্থী শিক্ষক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। ভূমিহীন কৃষক, নিম্নবর্গীয় মানুষের স্বার্থরক্ষায় সারা জীবন কাজ করেছেন অরুণ চৌধুরী। ১৯২৮ সালের ৩১ মার্চ কলকাতায় জন্ম, আদতে ফরিদপুর কোটালিপাড়ার সন্তান। ১৯৫৩-য় নগরী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে বীরভূমে থিতু হন। সিউড়ি শহরে সিধু-কানু সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র তাঁরই প্রতিষ্ঠিত। আঞ্চলিক ইতিহাসের নানা উপাদান সংগ্রহ করেছেন নিবিড় অধ্যবসায় ও বিপুল পরিশ্রমে। বীরভূম জেলার সংস্কৃতি ছিল তাঁর অন্বেষণের কেন্দ্রে। লিখেছেন বেশ ক’টি বই। স্ত্রী, পুত্র বিশিষ্ট চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী, দুই কন্যাকে রেখে চলে গেলেন ১৮ জুন। নগরী গ্রামেই স্মরণ অনুষ্ঠান ২৮ জুন।

গানের ভেলায়

গান সাজাবার নেশাতেই কেটে গেল দশটি বছর! সুদীপ্ত চন্দ নিজে সঙ্গীতের ছাত্র, যুক্ত রয়েছেন সঙ্গীত সাংবাদিকতায়। ভাব, কথা আর সুর অনুযায়ী গানগুলি সঠিক ভাবে পরপর সাজিয়ে দেওয়া যথেষ্ট কঠিন এবং গবেষণাধর্মী কাজ সন্দেহ নেই! সারেগামা, টিপস, ইউনিভার্সাল বা টি-সিরিজ— এমন অনেকের জন্যই ভালবেসে কাজ করেছেন তিনি। এ বারে আবার রাহুলদেবের সৃষ্টি থেকে বেছে নেওয়া গান। ২৭ জুন রাহুল দেববর্মনের ৭৬তম জন্মদিবস উপলক্ষে ইনরেকো থেকে এই অডিও সিডিটি প্রকাশিত হবে, সাদার্ন অ্যাভিনিউতে শিল্পীর আবক্ষমূর্তির সামনে।

নেপথ্য দর্শন

প্রশাসনের নানা অনিয়ম-অনাচার-অবিচারের ঘটনাকে পাঠকের দরবারে হাজির করেছিল ‘নেপথ্য দর্শন’ কলাম। ১৯৬২-তে প্রথম প্রকাশের পর দীর্ঘ দিন দুর্লভ বইটি পুনর্মুদ্রণ করল পারুল প্রকাশনী। যুক্ত হয়েছে একটি রচনাও, ‘নেপথ্য দর্শন ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ’। লেখক অমিতাভ চৌধুরী পঞ্চাশ-ষাট দশকে ‘শ্রীনিরপেক্ষ’ ছদ্মনামে ভারতীয় সাংবাদিকতায় নতুন মোড় এনেছিলেন। গ্রন্থপ্রকাশ উপলক্ষে এই অশীতিপর সাংবাদিককে সংবর্ধনা জানানো হবে যোধপুর পার্কের বাড়িতে, ২৪ জুন সন্ধে ছ’টায়। উপস্থিত থাকবেন প্রবীণ জননেতা কাশীকান্ত মৈত্র, ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়।

অভী স্মরণে

অভী দত্ত মজুমদার শুধু সাহা ইনস্টিটিউটের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ছিলেন না, বেশি পরিচিত ছিলেন সমাজসচেতন, গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিক হিসেবে। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন অভী, ২০১৩-র ডিসেম্বরে। তাঁরই স্মৃতিতে বক্তৃতার আয়োজন ফ্রেন্ডস অব ডেমোক্র্যাসি-র। দুই বক্তা পরিবেশবিদ কল্যাণ রুদ্র ও ইতিহাসবিদ অনুরাধা রায়। ঔপনিবেশিক আমল থেকে কী ভাবে ‘উন্নয়ন’ বাংলার পরিবেশের ক্ষতি করেছে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে নেহরুর শিল্পায়ন পেরিয়ে আজ অবধি পরিবেশের প্রশ্নটি কোথায় দাঁড়িয়ে, সে বিষয়ে বলবেন কল্যাণ রুদ্র। আর অনুরাধা রায়ের বক্তব্যের শিরোনাম, ‘হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক: ইতিহাসের বিড়ম্বনা, ইতিহাসের উত্তরণ’। বাংলা আকাদেমি সভাঘর, ২৫ জুন পাঁচটায়।

সমর্পণ

অসময়ে সমর্পণের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি তার আত্মজন। শুধু মেধাবীই নয়, ওর সৃজনশীলতা ছিল অসাধারণ। কুইজ, বক্তৃতা, অভিনয়, লেখার পাশাপাশি সমর্পণ দক্ষ ছিল দাবা, সাঁতার, ক্যারাটে, ঘোড়ায় চড়া কি রাইফেল চালনাতেও। ছিল নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা। মাত্র সতেরো বছর বয়সে হঠাৎ চলে গেল সে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে ওর বাবা-মা হাজার সমর্পণের অভিভাবক হয়ে ওঠার প্রতিজ্ঞা নিয়ে গড়ে তোলেন সমর্পণ বসু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ২০০৮-এ। সারা বছর ধরে শিশুদের লেখাপড়া, স্বাস্থ্যশিবির, পরিবেশ সচেতনতা, নিয়ে কাজের সঙ্গেই খাবার-খেলনা-শীতবস্ত্র বিতরণ চলে। আয়লা দুর্গতদের ত্রাণেও ছুটে গিয়েছিল এই ট্রাস্ট। রয়েছে ওদের নিজস্ব সাইট www.samarpann.org। লক্ষ্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা। কাজ চলছে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের। ২৪ জুন সংস্থা গৃহে একটি অনুষ্ঠানে বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বৃত্তি ও পাঠসামগ্রী দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের।

নেপালের জন্য

আর্থিক সাহায্যের সঙ্গে, নেপালের জন্য এখন প্রয়োজন সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনও— বলছিলেন ‘ফ্রিড’-এর তরফে সোমনাথ পাইন। ও দেশের হস্তশিল্পের বিশিষ্ট কেন্দ্র ভক্তপুর ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফ্রিড চেষ্টা করছে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে। আয়োজিত হয়েছে সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘কলকাতা কনসার্ট ফর নেপাল’, ২৮ জুন সন্ধেয় নজরুল মঞ্চে। থাকবেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা, অজয় চক্রবর্তী, তন্ময় বসু, রাশিদ খান, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, বাবুল সুপ্রিয়, ভায়োলিন ব্রাদার্স প্রমুখ। সহায়তায় নেপাল ট্যুরিজ্‌ম বোর্ড। অন্য দিকে দক্ষিণ কলকাতার ডেকোরেটর্স অ্যাসোসিয়েশন গড়িয়া-সোনারপুর অঞ্চলের ডেকোরেটরদের থেকে সংগৃহীত অর্থ তুলে দিল কলকাতার নেপাল দূতাবাসের হাতে।

অনুপ্রাণিত

বৈষ্ণব কবিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত রবীন্দ্রনাথ লেখেন ‘ভানুসিংহের পদাবলী’। ২৬ জুন রবীন্দ্রসদনে এ থেকেই নিবেদিত হতে চলেছে ‘ভানুসিংহ বন্দিছে’। শিল্পী মনোজ ও মধুবনী চট্টোপাধ্যায়। আয়োজনে ‘ডাকঘর’। অন্য দিকে হিন্দুস্তান রেকর্ড থেকে বেরল রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আনন্দম’। বৈদিক মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ গানগুলি লিখেছিলেন। এতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে রয়েছে বৈদিক মন্ত্র। পাঠে বরুণ চন্দ। গানে দেবাশিস রায়চৌধুরী ও রোহিনী রায়চৌধুরী।

বাঙালি ও বাংলা

ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার জন্য অনেক ছেলেমেয়েই বাংলা সাহিত্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় রোজ যত বই প্রকাশিত হয়, তার ক’টা পাঠকের কাছে পৌঁছয়? তা হলে বাংলায় যাঁরা লিখছেন তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? সম্প্রতি বাংলা আকাদেমি সভাঘরে একটি আড্ডা ‘বাঙালি লেখকের ভবিষ্যৎ’-এ প্রশ্নগুলো উঠে এল। উঠল প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা-অসহযোগিতার কথাও। সভার শেষে সবাই একমত, একনিষ্ঠ ভাবে লিখে যাওয়াটাই আসল কথা, পাঠকই খুঁজে নেবেন তাঁর লেখককে। ছিলেন স্বপ্নময় চক্রবর্তী, অমর মিত্র, অরিন্দম বসু, সামরান হুদা ও সাদিক হোসেন। মাতৃভাষা থেকে ছোটদের দূরে সরে যাওয়া নজরে পড়েছে ‘সুখচর পঞ্চম রেপার্টরি থিয়েটার’-এর কাছেও, ওদের নাটকের স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করাতে গিয়ে। সোদপুর স্টেশনের কাছে ওদের আর্ট গ্যালারি ‘জলসাঘর’-এ তৈরি হল বাংলা বইয়ের গ্যালারি ‘বাংলা’। থাকছে বাছাই করা প্রায় হাজার খানেক বই। ছোটরা দেখার সুযোগ পাবে। পছন্দ হলে বই এনেও দেবে সংস্থা। সম্প্রতি এর উদ্বোধন করলেন শঙ্খ ঘোষ (সঙ্গের ছবি)।

রবীন্দ্রগবেষক

১৩ জুন চলে গেলেন রবীন্দ্রগবেষক জ্যোতির্ময় ঘোষ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রঅধ্যাপক জ্যোতির্ময় শিক্ষকতা করেছেন রবীন্দ্রভারতী, যাদবপুর, বর্ধমান ও কল্যাণীতেও। ১৯৩৯ সালের ১২ জুলাই বীরভূমে রামপুরহাটের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। বিশ্বাসে মার্ক্সবাদী হলেও রবীন্দ্রনাথ চর্চাই ছিল তাঁর মনন কেন্দ্র। তিনি এনবিটি-র ট্রাস্টি বোর্ড এবং ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্যও ছিলেন। ২৯ জুন বিকেলে মৌলালি যুব কেন্দ্রে তাঁর স্মরণসভা।

নতুন শৈলী

নাট্যশাস্ত্রের সঙ্গে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থিয়োরি ও সাইকোঅ্যানালিসিস থিয়োরিকে মিশিয়েছেন তিনি। ফলিত মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে শাস্ত্রীয় নৃত্যের এই মিশেলে যে নৃত্যশৈলী তৈরি হয়েছে তা ব্যবহৃত হচ্ছে মনোচিকিৎসায়। এই শৈলীতেই গত কয়েক দশক ধরে একের পর এক প্রযোজনা উপস্থাপন করছেন সুরঙ্গমা দাশগুপ্ত। থাকতেন জামসেদপুরে। সেখানকার রবীন্দ্রভবনে তিন বছর বয়সে নাচে হাতেখড়ি। প্রথম দিকে ভরতনাট্যম, মণিপুরি, কথাকলি রপ্ত করতে শুরু করেন। পরে নিজের বিষয় করে নেন কত্থককে। গুরু ছিলেন জয়পুর ঘরানার পণ্ডিত রামগোপাল মিশ্র। পরে শেখেন নৃত্যবারিধি বেলা অর্ণবের কাছে। সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনো করতে চলে আসেন কলকাতায়। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে পড়ার ফাঁকে চলতে থাকে নাচও। নাচের জন্য গিয়েছেন জার্মানি, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আমেরিকায়। জার্মানির গিসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফলিত নাট্য বিভাগ’ সুরঙ্গমাকে অতিথি অধ্যাপকের দায়িত্ব দেয়। গত এক দশক নিয়মিত তিনি জার্মানির বিভিন্ন শহরে ধ্রুপদী নৃত্যের তালিম দিচ্ছেন। প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতি মহাবিদ্যালয়ের ‘সঙ্গীত প্রধান’ উপাধি পেয়েছেন। পাশাপাশি গত কয়েক দশক ধরে হাইনরিখ হাইনের কবিতার ওপর ভিত্তি করে করেছেন ব্যালে, ধ্রুপদী নৃত্যশৈলীর মাধ্যমে ‘ম্যাকবেথ’ ও ‘স্ত্রীর পত্র’র নৃত্যরূপের মতো নানা ব্যতিক্রমী প্রযোজনা করেছেন। বহুমুখী অবদানের জন্য ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি থেকে পেয়েছেন ‘ভারতজ্যোতি’ সম্মান।

শিক্ষক

সাহিত্যিক বা শিল্পী, স্রষ্টা হলেও স্বয়ম্ভূ নন। শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ কথাই শিখিয়েছিলেন দুই শিক্ষক তারকনাথ সেন ও অমল ভট্টাচার্য। স্রষ্টা তাঁর চারপাশ থেকে নিজের সৃষ্টির ভাষা খুঁজে নেন। আজও নিজের চর্চায় এ ভাবেই উদ্ভাবনী চিন্তা প্রয়োগ করেন শমীক। পিছনে নিরন্তর কাজ করে চলে এক শিক্ষকের মনন, ‘শিক্ষকের পরিচয়েই বেঁচে থাকতে চাই।’ তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে এক সময়ে মন সরে যায় তাঁর, শিক্ষকতা ছেড়ে প্রবেশ করেন প্রকাশনা-সম্পাদনার জগতে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ও সিগাল বুক্‌স-এর সঙ্গে। নিরুপম চট্টোপাধ্যায় আর প্রভাত ঘোষের তত্ত্বাবধানে রপ্ত করলেন গ্রন্থনির্মাণ। ‘শিক্ষকতা আর গ্রন্থনির্মাণের মধ্যে এক আশ্চর্য যোগসূত্র। একটা বইয়ের যে শুদ্ধতা মর্যাদা গভীরতা, সেটাই হয়ে ওঠে শিক্ষার আকর-উৎস। বই তৈরি আর পড়ানোটা পরিপূরক আমার কাছে।’ প্রেসিডেন্সির ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র শমীক শিক্ষকতা-গবেষণায় যুক্ত থেকেছেন এ দেশের সঙ্গে আমেরিকা-রাশিয়া-ইউরোপ-এশিয়ার নানা বিদ্বৎ-প্রতিষ্ঠানে। সাহিত্য, সিনেমা, থিয়েটারের সংস্কৃতি পড়ানোর সঙ্গে নানা বিশিষ্ট বই তৈরি করে চলেছেন আজও। এখন যুক্ত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে, অন্য দিকে থীমা প্রকাশনার সঙ্গে। ১৭ জুন ৭৫ পূর্ণ করলেন, জন্ম ১৯৪০-এ। ‘যে কোনও ভাল বইয়ের কারিগরির কাজ করতে গিয়ে নানা উপকরণের ভিতর দিয়ে যেতে-যেতে, একজন মানুষকে বইতে পৌঁছনোর পথই তৈরি করে দিই’—এটাই তাঁর বেঁচে থাকার দর্শন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন