পুরসভা-স্বাস্থ্য দফতর তরজা, জিতছে ডেঙ্গি

এ বার ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরই। স্বাস্থ্য ভবনের অভিযোগ, তথ্য গোপন তথা সমন্বয়ের অভাবের ফলে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা যাচ্ছে না।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই ও তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়!

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অভিযোগ, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দফতর তথ্য চাপছে। অনেক বার চাওয়া হলেও সংক্রামক রোগের ব্যাপকতা নিয়ে কেন্দ্রকে কোনও রিপোর্ট দেয় না রাজ্য। অভিযোগ, রাজ্য সঠিক তথ্য না পাঠানোয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব হচ্ছে। রাজ্যের বরাদ্দ কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভুগছেন সাধারণ মানুষ।

কিন্তু এ বার ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরই। স্বাস্থ্য ভবনের অভিযোগ, তথ্য গোপন তথা সমন্বয়ের অভাবের ফলে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা যাচ্ছে না।

Advertisement

এই অবস্থায় স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যের অন্য সব পুর এলাকায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তারা নিলেও কলকাতার দায়িত্ব কখনওই নেবে না। গত বছর ৯১টি পুর এলাকায় নজরদারি চালিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। এ বার সেটা বেড়ে হয়েছে ১১৭টি। ওই সব পুরসভায় কর্মীরা ডেঙ্গি রুখতে প্রয়োজনীয় কাজ করছেন কি না, সেই নজরদারি রাখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। সময় সময় এ ব্যাপারে পরামর্শও দেবে স্বাস্থ্যভবন। ব্যতিক্রম শুধু কলকাতা পুরসভা।

স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, কলকাতা পুরসভা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মানতে চায় না। ফলে গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গির দাপটও কমানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার। ওই কর্তা বলেন, ‘‘বৈঠকে কোনও পরামর্শ দিলেই পুর কর্তারা জানান, তাঁরা সব জানেন। কলকাতা পুরসভার অনেক বড় টিম রয়েছে। তাই হয়তো তাঁদের কাজে স্বাস্থ্য দফতরের প্রয়োজন নেই!’’

কলকাতা পুরসভার অবশ্য দাবি, একমাত্র তাদেরই ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য যথাযথ পরিকাঠামো রয়েছে। রয়েছে একটি স্বয়ংক্রিয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। এক পুরকর্তার দাবি, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা বিভাগের রূপরেখা অনুযায়ী কাজ করি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বছরভর পরিস্থিতি পর্যালোচনা কিংবা মানুষকে সচেতন করার মতো পরিকাঠামো খোদ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরেরই নেই।’’

কলকাতা পুরসভার আরও দাবি, গত কয়েক বছর তাদের পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ শাখার কর্মীরা আশপাশের পুর এলাকায় গিয়ে যেমন কাজ করেছেন তেমন প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। তাদের ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রশংসা করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এ সব দাবি মানতে নারাজ। তারা জানিয়ে দিয়েছে, যেহেতু কলকাতা পুরসভা তাদের নির্দেশ মানে না এবং তাদের নিয়মিত রোগ ও রোগীর তথ্যও পাঠায় না, তাই ওই পুর এলাকার সংক্রামক রোগে কারও মৃত্যু হলে সেই দায় নেবে না স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, যখনই কোনও ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তখন তার দায়ভার কলকাতা পুরসভা নেয় না, তারা স্বাস্থ্য দফতরের উপরে চাপায়। স্বাস্থ্য দফতরকে বলতে হয়, ডেঙ্গিতেই ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে কি না।

কলকাতা পুরসভার দাবি, প্রতি দিনের ডেঙ্গি আক্রান্তের রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ধোঁয়াশার কোনও জায়গাই নেই। এক পুর কর্তার মন্তব্য, ‘‘নবান্নের নির্দেশ, মৃত্যুর খবর সরকারি ভাবে দেবে দেবে স্বাস্থ্য ভবন। সেই নির্দেশই মানছি।’’

ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মরসুমেও দুই পক্ষের এই লড়াই জারি থাকে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন