নিজস্ব চিত্র।
দুই দাদা জন্ম থেকেই মূক ও বধির। অভাবের সংসারে কোনও রকমে তাঁদের দিন চলে। মেজ দাদা ভিক্ষা করেন। আর বড় দাদা দোকানে দোকানে কাগজ সরবরাহের কাজ করেন। অভিযোগ, সম্পত্তি হাতানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবন্ধী এই দুই দুই দাদাকে ঘরছাড়া করতে উঠে পড়ে লেগেছে তাঁদেরই ছোট ভাই নরেন্দ্রনাথ ঘোষ।
তবু, ‘লড়াইয়ের ময়দান’ থেকে সরতে চাইছেন না মূক ও বধির দুই দাদা। অতি কষ্টে কখনও বাড়ির এক কোণে, কখনও বা বাড়ির ছাদে প্লাস্টিকের ছাউনি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিন কাটছে হাওড়ার শিবপুরের কাসুন্দিয়ার বাসিন্দা স্বপনকুমার এবং তপনকুমার ঘোষের।
স্বপনবাবুর ছেলে সন্দীপ একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি কাকার ‘অত্যাচারের’ বিষয়ে শিবপুর থানায় লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন। কিন্তু সন্দীপের দাবি, থানা প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। পরে অভিযোগ নিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। অভিযোগ জানানো হয়, মানবাধিকার কমিশন এবং নারী-শিশু এবং সমাজকল্যাণ দফতরে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সচিবালয়েও অভিযোগ পৌঁছেছে। যদিও মূক-বধির দুই ভাইয়ের উপর নির্যাতনের বিচার এখনও হয়নি বলে অভিযোগ সন্দীপের। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন দফতরে ফাইল চালাচালির পর হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে বিষয়টি পৌঁছয়। কিন্তু এখনও কোনও তৎপরতা দেখাননি প্রশাসনিক কর্তারা।’’
আরও পড়ুন: আয়ুর্বেদ চিকিৎসক থেকে গোয়ার নয়া মুখ্যমন্ত্রী, কে এই প্রমোদ সবন্ত?
সন্দীপের দাবি, নারী-শিশু এবং সমাজকল্যাণ দফতর থেকে তাঁদের বলা হয়েছিল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি বলেন, ‘‘আমি মা-কে নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি দেখা করেননি। ওঁর দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে হবে।’’ কিন্তু তিনিও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি বলেই অভিযোগ সন্দীপের। তাঁর কথায়, ‘‘অতিরিক্ত জেলাশাসক সব কথা শুনেও বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। উল্টে বলেন, এটা তো পারিবারিক বিষয়।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত বছরের এপ্রিলে ঝামেলার সূত্রপাত। সন্দীপদের দাবি, ওই সময় ঘরের একাংশ মেরামত করতে গেলে বাধা দেন তাঁর ছোটকাকা। তাঁর শ্যালক উত্তম দাসও ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত অত্যাচার চলছে বলেই দাবি সন্দীপের। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন প্রতিবন্ধীকে যদি এ ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়। তার পর পুলিশ এবং প্রশাসনিক স্তর থেকেও যদি এ ভাবে হয়রানি হতে হয়, তা হলে আমরা কার কাছে যাব?”
অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। নিজস্ব চিত্র
এ বিষয়ে নারী-শিশু এবং সমাজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা আনন্দবাজারকে বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না। সত্যিই এ রকম হয়েছে! তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” যাঁর নামে নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে, সেই নরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওরা সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে। নির্যাতনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। মিথ্যে কথা বলছে।”